ঐতিহাসিক এক সিরিজ জয় করেছে টাইগাররা। শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ২-১ ম্যাচ জিতে নতুন রেকর্ড গড়েছে তারা। যে দেশটির মাটিতে স্বাগতিকদের বিরুদ্ধে আগে যেখানে একটি ম্যাচ জেতারও রেকর্ড নেই, সেখানে ২ ম্যাচ জিতে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে টাইগার বাহিনী।
আজ বুধবার (২৩ মার্চ) একাধিক রেকর্ড গড়ে বিশাল জয় উপহার দিয়েছে টাইগাররা। এই সফরের আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় ৫ উইকেট ছিল না বাংলাদেশের কোনো বোলারের, তাদের মাঠে শতরানের উদ্বোধনী জুটি ছিল না একটিও। আজ ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে সেই খরাও কেটে গেছে।
সেঞ্চুরিয়নের মাঠে একদিকে তাসকিন আহমেদের আগুন ঝড়ানো বোলিংয়ে পুড়িয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকানদের। অন্যদিকে তামিম ইকবালের চোখধাঁধানো নানা স্ট্রোকে উড়িয়ে দিয়েছে তাদের। আর একদিনে ব্যাটিং ও বোলিং- দুই বিভাগ ঝলসে উঠায় ৯ উইকেটের বিশাল জয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
আজকের দিনটি অবশ্য শুরু হয়েছিল হার দিয়ে। টস জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তাতে হয়তো মন একটু ভার ছিল তামিমের। কিন্তু দিনশেষে আবারও প্রমাণ হল শেষ ভাল যার, সব ভাল তার।
টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। বোলিংয়ের শুরুতে মুস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলাম আশা জাগানিয়া বল করতে পারেনি। তাতে শুরুতেই চড়াও হয় প্রোটিয়াসরা। মাত্র ৬ ওভারে ৪০ রান তুলে নেয় তারা। কিন্তু ৭ম ওভার থেকেই খেলার মোড় ঘুরে যেতে থাকে। মিরাজের বলে লং অফে ধরা খেয়ে ফিরে যান কুইন্টন ডি কক (১২)। এর মধ্য দিয়ে ৪৬ রানের জুটির পতন হয়। আর আজকের দিনে এটিই ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ জুটি।
পরের ৪০ রান যোগ না হতেই তারা উইকেট হারায় আরও ৪টি। দ্বিতীয় উইকেটে মালান ও কাইল ভেরেইনা জুটি গড়ে তোলার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। এই জুটি থামিয়েই দৃশ্যপটে আবির্ভাব তাসকিনের। বাইরের বল কাট করার চেষ্টায় স্টাম্পে টেনে এনে আউট হয়ে যান ভেরেইনা।
এরপর নিয়মিত উইকেটের পতন চলতে থাকে। বাংলাদেশের বোলারদের এমন তাণ্ডবই চলতে থাকে যে, পূর্ণ ৫০ ওভার খেলতেই পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। মাত্র ৩৭ ওভারে অল-আউট হয়ে যায় তারা। আর এই সময়ে ঝুড়িতে জমা করতে পারে মাত্র ১৫৪ রান।
মাত্র ১৫৫ রানের টার্গেট ফর্মে থাকা টাইগার ব্যাটসম্যানদের জন্য ছিল একেবারেই যেন মামুলি ব্যাপার। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দাপুটে ব্যাটিং করে এর প্রমাণও দেয় তারা। বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুতেই দক্ষিণ আফ্রিকার উপর চড়াও হয় তামিম ইকবাল। হাত খুলে মারতে থাকেন তিনি। তাকে দারুণভাবে সঙ্গ দিয়ে যান লিটন। এই দুজনের ব্যাটে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। তাতে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথমবার ১০ উইকেটে জয়ের সম্ভাবনাও জেগে ওঠে একটা সময়। তবে ১২৭ রানের মাথায় লিটন আউট হয়ে গেলে সেটি আর হয়নি। আউট হওয়ার আগে ৫৭ বলে ৪৮ রান সংগ্রহ করেন লিটন দাস।
লিটন আউট হলে ব্যাটিংয়ে মাঠে নামেন বাংলাদেশের পোস্টার বয় সাকিব আল হাসান। তামিম আর সাকিব দলকে নিয়ে যান ইতিহাসের ঠিকানায়। ৮২ বলে ৮৭ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন তামিম, ১৮ রানে অপরাজিত সাকিব।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৩৭ ওভারে ১৫৪ (মালান ৩৯, ডি কক ১২, ভেরেইনা ৯, বাভুমা ২, ফন ডার ডাসেন ৪, মিলার ১৬, প্রিটোরিয়াস ২০, মহারাজ ২৮, রাবাদা ৪, এনগিডি ০, শামসি ৩*; শরিফুল ৭-০-৩৭-১, মুস্তাফিজ ৭-০-২৩-০, মিরাজ ৫-০-২৭-১, তাসকিন ৯-০-৩৫-৫, সাকিব ৯-০-২৪-২)
বাংলাদেশ: ২৬.৩ ওভারে ১৫৬/১ (তামিম ৮৭*, লিটন ৪৮, সাকিব ১৮*; রাবাদা ৫.৩-০-৩৭-০, এনগিডি ৫-০-২৪-০, মহারাজ ৭-০-৩৬-১, শামসি ৭-০-৪১-০, প্রিটোরিয়াস ২-০-১৮-০)
ম্যান অব দা ম্যাচ: তাসকিন আহমেদ
ম্যান অব দা সিরিজ: তাসকিন আহমেদ



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.