শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সংকট আরো তীব্র হয়েছে। বিদ্যুৎ নেই, পেট্রোল-ডিজেল পাওয়া যাচ্ছে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ভয়ংকরভাবে বেড়ে গেছে। অনেক জিনিসই পাওয়া যাচ্ছে না। দেশজুড়ে কারফিউ চলছে। বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ হচ্ছে। সেই বিক্ষোভ সামাল দিচ্ছে সশস্ত্র পুলিশ। এই পরিস্থিতিতে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর অজিত নিভার্দ ক্যাবরাল পদত্যাগ করেছেন।
সোমবার (৪ এপ্রিল) এক টুইট বার্তায় তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। খবর- রয়টার্সের
টুইটে অজিত নিভার্দ লিখেছেন, ‘মন্ত্রিপরিষদের সব মন্ত্রীর পদত্যাগের প্রেক্ষাপটে, আমি আজ প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের কাছে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি।’
এর আগে রোববার রাতে শ্রীলঙ্কার ২৬ জন মন্ত্রী পদত্যাগ করেন। তবে, প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে কিংবা তাঁর ভাই প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে পদত্যাগ করেননি। যদিও প্রথমে রটে গেছিল, প্রধানমন্ত্রীও ইস্তফা দিয়েছেন। তারপরেই প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে জানিয়ে দেয়া হয়, তিনি ইস্তফা দেননি। এরকম কোনো পরিকল্পনাও তার নেই।
রোববার গভীর রাতে দেশটির মন্ত্রীরা বৈঠকে বসেন। প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ্রার বড় ছেলে ও যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নামাল রাজাপাকসে জানান, ‘আমি প্রেসিডেন্টের সচিবালয়কে আমার ইস্তফার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি। আমি অবিলম্বে আমার সব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দিতে চাই। আমার আশা, এর ফলে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সংকট কাটাবার জন্য উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। স্থায়িত্ব আসবে। আমি আমার ভোটদাতা ও দলের প্রতি দায়বদ্ধ থাকব।’ রাতে নামাল আবার টুইট করে জানিয়েছেন, তার ইস্তফাপত্র গৃহীত হয়েছে।
শ্রীলঙ্কায় ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। সেই সিদ্ধান্তে নামাল খুশি ছিলেন না। তিনি টুইট করে বলেছেন, ‘এই নির্দেশে কোনো কাজ হবে না। আমি প্রশাসনকে তাদের সিদ্ধান্ত আবার বিবেচনা করার অনুরোধ করছি।’
এদিকে এরপর ১৫ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পরে শ্রীলঙ্কায় ইন্টারনেট পরিষেবা আবার চালু হয়েছে। তবে ফেসবুকসহ বেশ কিছু সামাজিক মাধ্যম বন্ধ রাখা হয়েছে।
শ্রীলঙ্কায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম এখন আকাশছোঁয়া। চাল বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা কিলোগ্রাম দরে। গুঁড়ো দুধের দাম হয়েছে এক হাজার ৯০০ টাকা। অনেক জিনিসই পাওয়া যাচ্ছে না। পেট্রোল-ডিজেল নেই বলে যানবাহনও রাস্তায় নেই। আমদানি বন্ধ বলে বিদেশ থেকে কোনো জিনিস আসছে না। বিদ্যুতের রেশনিং চলছে। ফলে দিনে সামান্য সময়ের জন্য বিদ্যুৎ থাকছে। ফলে ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যে পড়েছেন শ্রীলঙ্কার মানুষ।
শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে। কার্ফিউ রয়েছে। তা সত্ত্বেও দেশজুড়ে বিক্ষোভ হচ্ছে। বিক্ষোভ দেখানোর জন্য ৬৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রবিক্ষোভ হয়েছে। কার্ফিউ উপেক্ষা করে প্রচুর মানুষ সেখানে বিক্ষোভ দেখাতে এসেছিলেন। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। বিরোধী নেতারা কলম্বোতে বিশাল মিছিল করেন। তবে বিরোধী নেতা সাজিথ প্রেমদাসার বাসভবনের কাছে তাদের আটকে দেয় পুলিশ।
জরুরি অবস্থা চলছে বলে সেনা ও পুলিশের হাতে প্রচুর ক্ষমতা রয়েছে। তারা যে কোনো মানুষকে বিনা বিচারে দীর্ঘদিন আটকে রাখতে পারবে। তবে এরপরও বিক্ষোভ থামানো যাচ্ছে না। সূত্র: ডিডাব্লিউ, এপি, রয়টার্স
In the context of all Cabinet Ministers resigning, I have today submitted my resignation as Governor, @CBSL to HE President Gotabaya Rajapaksa. @GotabayaR #SriLanka #GoSL
— Ajith Nivard Cabraal (@an_cabraal) April 4, 2022
অর্থসূচক/এএইচআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.