রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংককে গ্রাহক সেবার মানোন্নয়নের পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। তিনি বলেন, অর্থনীতিতে সোনালী ব্যাংকের অনেক অবদান রয়েছে। রাষ্ট্রমালিকানাধীন অন্য ব্যাংকগুলোরও তা আছে। তবে সেবা দেওয়া নিয়ে সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কিছু সমালোচনাও রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সোনালী ব্যাংকের ৫০ বছর পূর্তি ও সুর্বণজয়ন্তী উৎসবে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন গভর্নর ফজলে কবির।
সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বক্তব্য দেন বাংলাদেশের প্রথম অর্থসচিব মতিউল ইসলাম ও বর্তমান অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার। স্বাগত বক্তব্য দেন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আতাউর রহমান প্রধান।
বিশেষ অতিথির তালিকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক তিন গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, সালেহউদ্দিন আহমেদ ও আতিউর রহমানের নাম থাকলেও আতিউর রহমান ছাড়া অন্য দুজন উপস্থিত ছিলেন না। ছিলেন না আরেক বিশেষ অতিথি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহও।
এসময় জানানো হয়, ১৯৭২ সালের ২৪ মার্চ সোনালী ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়েছিল। সোনালীসহ রাষ্ট্রমালিকানাধীন অন্য ব্যাংকগুলোরও নাম রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের গ্রাহকবান্ধব সেবা দেওয়ার আরও অনেক সুযোগ আছে বলে মন্তব্য করেন ফজলে কবির। ব্যাংকারদের উদ্দেশে গভর্নর বলেন, ‘আপনারা ভালো কাজ করছেন। তবে গ্রাহকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার (ইনঅ্যাপ্রোপ্রিয়েট বিহেভিয়র) করবেন না। দুর্ব্যবহার করার কোনো অধিকার নেই আপনাদের।’
সমালোচনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে গভর্নর বলেন, সোনালী ব্যাংকে ঋণ প্রক্রিয়া করতে সময় লাগে। এগুলো নিখুঁতভাবে করা দরকার। নন-ফান্ডেড ব্যবসাও বাড়াতে হবে। লোকসানি শাখা নামিয়ে আনতে হবে শূন্যের কোটায়। এ ছাড়া ক্ষুদ্র, কুটির, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের শিল্প খাতে ঋণ দিতে আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে।
হল-মার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনা স্মরণ করে ফজলে কবির বলেন, এরপর ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে একটু রক্ষণশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ব্যাংকাররা মনে করতেন, ঋণ না দিলে ঝুঁকি নেই। এ মানসিকতা চলবে না। ঋণ দিতে হবে, ব্যবসা করতে হবে এবং ঋণ আদায়ও করতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েই আমি ব্যাংকের ওপর নজর দিই এবং বিশ্বাস স্থাপন করি। ব্যাংকগুলোকে বলেছি, সরকারের অর্থ সহায়তা যাতে নিতে না হয়। সে বিশ্বাস তারা রেখেছে এবং আমি ঠকিনি। গত তিন বছরে শর্টফল ঘাটতি কাটাতে সরকারের ফান্ড থেকে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়নি। আগামীর উন্নয়নে আপনাদের সহযোগিতা আরও প্রয়োজন হবে।
মুস্তফা কামাল বলেন, অর্থনীতিতে কেউ একমত হতে পারে না। তবুও আমরা সমন্বয় করছি। ২০৩০ এ দেশের মানুষকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত করার লক্ষে ব্যাংকগুলোর সহযোগিতা লাগবে। সকলের সহযোগিতায় এদেশ উন্নত হবে।
সোনালী ব্যাংক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জনগণের আস্থার ঠিকানা সোনালী ব্যাংক। সে আস্থার জায়গাটি ধরে রাখতে হবে।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা তফসিলি ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদহার ১২.৩ শতাংশ থেকে ৭.১ শতাংশের মধ্যে নিয়ে এসেছি। ঋণস্থিতি ১২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। কৃষি ঋণ চার গুণ বেড়েছে, মোবাইল ব্যাংকিং-এ যুক্ত হয়েছে ১১ কোটি ৪৪ লাখ মানুষ।
অর্থসূচক/এমআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.