নয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার ৭৬ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম নয় মাস (জুলাই-মার্চ) সময়ে কৃষি ও পল্লীঋণ খাতে ২১ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। যা ব্যাংকগুলোর কৃষিঋণ বিতরণের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ৭৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ঋণ বিতরণের এই পরিমাণ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।

আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এবার ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ বা দুই হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। গত ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে কৃষি ও পল্লীঋণ খাতে ১৮ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা বিতরণ করে ব্যাংকগুলো। যা ব্যাংকগুলোর বার্ষিক কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রার ৭০ দশমিক ৪১ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের শুরুর দিকে কৃষিঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলো কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও পরবর্তীতে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটছে। যা গত মার্চেও অব্যাহত রয়েছে।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা মহামারীর প্রকোপ কমে আসায় কৃষিঋণ বিতরণে গতি ফিরেছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে অর্থবছরের বাকি সময়ে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ করতে পারবে ব্যাংকগুলো। তাছাড়া করোনার কারণে গত দুই অর্থবছরে কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় এ খাতের ঋণ বিতরণ নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে থাকা অস্বস্তিও দূর হবে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে কৃষি খাতে ব্যাংকগুলোর ২৮ হাজার ৩৯১ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। যদিও করোনা মহামারী দেখা দেওয়ার পর থেকে কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো এ খাতের ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ব্যর্থ হয় ব্যাংকগুলো। বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার ৯৭ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে সক্ষম হয় ব্যাংকগুলো। ওই অর্থবছরে কৃষি ও পল্লী খাতে ব্যাংকগুলোর ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। অর্থবছর শেষে এ খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৫ হাজার ৫১১ কোটি টাকা।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, আলোচ্য সময়ে কৃষিঋণ বিতরণ কিছুটা বাড়লেও আদায়ের পরিমাণ কমেছে। অর্থবছরের নয় মাসে কৃষিঋণ আদায় হয়েছে ১৯ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা। তবে গত অর্থবছরের একই সময়ে কৃষিঋণ আদায় আরও বেশি ছিল। গত অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে কৃষিঋণ আদায় হয়েছিল ১৯ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আলোচ্য সময়ে কৃষিঋণ বিতরণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার৮৯১কোটি টাকা।

এদিকে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর ২০২০ সালের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে কৃষি খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ তহবিল থেকে গত ৩০ জুন পর্যন্ত ৪ হাজার ২৯৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়। ওই অর্থবছরে প্রণোদনা প্যাকেজের প্রায় ৯২ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে সক্ষম হয় ব্যাংকগুলো।

প্রণোদনার কৃষিঋণ বিতরণের ফলে অনেক কৃষকের নিয়মিত কৃষিঋণের দরকার হয়নি। এ কারণেও কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। চলতি অর্থবছরেও কৃষিঋণের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ বহাল রেখেছে সরকার।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে কৃষি খাতে আরও ৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই প্যাকেজের আওতায় ব্যাংকগুলোকে মাত্র ১ শতাংশ সুদে অর্থায়ন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই অর্থ আবার কৃষকদের ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেয় ব্যাংকগুলো। অর্থাৎ ব্যাংকগুলো এখান থেকে ৩ শতাংশ মুনাফা করতে পারে। ঋণ পরিশোধে বাড়তি সময়ও পান কৃষকরা।

এই তহবিল থেকে ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও বর্গাচাষিদের শস্য ও ফসল চাষের জন্য এককভাবে জামানত ছাড়াই ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারবে ব্যাংকগুলো। ঋণের সুদের হার আগের মতো ৪ শতাংশই থাকছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের এই তহবিলের অর্থও বাংলাদেশ ব্যাংক তার নিজস্ব উৎস থেকে সরবরাহ করবে। তহবিলের মেয়াদ আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.