আরও এক সিনিয়র রুশ জেনারেল নিহত, কিছু এলাকা পুনর্দখলের দাবি ইউক্রেনের

ইউক্রেনের বিভিন্ন প্রান্তে যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। ইউক্রেনীয় সৈন্যরা কিছু শহরকে রুশ দখলমুক্ত করার জন্য লড়াই করছে, অন্যদিকে উত্তর দিকে একটি শহরে রুশ সৈন্য প্রবেশ করেছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসন শহরের কাছে লড়াইয়ে জেনারেল ইয়াকভ রেজানৎসেভ নামে আরেকজন রুশ জেনারেল নিহত হয়েছেন বলে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এ নিয়ে ইউক্রেনের যুদ্ধে মোট সাতজন সিনিয়র রুশ জেনারেল নিহত হলেন। খবর- বিবিসির

উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের সুমি অঞ্চলের গভর্নর দিমিত্রি জিভিটস্কি বলেছেন, সেখানে রুশ বাহিনীর ওপর ইউক্রেনীয় সৈন্যরা আক্রমণ চালিয়েছে। সেখানে তীব্র লড়াই চলছে এবং ইউক্রেনীয়রা শিগগীরই বেশ কিছু শহর রুশ দখলমুক্ত করে নেবে বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যদিকে দক্ষিণের খারকিভ অঞ্চলের গভর্নর বলছেন, ইউক্রেনীয় সৈন্যরা মালা রোহান অঞ্চলের কয়েকটি শহর ও গ্রাম পুনর্দখল করেছে, এবং ইজিয়াম শহরের চারদিকে তাদের রক্ষণাত্মক অবস্থানগুলো ধরে রেখেছে।

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে সোমবার সকাল পর্যন্ত আরো ৩৬ ঘন্টার কারফিউ জারি করা হয়েছে। অনেক সময় রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযান চালানোর সুবিধার জন্য এসব কারফিউ জারি করা হয়।

ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, এক মাস আগে দেশটিতে রুশ অভিযান শুরু হবার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৩৬টি শিশু নিহত হয়েছে। ইউক্রেনের প্রধান কৌঁসুলির অফিস বলছে, এ যুদ্ধের সবশেষ শিকার ছিল একটি নয় বছরের শিশু – যে শুক্রবার দোনেৎস্কে গোলবর্ষণে নিহত হয়।

এ সংখ্যা কোন স্বাধীন সূত্র থেকে যাচাই করা না গেলেও বিবিসির একজন সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে বেশিই হতে পারে। কর্মকর্তারা বলছেন, এ লড়াইয়ে শত শত স্কুল ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে।

অন্যদিকে দেশটির উত্তর দিকের স্লাভুটিচ শহরে রুশ সৈন্য প্রবেশ করেছে। আঞ্চলিক গভর্নর জানাচ্ছেন – রুশ সৈন্যরা এ শহরের হাসপাতালটি দখল করেছে এবং মেয়রকে অপহরণ করেছে। এতে স্থানীয় লোকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং তারা ইউক্রেনের পতাকা নিয়ে শহরের প্রধান স্কোয়ারে সমবেত হয়ে দেশপ্রেমমূলক শ্লোগান দিতে থাকে। রুশ সৈন্যরা এ সময় স্টান গ্রেনেড নিক্ষেপ করে এবং ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। চেরনোবিলের বিকল পারমাণবিক প্ল্যান্টটির শ্রমিকদের জন্য এই শহরে আবাসন গড়ে তোলা হয়েছিল।

এদিকে গত দু’সপ্তাহ ধরে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছিল না। তার এই অন্তর্ধান নিয়ে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা চলছিল। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, শোইগু অসুস্থ বা তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। একজন ইউক্রেনীয় মন্ত্রীর উপদেষ্টা দাবি করেন, এক বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন তাদের যুদ্ধ ব্যর্থ হচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ করার পরই শোইগুর হার্ট অ্যাটাক হয়।

তবে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তার একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে – যাতে শোইগুকে জেনারেলদের একটি সভায় ভাষণ দিতে দেখা যাচ্ছে। এতে তিনি ইউক্রেনের সৈন্যদের অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে কথা বলেন। শোইগুকে একটি লিখিত ভাষণ পড়তে দেখা যায় এবং শুনে মনে হচ্ছিল যে তার কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। এ বৈঠকটিতে চিফ অব জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভকেও দেখা যায়। তাকেও গত দু’সপ্তাহ দেখা যায়নি।

বিবিসির সংবাদদাতা বলছেন, এ ভিডিওটি বৃহস্পতিবারেরও হতে পারে, কারণ এরকম একটি বৈঠকের কথা তখন ঘোষণা করা হয়েছিল কিন্তু ভিডিও প্রকাশ করা হয়নি। তবে এখন রাশিয়ার অগ্রাভিযান থমকে যাওয়ায় এ প্রশ্ন উঠছে যে জেনারেল শোইগু এ দায়িত্বের উপযুক্ত কি না।

ইউক্রেন সংকট নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আজ ওয়ারস’তে ইউক্রেনের দু’জন মন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেছেন। পোল্যান্ডে বাইডেনের সফরের দ্বিতীয় দিনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে যোগ দেন ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেকসেই রেজনিকভ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবা। এটিই ছিল বাইডেনের সাথে ইউক্রেন সরকারের মন্ত্রীদের প্রথম মুখোমুখি বৈঠক।

কুলেবা পরে বলেন, তারা বাইডেনের কাছ থেকে প্রতিরক্ষা সহোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারে অঙ্গীকার পেয়েছেন, তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানাননি। এদিকে বাইডেনের সাথে আজ পোলিশ প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেই দুদার এক বৈঠক হবার কথা রয়েছে। মনে করা হচ্ছে, দুদা এর আগে ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান দেবার যে প্রস্তাব করেছিলেন তা নিয়ে এ বৈঠকে কথাবার্তা হতে পারে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলছেন, তার জরুরিভাবে যুদ্ধবিমান দরকার, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই বিমান হস্তান্তর ঠেকিয়ে দেয় কারণ তাদের আশংকা ছিল যে এর ফলে নেটো জোট এ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। বাইডেন এ ছাড়াও যুদ্ধের কারণে পোল্যান্ডে পালিয়ে আসা ইউক্রেনীয়দের সাথে দেখা করবেন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলছেন, যুদ্ধে রাশিয়া তার ভাষায় সামরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তিনি তাদেরকে গুরুত্ববহ শান্তি আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। রাশিয়ার সাথে আলোচনায় অবশ্যই ইউক্রেনের ভৌগলিক অখণ্ডতার নিশ্চয়তা দিতে হবে। তবে ক্রেমলিন যে এ শর্ত মেনে নেবে তার কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

একদিন আগে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর অপারেশন বিভাগের প্রধান সের্গেই রুদস্কই বলেন, ইউক্রেনের যুদ্ধের ‘প্রথম ধাপটি সাফল্যের সাথে শেষ হয়েছে’ এবং পূর্বাঞ্চলের ডনবাস অঞ্চলের “পূর্ণ স্বাধীনতা” নিশ্চিত করাই হবে এখন থেকে তার সৈন্যদের প্রধান লক্ষ্য।

ব্রিটেনের গোয়েন্দা বিষয়ক পরামর্শক সংস্থা সিবিলাইনের প্রধান নির্বাহী এবং সাবেক ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা জাস্টিন ক্রাম্প বলেছেন, রাশিয়া গত এক মাসে তাদের যুদ্ধে তেমন সাফল্য পায়নি এবং তার প্রধান কারণ তারা একসাথে অনেকগুলো ফ্রন্টে লড়াই করছে। তবে তার মতে লুহানস্ক নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার লক্ষ্য অর্জনে রুশরা অনেকটাই সফল হয়েছে।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.