সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবি দিচ্ছে ‘পঁচা পেঁয়াজ’

ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) সাশ্রয়ী মূল্যের পণ্য কিনে খুব বেশি লাভবান হতে পারছেন না ক্রেতারা। কেননা মূলত তেল কেনার জন্য টিসিবির ট্রাকের সামনে দীর্ঘ লাইনে ক্রেতারা অপেক্ষা করলেও কেবলমাত্র তেল কেনার সুযোগ নেই।

কারণ, একজন ক্রেতাকে মাথাপিছু দুই কেজি করে তেল, চিনি বা ডাল কেনার জন্য এর দ্বিগুণ অর্থাৎ চার কেজি করে পেঁয়াজ ও ছোলা কিনতে বাধ্য করছেন ডিলাররা। এর মধ্যে অর্ধেক পেঁয়াজই পঁচা বলে অভিযোগ রয়েছে ক্রেতাদের। আর টিসিবির ডিলাররা এই ‘প্যাকেজ’ ছাড়া পণ্য বিক্রি করছে না।

সোমবার (২১ মার্চ) রাজধানীর মালিবাগে টিসিবির ট্রাকের সামনে ক্রেতাদের এসব অভিযোগ পাওয়া যায়।

সেখানে আমেনা বেগম নামের একজন ক্রেতা অর্থসূচককে বলেন, কম দামে তেল, চিনি, ডাল দিলেও সাথে পঁচা পেঁয়াজও নিতে বাধ্য করছে। পেঁয়াজ নিতে না চাইলে অন্য জিনিসও দিবে না বলে জানিয়েছে বিক্রয়কর্মীরা। তিনি বলেন, আমি পেঁয়াজ নিতে না চাইলে আমাকে বাকি জনিস দেওয়া হবে না বলে জানায় তারা। তাই বাধ্য হয়ে পঁচা পেঁয়াজও নিতে হচ্ছে। চার কেজি পেঁয়াজের মধ্যে এক কেজিই পঁচা বলে অভিযোগ করেন তিনি।

জানা গেছে, সাশ্রয়ী মূল্যে কোটি মানুষের কাছে পণ্য পৌঁছে দিচ্ছে সরকারি সংস্থা টিসিবি। এর আগে ক্রেতার প্রয়োজন অনুযায়ী পণ্য বিক্রি করলেও এবার টিসিবির ট্রাকগুলোতে প্যাকেজের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এই প্যাকেজে রয়েছে- চার কেজি পেঁয়াজ, চার কেজি ছোলা, ২ লিটার সয়াবিন তেল, ২ কেজি চিনি এবং ২ কেজি মসুর ডাল। এই প্যাকেজের সর্বমোট দাম নিচ্ছে ৮৬০ টাকা।

ফজলু মিয়া নামের অন্য একজন ক্রেতা বলেন, সব জিনিস কেনার মতো টাকা আমার কাছে নেই। তাই আমি এখান থেকে কিছুই নিতে পারছি না। তিনি বলেন, ট্রাক দেখে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম তেল কেনার জন্য। লাইনে দাঁড়ানোর সময় প্যাকেজের কথা জানতাম না। তাই দুই ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছি।

এদিকে, টিসিবির এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সোহেল রানা বলেন, বর্তমান বাজার দামের তুলনায় টিসিবির ট্রাক থেকে অনেক কম দামেই পণ্য কিনেছি। তবে প্যাকেজে ছোলা এবং পেঁয়াজও দুই কেজি হলে ভালো হতো। তিনি আরো বলেন, পঁচা পেঁয়াজ দেওয়ার কারণে টিসিবির ভালো উদ্যোগও সমালোচনার মুখে পড়বে।

কেন প্যাকেজে পণ্য বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ডিলারের বিক্রয়কর্মী আকতার বলেন, পেঁয়াজ ও ছোলার বাড়তি বরাদ্দের কারণে বিপাকে পড়েছেন তারা। সেজন্য বাধ্য হয়ে প্যাকেজে পণ্য বিক্রি করছেন। আমাদের বরাদ্দ যেভাবে, সেভাবে বিক্রি করছি। প্রতিটি ট্রাকে ৫০০ কেজি করে তেল, চিনি ও ডাল দেওয়া হয়েছে। সেখানে ১ হাজার কেজি ছোলা ও পেঁয়াজ।’

তিনি আরো বলেন, তেল ও চিনির থেকে ছোলা-পেঁয়াজ দ্বিগুণ পরিমাণে দেওয়া হয়েছে। তাই আমরাও প্যাকেজে দ্বিগুণ করেই দিচ্ছি। প্যাকেজ ছাড়া বিক্রি করলে পেঁয়াজ আর ছোলা কেউ নেবে না। কারণ বর্তমানে বাজারে পেঁয়াজের দাম অনেক কম। ফলে পেঁয়াজ ট্রাকে পড়ে থাকবে, লোকসান গুনতে হবে ডিলারকে।

এ বিষয়ে টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ূন কবির বলেন, টিসিবির কাছে অনেক বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে। আর এটা তো পচনশীল। তাই বেশি পরিমাণে দেওয়া হয়েছে। অর রমজান মাসে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় পণ্য হচ্ছে ছোলা। সেজন্য এটাও বেশি পরিমাণে দেওয়া হয়েছে।

প্যাকেজের বিষয়ে তিনি বলেন, যার যতোটুকু প্রয়োজন তাকে ততোটুকুই দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। এখন পেঁয়াজ এবং ছোলা সবার প্রয়োজন। সেজন্য সর্বোচ্চ চার কেজি বিক্রি করতে বলা হয়েছে ডিলারদের। তবে কেউ না নিলে সেজন্য জোর করা যাবে না।

ট্রাকে টিসিবিতে প্রতি লিটার ১১০ টাকা দরে দুই লিটার সয়াবিন তেল, ৫৫ টাকা দরে দুই কেজি চিনি, ৬৫ টাকা দরে দুই কেজি মসুর ডাল, ৫০ টাকা দরে চার কেজি ছোলা এবং ৩০ টাকা দরে চার কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীতে সোমবার ১৩৭টি ট্রাকসেলের মাধ্যমে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, খুচরা বাজারে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, প্রতি কেজি মসুর ডাল ১১০ থেকে ১৩৫ এবং চিনি প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি করা হয়। সেজন্য এসব পণ্য সাশ্রয়ী মূল্যে কিনতে টিসিবির ট্রাকে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মানুষ। কিন্তু সেই সুযোগে পেঁয়াজ ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত ছোলাও গছিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, রাজধানীর বাইরে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে দুই কিস্তিতে ১ কোটি পরিবারের কাছে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। প্রথম কিস্তি চলবে ২০-৩০ মার্চ এবং দ্বিতীয় কিস্তি চলবে ৩-২০ এপ্রিল।

অর্থসূচক/মৃত্তিকা সাহা/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.