ইউক্রেনকে ‘আক্রমণাত্মক অস্ত্র’ সরবরাহ করতে পারে ইইউ

রাশিয়ার হামলার মুখে আত্মরক্ষার অধিকার মেনে নিয়ে ইউরোপের দেশগুলি ইউক্রেনকে সামরিক সরঞ্জাম ও কৌশলগত সহায়তা করছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যায়ে এক তহবিল থেকে সেই লক্ষ্যে আর্থিক সহায়তাও করা হচ্ছে৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত মূলত ‘আত্মরক্ষামূলক’ অস্ত্র ও সরঞ্জামের মধ্যেই সেই সহায়তা সীমাবদ্ধ থেকেছে৷ রাশিয়াকে না চটিয়ে যুদ্ধের সীমারেখা ইউক্রেনের মধ্যেই আবদ্ধ রাখার চেষ্টা করে এসেছে ইইউ তথা ন্যাটো৷ কিন্তু নিরীহ মানুষের উপর রুশ সেনাবাহিনীর নৃশংস হামলার একের পর এক দৃষ্টান্ত সামনে আসার পর গোটা বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে৷ সোমবার ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে ইউক্রেনের জন্য আরো বড় মাত্রার সামরিক সহায়তার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে৷

ইউক্রেনের পূর্বে রুশ সেনাবাহিনীর বাড়তি তৎপরতার পরিপ্রেক্ষিতে নিরীহ মানুষের উপর আরো নির্যাতন ও হত্যালীলার আশঙ্কা বাড়ছে৷ ফলে রাশিয়ার উপর আরো কড়া নিষেধাজ্ঞার বদলে ইউক্রেনকে এমন হামলা প্রতিহত করতে দ্রুত সহায়তার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন ইইউ-র পররাষ্ট্র বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা জোসেপ বরেল৷ তাঁর মতে, মস্কোর উপর যতই নিষেধাজ্ঞা চাপানো হোক না কেন, ডনবাস অঞ্চলে আরো উত্তেজনা অবশ্যম্ভাবী৷ তাই ইউক্রেনের জন্য আরো ৫০ কোটি ইউরো মূল্যের সামরিক সহায়তার তোড়জোড় করছে ইইউ৷ সদস্য দেশগুলির সম্মতি পেলেই সে দেশকে আরও অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠানো হবে বলে ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ উল্লেখ্য, এর আগে ইইউ-র বাইরের কোনো দেশকে এভাবে সামরিক সহায়তা দেওয়া হয়নি৷

ইউক্রেনের জন্য অস্ত্র পাঠানো থেকে শুরু করে রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি বন্ধ করার প্রশ্নে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে৷ জার্মানির মতো কিছু দেশ রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানির উপর নির্ভরশীলতা দ্রুত কাটিয়ে তোলার চেষ্টা করলেও অবিলম্বে পেট্রোলিয়াম ও গ্যাস আমদানি বন্ধ করতে নারাজ৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক এ ক্ষেত্রে আরো সমন্বয়ের পক্ষে সওয়াল করেন৷ তাঁর মতে, জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানির উপর নির্ভরতা পুরোপুরি কাটিয়ে তুলতে ইউরোপকে সংঘবদ্ধ হতে হবে৷

বেয়ারবক অবশ্য ইউক্রেনের জন্য আরও বড় অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের পক্ষে সওয়াল করেন৷ ট্যাংক, বোমারু বিমান, রণতরির মতো আক্রমণাত্মক সরঞ্জামও পাঠানো প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন৷ জার্মানির ‘রাইনমেটাল’ নামের অস্ত্র প্রস্তুতকারক কোম্পানি অবিলম্বে ৫০টি ট্যাংক সরবরাহ করতে পারে বলে জানিয়েছে৷

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসঅবশ্য এ ক্ষেত্রেও জাতীয় স্তরে উদ্যোগের বদলে ইইউ পর্যায়ে সমন্বয়ের পক্ষে৷ তিনি বলেন, জার্মানি ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করে চলেছে, ভবিষ্যতেও করবে৷ সবকিছু বিবেচনা করে সতর্কতার সঙ্গে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে শলৎস মনে করেন৷

রাশিয়া পশ্চিমা জগতকে বারবার সতর্ক করে দিয়ে বলে আসছে, যে ইউক্রেনকে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করলে সেই আচরণকে যুদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করা হতে পারে৷ এমন সরঞ্জামের উপর হামলাও চালিয়েছে সে দেশ৷ তবে সে দেশ এখনো ইউক্রেনের বাইরে অন্য কোনো দেশের উপর এমন হামলা চালায় নি৷ ইউক্রেনকে আক্রমণাত্মক অস্ত্র সরবরাহ করলে মস্কো সেই ‘লাল রেখা’ অতিক্রম করতে পারে বলে কিছু বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা করছেন৷ সূত্র: ডিডাব্লিউ, রয়টার্স

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.