পেনকে হারিয়ে ফের ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ

আরও পাঁচ বছরের জন্য ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট থাকবেন এমানুয়েল ম্যাক্রঁ। প্রধান প্রতিদ্বন্ধী কট্টর ডানপন্থী প্রার্থী মারিন লা পেনকে হারিয়ে তিনি বিজয়ী হয়েছেন। ম্যাক্রঁ পেয়েছেন ৫৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ ভোট এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছেন ৪১ দশমিক ৪৫ শতাংশ ভোট।

জয়ের পর আইফেল টাওয়ারের বেদীতে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নির্বাচন শেষ হয়ে গেছে, তিনি ‘সবার প্রেসিডেন্ট হবেন’।

এদিকে হেরে যাওয়ার পরেও মিজ লা পেন বলেছেন, তিনি যে ভোট পেয়েছেন সেটা একটা জয়ের চিহ্ন।

সেই ২০০২-এর পর থেকে ফ্রান্সে কেউ পরপর দুইবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিততে পারেননি। ২০১৭ সালেও তিনি পেনকে হারিয়েছিলেন এবং সেবার মাক্রোঁ ৬৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। সেই তুলনায় এবার কিছুটা কম ভোট পেয়েছেন মাক্রোঁ।

প্রথম দফার নির্বাচনে তৃতীয় স্থানে ছিলেন কট্টর বামপন্থি প্রার্থী জঁ লুক মেলাশঁ৷ ফলে মেলাশঁর ভোট কোন দিকে যাবে তা নিয়ে কৌতূহল ছিল। ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর বোঝা যাচ্ছে, মাক্রোঁ আগেরবারের তুলনায় কম ভোট পেলেও, তাঁকে পেন ভয়ংকর প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে ফেলতে পারেননি।

ভোটের প্রচারের সময় মাক্রোঁ নিজেকে ইউরোপের সংহতির জন্য বড় শক্তি হিসাবে তুলে ধরেছেন। তিনি কোভিড ১৯ ও ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার প্রসঙ্গ ও দুই ক্ষেত্রে তার ভূমিকার কথা বলেছেন। ভোটের আগে ফ্রান্সের পেনশন ব্যবস্থাকে লঘু করার পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছেন মাক্রোঁ। কারণ, তিনি বামপন্থিদের ভোট পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

মাক্রোঁর প্রথম পাঁচ বছরের শাসনে প্রচুর উত্থান-পতন হয়েছে। ইয়েলো-ভেস্ট মুভমেন্ট হয়েছে। তার ব্যবসায়ী-পন্থি নীতি ও বড়লোকদের কর কম করার সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশজুড়ে প্রতিবাদ হয়েছে। তবে প্রথম পর্বের ভোটে পেনের তুলনায় পাঁচ পার্সেন্টেজ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন মাক্রোঁ। এরপর মাক্রোঁ বেশ কয়েকটি প্রধান সংবাদপত্রের সমর্থন পান। বেশ কিছু রিপোর্টে লেখা হয়, পেন ক্ষমতায় এলে তা জাতীয় সংহতির পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে এবং তখন ফ্রান্সের উপর থেকে বিদেশের ভরসা কমে যাবে।

জয়ের পর মাক্রোঁ বলেছেন, পেনের বিরুদ্ধে নির্বাচনী লড়াই ছিল খুবই তিক্ত। এখন সেই তিক্ততা কাটিয়ে ওঠার কথা বলেছেন তিনি। তিনি তার সমর্থকদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, ন্যায্য ও সমতাপূর্ণ সমাজের জন্য তিনি কাজ করবেন।

ল্য পেন জিতলে ইউরোপর রাজনীতিতে এক বিশাল বদল ঘটতো বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ল্য পেনের দলের বিরুদ্ধে বারবার বর্ণবাদ, ইহুদি-বিদ্বেষ, ইসলাম-বিরোধিতার অভিযোগ উঠেছে। তবে গত কয়েক মাস প্রচারের সময় তিনি দলের কট্টরপন্থি মতামত থেকে কিছুটা সরে এসেছিলেন। বিশেষ করে অভিবাসন নিয়ে সুর কিছুটা হলেও নরম করেছিলেন।

ল্য পেন চিরাচরিত ফরাসি আইডেনটিটি বজায় রাখার কথা বলেছেন এবং জীবনধারণের খরচ কম করার কথা বলেছেন। তিনি ইইউ নিয়ে তার সুর নরম করেছিলেন এবং ইইউ ছেড়ে বেরিয়ে আসার কথা বলেননি। কিন্তু রশিয়া যখন ইউক্রেনে হামলা করে, তখন তিনি ন্যাটোর সমালোচনা করেছিলেন। এর ফলে তিনি কিছু ভোট হারিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে। তবে এই অভিযোগ ল্য পেন অস্বীকার করেছেন।

ফলাফল প্রকাশের পর প্যারিসে ল্য পেন তার সমর্থকদের বলেছেন, তিনি ফ্রান্সের জন্য, ফরাসি নাগরিকদের জন্য কাজ করে যাবেন।

ডিডাব্লিউর প্রতিনিধি বারবারা ওয়েসেল প্যারিসে ল্য পেনের নির্বাচনী সদরদফতর থেকে জানাচ্ছেন, পেনের কোনও স্বাভাবিক উত্তরসূরি নেই। পুরো প্রচারটাই ছিল পেনকে ঘিরে। ফলে ল্য পেনের পর কে দলের হাল ধরবেন, তা ঠিক করতে দলের কিছুটা সময় লাগবে।

জার্মানির চ্যান্সেলর শলৎস-সহ ইউরোপের বেশ কিছু নেতা ভোটের ফল প্রকাশের পরই মাক্রোঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। শলৎস তার বার্তায় বলেছেন, ‘মাক্রোঁর সমর্থকরা শক্তিশালী ইউরোপের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রকাশ করেছেন। মাক্রোঁ আমাদের সহযোগিতা পাবেন।’

ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন ফরাসিতে টুইট করে বলেছেন, ‘একসঙ্গে আমরা ফ্রান্স ও ইউরোপকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন মাক্রোঁকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘ফ্রান্স হলো ব্রিটেনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। দুই দেশ ও বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একযোগে কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছি।’ সূত্র: ডিডাব্লিউ, বিবিসি, এপি, এএফপি, রয়টার্স

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.