কথাসাহিত্যিক দিলারা হাশেম আর নেই

‘ঘর মন জানালা’ খ্যাত কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক দিলারা হাশেম মারা গেছেন। যুক্তরাষ্ট্র ওয়াশিংটন প্রবাসী এই কথাসাহিত্যিক শনিবার সেখানেই নিজ বাড়িতে ৮৬ বছর বয়সে মারা যান।

নিউইয়র্ক প্রবাসী সাংবাদিক আকবর হায়দর কিরণের ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তার মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন।

ফেসবুকে আকবর হায়দার কিরণ লিখেছেন, ‘আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় দিলারা হাশেম আপা কিছুক্ষণ আগে চলে গেলেন পরলোকে। এক্ষুণি রোকেয়া হায়দার আপা ফোনে জানালেন। তার স্নেহধন্য আমি শৈশব থেকে। কত স্মৃতি, কত কথা।’

১৯৩৬ সালের ২১ আগস্ট যশোরে জন্মেছিলেন দিলারা হাশেম।

দ্য ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের (ইউপিএল) ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৭ সালে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন দিলারা হাশেম। এর আগে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ছোট গল্প লেখার মধ্য দিয়ে সাহিত্য জীবনে পা রাখেন তিনি।

১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয় দিলারা হাশেমের প্রথম উপন্যাস ‘ঘর মন জানালা’। পাঠক ও সমালোচক মহলে দারুণ সাড়া ফেলে এটি। উপন্যাসটি পরে রুশ ও চীনা ভাষায় অনুবাদ করা হয়। ঘর মন জানালাকে ঘিরে ১৯৭৩ সালে নির্মাণ করা হয় চলচ্চিত্র।

ইউপিএলের তথ্য অনুযায়ী, দিলারা হাশেমের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৬। এর মধ্যে আমলকির মৌ, স্তব্ধতার কানে কানে, একদা এবং অনন্ত ও কাকতালীয় উল্লেখযোগ্য।

উপন্যাসের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্যে ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান তিনি। স্বাধীনতার পরের বছর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে প্রবাস জীবন বেছে নেন এই কথাসাহিত্যিক। কিন্তু বাংলা ভাষার প্রতি শেকড়ের টান অক্ষুন্ন রেখে নিরবচ্ছিন্নভাবে তিনি সাহিত্য চর্চ্চা করে গেছেন। উত্তর আমেরিকা কবিতা পরিষদের পক্ষ থেকে ১৯৯৪ সালে দিলারা হাশেমকে দেয়া হয় ‘শঙ্খচিল সাহিত্য পুরস্কার’ এবং ১৯৯৭ সালে শিকাগোর ‘কালচারাল অ্যান্ড লিটারারি ইঙ্ক।’

ইতালি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, সুইডেন, জার্মানি, চেকোস্লোভাকিয়াসহ ইউরোপের বহু দেশ এবং চীন, জাপান ও কমিউনিস্ট শাসনামলের সোভিয়েত ইউনিয়ন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ছিল এই উপন্যাসিকের। এসব অভিজ্ঞতায় লেখা তার চরিত্র ও বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য পাঠককে আকৃষ্ট করেছে। মূলত নগর জীবন ও বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত সমাজের সুখ-দুঃখ, আশা-হতাশার ছবিটিই তুলে ধরতেন তার লেখনীতে।

১৯৭৬ সালে ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগে যোগ দিয়ে সাংবাদিকতা জগতে পা রাখেন দিলারা হাশেম। ২০১১ সালে পর্যন্ত কাজ করেছেন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমটিতে।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.