সাম্প্রতিক দর পতনের কারণে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ের অনেক নিচে নেমে এসেছে। এদের মধ্যে অনেক ভাল মৌলভিত্তির কয়েকটি কোম্পানিও রয়েছে। এসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ অনেক কম ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে মুনাফার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
আজ বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে অ্যাসোসিয়েশন অফ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ডসের (এএএমসিএমএফ) সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীরা এই অভিমত প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, যেসব ফান্ডে বিনিয়োগ করার মতো নগদ টাকা আছে, সে ফান্ডগুলোর বিনিয়োগ বাড়ানো হবে বাজারে।
বিএসইসি কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে বৈঠকে মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনাকারী অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন অ্যাসোসিয়েশন অফ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ডসের (এএএমসিএমএফ) সভাপতি ড. হাসান ইমাম।
সম্প্রতি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের প্রেক্ষিতে পুঁজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়া ও টানা দরপতন শুরু হওয়ার প্রেক্ষিতে বিএসইসির নেওয়া নানা উদ্যোগের অংশ হিসেবে আজকের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে বুধবার বিএসইসি তফসিলি ব্যাংকগুলোর প্রধান অর্থ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করে। এছাড়া সার্কিট ব্রেকারে পরিবর্তনে এনে একদিনে শেয়ারের মূল্য হ্রাসের সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য সীমা ১০ শতাংশ থেকে ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। এসব উদ্যোগের প্রভাবে বাজার তার স্বাভাবিক গতি ফিরে পেতে শুরু করেছে।
আজকের বৈঠকের বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘মৌলভিত্তির কিছু কোম্পানির শেয়ারদর অবমূল্যায়িত হয়ে পড়েছে বলে ফান্ড ম্যানেজাররা মনে করছেন। যেখানে এখন বিনিয়োগে লাভবান হওয়া সম্ভব। তাই ফান্ড ম্যানেজাররা তাদের হাতে থাকা অর্থ দ্রুত বিনিয়োগ করবেন বলে জানিয়েছেন।’
তিনি বলেন, কমিশনের পক্ষ থেকে ফান্ড ম্যানেজারদেরকে বাজারে অংশগ্রহণ বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
অ্যাসোসিয়েশন অফ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ডসের (এএএমসিএমএফ) সভাপতি ড. হাসান ইমাম অর্থসূচককে বলেন, বৈঠকে আমরা আমাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছি। আমরা মনে করছি, বাজারে বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম সেগুলোর অন্তর্নিহিত মূল্যের চেয়ে নিচে নেমে এসেছে। এসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করলে ভাল মুনাফার সম্ভাবনা আছে।
তিনি বলেন, বৈঠকে ফান্ড ম্যানেজাররা আশ্বাস দিয়েছেন, যাদের ফান্ডে নগদ টাকা আছে, তারা বাজারে বিনিয়োগ বাড়াবেন। ইতোমধ্যে অনেকে শেয়ার কিনতে শুরু করেছেন।
ড. হাসান ইমাম বলেন, বৈঠকে তারা বলেছেন, পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতার প্রয়োজনে মিউচুয়াল ফান্ড ইন্ডাস্ট্রির বিকাশে নীতিগত সহায়তা দেওয়া জরুরি। বিএসইসি এই সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছে।
আগের দিন বিএসইসি বসে ৩৩টি ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, যেসব ব্যাংক তাদের মূলধনের ২৫ শতাংশ এখনও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেনি, তারা দ্রুত ২ শতাংশ বিনিয়োগ বাড়াবে।
পুঁজিবাজারের জন্য গঠিত বিশেষ তহবিলে এখনও যেসব ব্যাংক ২০০ কোটি টাকা জমা দেয়নি, সেগুলো তাতে টাকা জমা দেবে। যেসব ব্যাংক টাকা জমা দিয়েও বিনিয়োগ করেনি, তারা দ্রুত বিনিয়োগে যাবে- এমন সিদ্ধান্ত হয় সেদিন।
ওই বৈঠকে একাধিক ব্যাংকের সিএফও জানিয়েছেন, বেশিরভাগ ব্যাংকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো দক্ষ ও পর্যাপ্ত জনবল নেই। তাই পরিচালনা পর্ষদ এখানে বিনিয়োগের ঝুঁকি নিতে তেমন আগ্রহী নয়। এর প্রেক্ষিতে বিএসইসি তাদেরকে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি বা ফান্ড ম্যানেজারদের মাধ্যমে বাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে ওই সমস্যা এড়ানোর পরামর্শ দেয়।
ড. হাসান ইমাম ওই পরামর্শকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এটি খুবই ভাল পরামর্শ। কারণ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ব্যাংকগুলোর মূল ব্যবসা নয়। তাই তাদের দক্ষ জনবলের ঘাটতি আছে। কিন্তু অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোর প্রধান কাজই হচ্ছে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ। তাই এই বিষয়ে তাদের রয়েছে পর্যাপ্ত পেশাগত দক্ষতা ও যোগ্য জনবল। এদের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে তাদের ঝুঁকি কমবে, মুনাফার সম্ভাবনা বাড়বে। তাতে বাজারেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.