মহামারিতেও অর্থ-প্রবাহ সচল ছিল : আতিউর রহমান

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বলেছেন, মহামারির মধ্যে এমএফএসের গুরুত্ব মানুষ আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করেছে। সাধারণ ছুটির সময়ে সার্বিকভাবে লেনদেন কমে গেলেও এসএমএসের কল্যাণে সমাজে অর্থ-প্রবাহ সচল ছিল। এমনকি এই সময় গ্রাম থেকে শহরেও টাকা পাঠানো হয়েছে। ফলে মহামারির পরীক্ষায় এমএফএস উত্তীর্ণ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শনিবার (১২ মার্চ) রাজধানীর বাংলামোটরে উন্নয়ন সমন্বয়ের কার্যালয়ে এমএফএসের এক দশক: করোনা-পরবর্তী মাঠ-বাস্তবতা শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে উন্নয়ন সমন্বয় ও নলেজ অ্যালায়েন্স।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, গত ১০ বছরে দেশের এমএফএস সেবার মাশুল তেমন একটা কমেনি। এ নিয়ে অনেকের আপত্তি আছে। এদিকে দেশের সব আর্থিক সেবার মধ্যে এক ধরনের সমন্বয় সাধনের (ইন্টার অপারেটেবিলিটি) কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেটা হলে এমএফএস সেবায় ক্যাশ আউটের প্রয়োজন অনেকটাই কমে যাবে। সে ক্ষেত্রে মাশুলের গুরুত্বও কমবে।

এসময় আতিউর রহমান বলেন, ২০২০-২০২১ সালে এই সেবার নতুন ৩ কোটি গ্রাহক যুক্ত হয়েছেন। এই পরিসংখ্যান বলে দেয়, এমএফএস এই সময় মানুষের কতটা কাজে এসেছে। তিনি বলেন, এমএফএসের মাধ্যমে এখন সহজেই শহর থেকে গ্রামে টাকা যাচ্ছে, এতে সমাজে ভোগ বৈষম্য কমেছে। প্রান্তজনের বড় সহায় হয়ে উঠেছে এমএফএস। অন্য কথায়, এই ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের প্রান্তিক মানুষকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিয়ে আসতে পেরেছে।

দেশে এমএফএস সেবার ১০ বছর পূর্তি এবং করোনা মহামারির মধ্যে এমএফএস ব্যবহারের সার্বিক চিত্র তুলে ধরতে সম্প্রতি এক গুণগত জরিপ পরিচালনা করেছে উন্নয়ন সমন্বয় ও নলেজ অ্যালায়েন্স। জামালপুর জেলার প্রত্যন্ত ইসলামপুর উপজেলার মন্নিয়ার চর এলাকায় এই জরিপ করা হয়। জরিপ পরিচালনা করেন সমাজতাত্তিক ও নলেজ অ্যালায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা খন্দকার সাখাওয়াত আলী।

অনুষ্ঠানে খন্দকার সাখাওয়াত আলী জরিপের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, করোনাকালে চরাঞ্চলে এমএফএস হিসাব খোলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সরকারি সহায়তা ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা এমএফএস হিসাবে দেওয়ার কারণে এটা ঘটছে। যে সব চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছেছে, সেখানে অনেক মানুষ এসএমএসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছেন।
প্রান্তিক অঞ্চলে এমএফএস সেবায় মূল ভূমিকা পালন করেন এজেন্টরা।

তিনি আরও বলেন, মানুষ এই সেবার খুঁটিনাটি বোঝার জন্য পুরোপুরি এজেন্টদের ওপর নির্ভর করেন। করোনাকালে এই এজেন্টরা দোকান বন্ধ থাকার সময়ও অনেক সময় সেবা দিয়েছেন। তবে কাস্টমার কেয়ার সেন্টারগুলো চর থেকে দূরে হওয়ায় তাঁদের অসুবিধায় পড়তে হয়।

অনুষ্ঠানে এমএফএস খাতের ভূমিকায় আলোকপাত করেন ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, দেশের এমএফএস খাত নগদবিহীন লেনদেনের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এখন সব আর্থিক সেবার মধ্যে সমন্বয় আনা দরকার, যাতে মানুষ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সব ধরনের লেনদেন করতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ লক্ষ্যে কাজ করছে। এটা হলে নগদবিহীন সমাজের পথে অনেকটাই অগ্রগতি হবে।

এমএফএস সেবার মাশুল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মাশুল কমানো উচিত, তবে আমি জনতুষ্টিবাদী নই, নিয়মতান্ত্রিকভাবে এটা কমাতে হবে। এখন যে মাশুল আছে তার কাঠামো দেখলে সবাই একমত হবেন, এটা খুব বেশি নয়। আর অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেন বাড়লে এমনিতেই মানুষের ক্যাশ আউট করার প্রয়োজন হবে না, সে জন্য দরকার সমন্বয়’। তবে দেশে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের ব্যবহার কম, ব্যবহার বাড়াতে এসব উপকরণ সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে আনতে হবে। তিনি মনে করেন, এসব হবে, তবে কিছুটা সময় লাগবে।

দেশের এমএফএস খাত এখনো তেমন একটা লাভজনক হতে পারেনি। এখন তারা যা আয় করছে, তার বড় অংশ পুনর্বিনিয়োগে ব্যয় হচ্ছে। এই খাত টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি করতে প্রযুক্তি ও মানব সম্পদ উন্নয়নের বিকল্প নেই। সে জন্য এমএফএস খাতের মুনাফা করতে হবে বলে মত দেন বক্তারা।

অনুষ্ঠানে অংশ নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিকাশের সাবেক কর্মকর্তা দাশগুপ্ত অসীম কুমার। এই খাতে সবার জন্য একই নিয়ম থাকা উচিত বলে মত দেন তিনি। এ ছাড়া একজন গ্রাহক কোন এমএফএস হিসাব খুলবেন, সেই স্বাধীনতা তার থাকতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান, এমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেডের পরিচালক জামালউদ্দিন মাহমুদ প্রমুখ।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.