রোনালদোর আন্তর্জাতিক ফুটবলে শেষ ম্যাচ হতে পারে আজ

দুই হাজার বাইশ সালের কাতার বিশ্বকাপে খেলতে পর্তুগাল ও নর্থ মেসিডোনিয়া আজ রাতে প্লে অফ ম্যাচে মুখোমুখি হবে। এই ম্যাচে যারা জিতবে তারাই খেলবে বিশ্বকাপের মূলপর্বে। বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে একটায় পর্তুগালে অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচটি।

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ম্যাচের আগে বলেছেন এই ম্যাচটা, ‘জীবন ও মৃত্যুর মতো একটা ব্যাপার।’

পরের বিশ্বকাপের সময় আসতে আসতে রোনালদোর বয়স হবে ৪১, তখনও তিনি খেলবেন কি না সেটা সময় বলে দিবে। কিন্তু রোনালদো আসন্ন বিশ্বকাপে খেলতে মরিয়া। সেটা তার সংবাদ সম্মেলনের কথাতেই স্পষ্ট।

পর্তুগালের ৩৭ বছর বয়সী অধিনায়ক বলেন, আমি ভক্তদের বলতে চাই, আপনারা দ্রাগাও স্টেডিয়ামে গগনবিদারী তাণ্ডব চালাবেন রীতিমতো।

গত সপ্তাহে বাছাই পর্বের সেমিফাইনালে তুরস্ককে ৩-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে পর্তুগাল, নর্থ মেসিডোনিয়া ইতালিকে বিশ্বকাপের দৌড় থেকে বিদায় করে দিয়েছে, ইতালিকে ১-০ গোলে হারিয়ে ফুটবল সমর্থকদের তাক লাগিয়ে দিয়েছে দলটি। নর্থ মেসিডোনিয়া কখনোই বিশ্বকাপে খেলেনি, আর পর্তুগাল ১৯৯৮ সালে শেষবার বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলতে ব্যর্থ হয়েছিল।

রোনালদো জাতীয় দলে ঢোকার পর পর্তুগাল কখনোই বিশ্বকাপ মিস করেনি। রোনালদো নিজের ভেতরের উত্তেজনা লুকোতে পারেননি সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেন, গত রাতে শুতে যাওয়ার আগে ভাবছিলাম স্টেডিয়ামে জাতীয় সংগীত বাজানোর প্রয়োজন নেই, ভক্তরাই অ্যাকাপেয়া (পর্তুগালের জাতীয় সংগীত) কণ্ঠে গেয়ে আমাদের আবেগ, শক্তি ও একতা প্রকাশ করবে। রোনালদো খেলাটিকে বাঁচা মরার লড়াই বলে ঘোষণা করেছেন।

তিনি বলেন, এই খেলাটা জেতা আমাদের দায়িত্ব। এটা আমাদের জীবনের খেলা। আমাদের প্রতিপক্ষ অনেককেই অবাক করে দিয়েছে। কিন্তু আশা করি আমাদের ক্ষেত্রে তেমনটা হবে না।

চারটি বিশ্বকাপ খেলেছেন রোনালদো, সাতটি গোল করেছেন। আন্তর্জাতিক ফুটবলে রোনালদো ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা- ১১৫টি গোল দিয়েছেন তিনি এখন পর্যন্ত। দুই হাজার ষোল সালে পর্তুগালকে নেতৃত্ব দিয়ে ইউরো জিতিয়েছিলেন রোনালদো, এবং বলা হচ্ছে ২০২২ সালই তার শেষ বিশ্বকাপ। তবে তিনি বলেছেন এই সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এখনো আসেনি।

ভবিষ্যতে কী হবে না হবে সেই সিদ্ধান্ত একমাত্র আমিই নেবো। আমি যদি আরও খেলতে চাই খেলে যাবো, আমি যদি খেলতে না চাই তবে খেলবো না। তবে পর্তুগালের কোচ ফারনান্দো সান্তোস ইঙ্গিত দিয়েছেন এই ম্যাচ হেরে গেলে রোনালদো আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানাবেন।

পর্তুগালের অধিনায়ক রোনালদো মেসিডোনিয়াকে হালকাভাবে নিতে নারাজ, তিনি বলেছেন, আমরা যদি মনে করি মেসিডোনিয়া দুর্বল দল আমরা ভুল করবো। সেটাই সবচেয়ে বাজে হবে।

আমরা ইতালির বিরুদ্ধে ম্যাচ পড়লে যেভাবে খেলতাম একই ভাবে মেসিডোনিয়ার বিপক্ষেও খেলবো। ইতোমধ্যে বিশ্বের ফুটবল সমর্থকরা একটি ধাক্কা খেয়েছেন। চারবারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন, বর্তমান ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালি বাদ পড়ে যাওয়ার পর অনেকেই হতবাক হয়েছেন, কষ্ট পেয়েছেন, কেউ কেউ কখনো বিশ্বকাপ না খেলা নর্থ মেসিডোনিয়াকে অভিবাদনও জানিয়েছেন।

আর আজ পর্তুগাল বাদ পড়ে গেলে সেটা নিয়েও তোলপার হবে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো এমন একজন চরিত্র যাকে বিশ্বজুড়ে ফুটবল সমর্থকরা অনুসরণ করে থাকেন। তার ভক্তরা তো বটেই যারা নিখাদ ফুটবলের আনন্দ নিতেই ফুটবল দেখেন তাদেরও অনেকে চাইবেন রোনালদো যাতে আরও একটা বিশ্বকাপ খেলে।

রোনালদো ছাড়াও পর্তুগালের এই দলটিতে বিশ্বের নামিদামি ক্লাবের তারকা ফুটবলাররা আছেন। ব্রুনো ফার্নান্দেজ, পেপে, হোয়াও ফেলিক্স, বার্নার্দো সিলভা, দিয়েগো জোতার মতো ফুটবলাররা পর্তুগালের হয়ে খেলেন।

মেসিডোনিয়া গত বছর মার্চে জার্মানিকে ২-১ গোলে হারিয়েছে, ইউরো খেলেছে গত বছর, যেটা ছিল দেশটির ফুটবল ইতিহাসের প্রথম বড় কোনও টুর্নামেন্টে খেলা। নতুন কোচ ব্লাগোয়া মিলেভস্কির অধীনে আট ম্যাচে মাত্র একটিতে হেরেছে নর্থ মেসিডোনিয়ার ফুটবল দল।

গত সপ্তাহে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে অতিরিক্ত সময়ে ডি বক্সের বাইরে থেকে গোল দিয়ে বিশ্বকাপে যাওয়ার পথ থেকে সরিগয়ে দিয়েছেন আলেকজান্ডার ত্রায়োকোভস্কি।

নর্থ মেসিডোনিয়ার কোচ ব্লাগোয়া মিলেভস্কি, আমরা বিশ্বের সেরা দলগুলোকে হারিয়েছি। আমরা এখানে থামছি না, আমাদের আর বিশ্বকাপের দূরত্ব কেবলই একটি ম্যাচ। কেন আমরা ইউরোপের সেরা ২০টি দলের একটি, এটা কিন্তু আমরা প্রমাণ করেছি।

নর্থ মেসিডোনিয়ার মিডফিল্ডার এলিফ এলমাস বলেছেন, এটা সবচেয়ে কঠিন ম্যাচগুলোর একটি হতে যাচ্ছে। একই সাথে এটা হবে উত্তেজনাময়।

ইতালির ক্লাব নাপোলির হয়ে খেলা এই ফুটবলার বলছেন, বিশ্বকাপ ছোটবেলার স্বপ্ন, এই স্বপ্ন থেকে আমরা ৯০ মিনিটের দূরত্বে আছি। শুধু আমাদের না গোটা দেশের জন্য এটা একটা বড় ব্যাপার। আমরা সুযোগ মিস করবো না, মাঠে আমরা সর্বস্ব দিয়ে সফল হওয়ার চেষ্টা করবো।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.