উত্তরপ্রদেশে ফের যোগী, উত্তরাখণ্ড-গোয়া ও মণিপুরে এগিয়ে বিজেপি

উত্তরপ্রদেশে আবার সরকার গঠন করতে চলেছেন যোগী আদিত্যনাথ। পরপর দুইবার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে রেকর্ড করতে চলেছেন তিনি। অখিলেশ যাদবের সাইকেলকে অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছে যোগীর পদ্ম। গতবারের তুলনায় অখিলেশ অনেক ভালো ফল করেছেন। বিজেপি-র আসন গতবারের তুলনায় কমছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও যোগীকে চ্যালেঞ্জ জানানোর জায়গায় পৌঁছতে পারেননি অখিলেশ।

বেলা বারোটা নাগাদ ফলাফলের প্রবণতা হলো বিজেপি এগিয়ে ২৬৯টি আসনে, অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি ১২২টি আসনে এগিয়ে। কংগ্রেস ও বহুজন সমাজ পার্টি চারটি করে আসনে এগিয়ে। গতবারের তুলনায় বিজেপি ৫৩টি আসন হারাতে পারে, অখিলেশ ৭১টি আসন বেশি পেতে পারেন।

এই প্রবণতা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট, উত্তরপ্রদেশে লড়াই হয়েছে সরাসরি বিজেপি ও সমাজবাদী পার্টির মধ্যে। প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর কংগ্রেস এবং মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি উত্তরপ্রদেশে এই বিধানসভা নির্বাচনে একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। তারা নিতান্তই শক্তিহীন হয়ে পড়েছে।

অখিলেশের চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করে যোগী আদিত্যনাথ আবার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন। উত্তরপ্রদেশের ইতিহাসে সাধারণত কেউ পরপর দুইবার মুখ্যমন্ত্রী হন না। যোগী হলে সম্ভবত দ্বিতীয়বার এই ঘটনা ঘটবে। উত্তরপ্রদেশে এবার যোগীই ছিলেন বিজেপি-র মুখ। মোদী নন। তাঁকে সামনে রেখেই ভোটে গিয়েছিল বিজেপি। আর অনিবার্যভাবে যোগী প্রচারপর্বে হিন্দুত্বের প্রসঙ্গ তুলেছেন। বিভাজনের চেষ্টা করেছেন। মন্দির-মসজিদ প্রসঙ্গ তুলেছেন, সেই সঙ্গে ৮০-২০-র কাহিনি শুনিয়েছেন। ৮০ শতাংশ হিন্দু ও ২০ শতাংশ মুসলিমকে বিভাজনের কাহিনি। তিনি বারবার অযোধ্যায় রামমন্দির, মথুরায় কৃষ্ণজন্মভূমি ও কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের করিডোরকে প্রচারে সামনে এনেছেন।

ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যাচ্ছে, যোগীর ৮০-২০-এর কৌশল সফল হয়েছে। বিজেপি-কে পঞ্চাশটির মতো আসন হারাতে হলেও, তারা সমাজবাদীর পার্টির থেকে প্রায় দেড়শ আসনে এগিয়ে আছে। উত্তরপ্রদেশে পরপর দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর যোগীর রাজনৈতিক উচ্চতা বাড়তে বাধ্য। সারা ভারতেই তিনি হিন্দুত্বের মুখ হিসাবে আরো অনেক সামনে আসবেন বলে বিজেপি নেতারাই মনে করছেন।

স্বরাজ পার্টির নেতা ও সাবেক ভোটবিশেষজ্ঞ যোগেন্দ্র যাদব এনডিটিভিকে বলেছেন, সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক বিষয় হলো, কিছুদিন আগেই করোনাকালে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছেন। অক্সিজেন না পেয়ে মারা গেছেন। গঙ্গা দিয়ে একের পর এক শব ভেসে এসেছে। তারপরেও মানুষ মনে করছে, মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে যোগী ভালো কাজ করছেন এবং তারই থাকা উচিত। দুইটি বিষয় বিজেপি-কে সাহায্য করছে। দরিদ্রদের বিনা পয়সায় প্রতি মাসে চাল, গম, তেল, ছোলা, নুন দেয়া এবং স্থানীয় স্তরে গুন্ডামি বন্ধ করা। তাতে পুলিশরাজের অভিযোগ উঠলেও সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে ছিলেন।

এদিকে অখিলেশের ভোট পাওয়ার হার গতবারের তুলনায় অনেক বেড়েছে। গতবার তার দল পেয়েছিল প্রায় ২২ শতাংশ ভোট। এবার তাদের ভোট পাওয়ার হার গিয়ে পৌঁছেছে ৩৪ শতাংশে। বিজেপি-ও তাদের ভোটের হার চার শতাংশ বাড়াতে পেরেছে। তারা এবার প্রায় ৪৫ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়েছে। ভোটপ্রাপ্তির হারে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মায়াবতীর দল। তারা গতবার ভোটের হারে দ্বিতীয় স্থানে ছিল। এবার তাদের ভোট পাওয়ার হার অর্ধেক হয়েছে।

এদিকে শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, উত্তরাখণ্ড, গোয়া, মণিপুরেও বিজেপি এগিয়ে। প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী, তিন রাজ্যেই কংগ্রেসসহ অন্যদের পিছনে ফেলেছে বিজেপি ।

উত্তরাখণ্ডে ৭০ সদস্যের বিধানসভায় বিজেপি ৪৪টি আসনে এগিয়ে। কংগ্রেস গতবারের তুলনায় ভালো ফল করলেও ২২টি আসনে এগিয়ে আছে। বিএসপি দুই ও আপ একটি আসনে এগিয়ে।। ফলাফলের এই প্রবণতা বজায় থাকলে উত্তরাখণ্ডে বিজেপি সরকার গঠন করবে। গোয়ার দিকে এবার সবার নজর ছিল। ৪০ সদস্যের গোয়া বিধানসভায় বিজেপি এগিয়ে ১৮টি আসনে, কংগ্রেস ১৩টিতে, তৃণমূল পাঁচটি ও আপ একটি আসনে এগিয়ে। গোয়ায় তৃণমূল যদি শেষ পর্যন্ত চার-পাঁচটি আসন পায়, সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের বিশাল সাফল্য হবে। এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে অন্য কোনো রাজ্যে তৃণমূল ভোটে লড়াই করে এতগুলো আসন পায়নি।

মণিপুরে বিজেপি ২৩টি আসনে এগিয়ে কংগ্রেস ১২টিতে, এনপিপি ১০টি এবং জেডি ইউ পাঁচটি আসনে এগিয়ে। অন্যরা এগিয়ে নয়টি আসনে। ফলে মণিপুরে এখনো কেউ একার ক্ষমতায় সরকার বানাবার মতো জায়গায় নেই।

এদিকে মোদাী-শাহের নজর এবার গুজরাটের বিধানসভা ভোট। সেজন্য ফলাফলের ব্যস্ততা কাটার পরই তারা গুজরাট যাচ্ছেন। সূত্র: ডিডাব্লিউ

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.