লেনদেন চালু হতেই মুখ থুবড়ে পড়ল শ্রীলংকার পুঁজিবাজার

এক সপ্তাহেরও বেশি সময় পর শ্রীলংকার পুঁজিবাজার চালু হলেও তা বিনিয়োগকারীদের জন্য সুখকর হয়নি। দিনের শুরুতেই বাজারে বড় দর পতন হলে কর্তৃপক্ষ বাকী সময়ের জন্য লেনদেন স্থগিত করে দেয়। আগামীকাল ফের বাজার খোলা হবে। কালকের বাজার পরিস্থিতে যে ভাল হবে, তেমন কোনো আশার আলো দেখছেন না বিনিয়োগকারীরা।

খবর ইকোনোমিক টাইমস ও হিন্দুস্তান টাইমসের।

তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মুখে গত ১৬ এপ্রিল শ্রীলংকার পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ৫ দিন কলম্বো স্টক এক্সচেঞ্জ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। এর পরে নববর্ষজনিত ছুটিতে লেনদেন আরও কয়েকদিন বন্ধ ছিল।

দীর্ঘ বন্ধের পর আজ লেনদেন শুরু হতেই তীব্র দরপতনের কবলে পড়ে বাজার। লেনদেন শুরু আধাঘণ্টার মধ্যে কলম্বো স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক এসঅ্যান্ডপি এসএল২০ আজ ২ হাজার ৬২৩ পয়েন্ট থেকে ২ হাজার ৩৫৫ পয়েন্টে নেমে আসে। সূচক কমে যায় ২৬৮ পয়েন্ট বা প্রায় ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ। অন্যদিকে সার্বিক মূল্যসূচক এএসপিআই ৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ কমে যায়। এমন পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ দিনের বাকী সময়ের জন্য লেনদেন বন্ধ ঘোষণা করে।

শ্রীলংকার পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা এভাবে লেনদেন বন্ধ করে দেওয়ার সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, এটি দেশি-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে বাজারের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে।

কলম্বোভিত্তিক এশিয়া সিকিউরিটিজের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নাভিদ মাজিদ বলেন, এরকম আকস্মিক স্থগিতের সিদ্ধান্তে কলম্বো স্টক এক্সচ্যাঞ্জের প্রতি আস্থা হারাবে বিনিয়োগকারীরা। বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য অস্বস্তিকর বিষয় হিসেবে দেখা দেবে।

এর আগে ২০২০ সালে করোনা মহামারির চূড়ান্ত পর্যায়ে সাত সপ্তাহের জন্য শ্রীলংকার শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ ছিল। তখনো বিষয়টি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

গত ১৬ এপ্রিল ৫ দিনের জন্য স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন বন্ধ রাখার নির্দেশ নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়। শ্রীলংকার ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফরম সিলন চেম্বার অব কমার্স এসইসির কাছে পাঠানো এক চিঠিতে সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানায়। তাতে বলা হয়, লেনদেন বন্ধ রাখার এই সিদ্ধান্ত দীর্ঘ মেয়াদে পুঁজিবাজারকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বাজার বন্ধ থাকলে বিনিয়োগকারীরা জরুরী প্রয়োজনেও বাজারে শেয়ার বিক্রি করে অর্থ তুলে নিতে পারবে না। অন্যদিকে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীরাও শেয়ার কেনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। বলা্সই বাহুল্য, সিলন চেম্বারের এই অনুরোধে সাড়া দেয়নি শ্রীলংকান এসইসি।

গত কয়েক মাস ধরেই তীব্র অর্থনৈতিক সংকট চলছে দ্বীপ দেশ শ্রীলংকায়। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানীতে ঠেকেছে। প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা না থাকায় জ্বালানী তেলসহ অতি জরুরি পণ্যও আমদানি করতে পারছে না দেশটি। তেলের অভাবে পরিবহণ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে। দেশটিতে এখন দিনে ১৫/১৫ ঘণ্টা লোডশেডিং চলছে। এমন অবস্থায় দেশটির নাগরিকরা রাস্তায় নেমে এসেছে। চলছে সরকার বিরোধী আন্দোলন। পরিস্থিতি দিন দিন আরও নাজুক হচ্ছে।

অর্থনৈতিক সংকটের কারণে শ্রীলংকার পুঁজিবাজারে অনেক দিন ধরে অস্থিরতা চলছে। তীব্র দরপতন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। গত তিন মাসে দেশটির পুঁজিবাজারের প্রধাণ সূচক সিএসই অল শেয়ার ইনডেক্স ৪০ শতাংশের বেশি কমেছে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.