শ্রীলঙ্কায় জাতীয় সরকারে যেতে নারাজ বিরোধীরা

স্বাধীনতার পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। তারা এখন ঋণজালে আবদ্ধ। কোনো জিনিস আমদানি করা হচ্ছে না। পেট্রোল-ডিজেল পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে যানবাহন নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। বিদ্যুৎ সরবারহ প্রায় বন্ধ। শ্রীলঙ্কা জুড়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে সাধারণ মানুষ ও বিরোধী দলগুলো। এই অবস্থায় জাতীয় ঐক্য সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে।

কিন্তু বিরোধী দলগুলি সেই প্রস্তাব মেনে নেয়নি। তারা জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টকে ইস্তফা দিতে হবে। শ্রীলঙ্কায় এখন প্রধানমন্ত্রী ছাড়া সরকারের বাকি ২৬ জন মন্ত্রী ইস্তফা দিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও সংকট কাটছে না। শ্রীলঙ্কা সরকার এখন বাইরের দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে ঋণ চেয়েছে। ভারত ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার কথা জানিয়েছে। ভারত থেকে ডিজেল ভর্তি জাহাজ সেখানে পৌঁছেছে। বাকি আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে শ্রীলঙ্কার কথা চলছে।

এদিকে দেশটির প্রেসিডেন্টের প্রস্তাব ছিল, একটা জাতীয় ঐক্য সরকার গঠন করা হোক। সোমবার প্রেসিডেন্টের অফিস থেকে বলা হয়েছিল, পার্লামেন্টে যে সব দলের সদস্য আছে, তারা একসঙ্গে আসুক। তাদের দলের প্রতিনিধিরা মন্ত্রী হোন। জাতীয় সংকট থেকে দেশকে বের করে আনতে তারা একসঙ্গে কাজ করুন।

সবচেয়ে বড় বিরোধী জোট ইউনাইটেড পিপলস পাওয়ার(এসজেবি) এই প্রস্তাব খারিজ করেছে। তারা বলেছে, ‘দেশের মানুষ চান গোটাবায়া ও পুরো রাজাপাকসে পরিবারকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে। আমরা মানুষের ইচ্ছের বিরুদ্ধে যেতে পারি না। আমরা এই দুর্নীতিগ্রস্তদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে পারব না। ২২৫ সদস্যের পার্লামেন্টে জোটের ৪৫ জন সদস্য আছেন।

বামপন্থি পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট(জেভিপি) জানিয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট পাগল হয়ে গেছেন। নাহলে, তিনি কী করে ভাবলেন, এই ভেঙে পড়া সরকারে বিরোধী সাংসদরা শামিল হবেন। তাকে আগে ইস্তফা দিতে হবে।’

সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু বিরোধী দল তামিল ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স(টিএনএ) বলেছে, ‘এই প্রস্তাব অর্থহীন। মানুষ তার ইস্তফা চাইছে।’

রাজাপাকসের দলের পার্লামেন্ট সদস্য সাগর কারিয়াওয়াসম বলেছেন, ‘পার্লামেন্টে আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করবেন না। এটা ঠিক, বিদেশি মুদ্রার সমস্যা আছে। প্রেসিডেন্ট এর দীর্ঘমেয়াদী সমাধান করতে চাইছেন।’

সাবেক ক্রিকেটার কুমার সঙ্গকারা এখন আইপিএলের টিম রাজস্থান রয়্যালসের মেন্টর। তিনি ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘শ্রীলঙ্কার মানুষ তাদের জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। মানুষ ক্ষুব্ধ। তারা সমাধানের কথাও বলছেন। এখন একমাত্র কাজ হলো মানুষের কথা শোনা। তার মতে, সাধারণ মানুষ শত্রু নয়। তাদের কথা শুনতেই হবে। সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নিতে হবে।’

আরেক সাবেক ক্রিকেটার মাহেলা জয়বর্ধনে লিখেছেন, শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা ও কার্ফিউ জারি হয়েছে দেখে আমি খুবই দুঃখিত। মানুষের প্রতিবাদ করার অধিকার আছে। তিনি বলেছেন, প্রকৃত নেতারা ভুল স্বীকার করে। তাদের মানুষের চাহিদা পূরণ করতেই হবে। সূত্র: ডিডাব্লিউ, এপি, এএফপি,রয়টার্স

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.