র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে অত্যন্ত গর্হিত কাজ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলছেন, যারা আমাদের র্যাবের কয়েকজন সদস্যের ওপর বিনা কারণে, বিনা দোষে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, তাদের দেশে কিন্তু কোনো বাহিনী অন্যায় করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে না।
র্যাব ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। র্যাবের সদর দফতরে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি স্পষ্ট বলি, আমেরিকায় কিন্তু… আপনারা দেখেছেন, সেখানে বাচ্চা ছেলে, পকেটে হাত দিয়েছে, তাকে গুলি করে মারলো। রাস্তায় ফেলে পা দিয়ে গলা চেপে ধরে (জর্জ ফ্লয়েড) মেরে ফেলে দিলো। সেখানে কিন্তু এই ধরনের অপরাধ কেউ করলে…, অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে কেউ অপরাধ করলেও শাস্তি দেওয়া হয় না। কিন্তু পৃথিবীতে বাংলাদেশ একমাত্র দেশ, এখানে কেউ অপরাধ করলে, আমরা শাস্তির বিধান করি।’
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যের বিষয়, যারা এই ধরনের অভিযান করে সাফল্য অর্জন করেছে— যেমন হলি আর্টিজানের ঘটনা, মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আমরা সেটা উদ্ধার করি। জলদস্যু, বনদস্যু বা মাদক, বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সাফল্য। আমি জানি না, আমাদের এই সাফল্যগুলোতে এদের কোনও দুঃখ পেয়েছে কিনা তা বলতে পারি না। কিন্তু বাংলাদেশ যে এই ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে— এটাই হলো সত্য। সেক্ষেত্রে এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করা অত্যন্ত গর্হিত কাজ বলে আমি মনে করি।’
দেশের কিছু মানুষ বিদেশে বসে অপপ্রচার চালাচ্ছে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘সব থেকে দুঃখজনক হলো— আমাদের দেশের কিছু মানুষ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার চালায়। আর যারা বিদেশে বসে অপপ্রচার চালাচ্ছে, তারা কিন্তু অপরাধী। তারা কোনও না কোনও দোষে হয়তো চাকরি হারিয়েছে বা দেশ ছেড়েছে।’
আমেরিকা যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর স্বীকৃত খুনিকে স্থান দিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে যুদ্ধাপরাধীদেরও যেমন স্থান হয়েছে, জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনিও কিন্তু আমেরিকায় বসবাস করে। তাকে তারা ওখানকার নাগরিক করে নিয়েছে। আমরা বার বার বার তাদের রিকোয়েস্ট করছি, অনুরোধ করছি। প্রেসিডেন্টের কাছে চিঠি দিচ্ছি, একের পর এক প্রেসিডেন্ট আসছে, আমরা তাদের কাছে ধরনা দিয়ে যাচ্ছি। জাস্টিজ ডিপার্টমেন্টে আমরা আহ্বান করছি, এরা অপরাধী, শিশু ও নারী হত্যাকারী, খুনি। ১৫ আগস্ট হত্যা করেছে। তাদের আমাদের দেশে ফেরত দিতে হবে। তারা অপরাধীদের রক্ষা করে, তাদের দেশে স্থান দেয়। আর বিনা অপরাধে আমাদের দেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এটা যাদের চরিত্র, তাদের বিষয়ে আর কী বলবো!’
র্যাব সদস্যদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ ও জাতির উন্নয়নে আপনাদের অবদান অপরিসীম। কারণ দেশের আইনশৃঙ্খলা যদি সুস্থির না থাকে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মুক্ত না থাকে। তাহলে দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব হয় না। আজকে সকলের প্রচেষ্টায় দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি বলেই বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোনও বিনিয়োগের জন্য পূর্বশর্তই হচ্ছে— সেখানে যেন জঙ্গিবাদ না থাকে, সন্ত্রাস না থাকে এবং কোনোরকম অপরাধ না থাকে; সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই কিন্তু বিনিয়োগ হয়। বিনিয়োগের পূর্ব শর্ত হচ্ছে সুশৃঙ্খল সামাজিক ব্যবস্থা। সেটাই আমাদের দেশে আমরা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছি। এক্ষেত্রে র্যাবের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। আমাদের এই অবস্থাটা অব্যাহত রাখতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। যেন জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসাবে গড়তে পারি। আইন কানুন মেনে, জনগণের সেবক হিসাবে অর্পিত দায়িত্ব র্যাব সদস্যরা যথাযথভাবে পালন করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন আইজিপি বেনজীর আহমেদ প্রমুখ।
অর্থসূচক/এএইচআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.