রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে

ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষ বলছে রাজধানী কিয়েভের উত্তরপশ্চিম দিকের তিনটি শহর বুচা, হোস্টোমেল এবং ইরপিনে অব্যাহতভাবে রুশ বোমাবর্ষণ চলছে। দেশটির সেনাবাহিনী কিয়েভে পরিখা খনন করে এবং রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে সম্ভাব্য রুশ অগ্রাভিযান ঠেকিয়ে দেবার চেষ্টা করছে।

কিয়েভ থেকে বিশ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমের ছোট্ট শহর ইরপিনে আর্টিলারি এবং বোমা হামলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেখান থেকে প্রাণভয়ে পালাচ্ছে মানুষ।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রুশ বাহিনী এখন দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর শহর ওডেসাতে বোমা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই শহরে বেশ কিছু সামরিক তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে রাস্তা একেবারে শান্ত এবং জন-মানবহীন। তবে ওডেসা শহরে এখনি হামলা হবে বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে না।

এদিকে মারিউপোল থেকে বেসামরিক মানুষদের উদ্ধারে পরিকল্পনা আবারও ভেস্তে গেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই শহর থেকে দুই লাখ মানুষকে সরিয়ে আনা যাবে বলে আশা করছিল আন্তর্জাতিক রেডক্রস। মারিউপোল থেকে কিছু নিরাপদ পথ খোলার জন্য কাজও শুরু করেছিল কয়েকটি টিম। কিন্তু এরপরই আবার লড়াই শুরু হয়ে গেছে।

ইউক্রেন সংকটে মধ্যস্থতার প্রয়াসের অংশ হিসেবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে কথা বলেছেন। এর পর তিনি বার্লিনে গিয়ে জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজের সাথেও কথা বলেন। নিজ দেশে ফেরার পর বেনেট বলছেন, তিনি তার প্রয়াস চালিয়ে যাবেন যদিও সাফল্যের সম্ভাবনা খুব বেশি নেই।

অন্যদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তায়েপ এরদোয়ানও রোববার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে কথা বলেছেন। তুরস্ক ইতোমধ্যেই রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে আলোচনার স্বাগতিক দেশ হবার প্রস্তাব দিয়েছে।

ইউক্রেনে যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় ব্রিটেন একটি ৬ দফা পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছে এবং এতে যোগ দেবার জন্য অন্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং তার আগ্রাসন যে ব্যর্থ এটা অবশ্যই সবার চোখের সামনে তুলে ধরতে হবে। বলা হচ্ছে ব্রিটিশ পরিকল্পনাটিতে একটি মানবিক কোয়ালিশন গঠন, ইউক্রেনের আত্মরক্ষায় সমর্থন দেয়া এবং ক্রেমলিনের ওপর সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের কথা আছে।

এদিকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে একটি টেলিফোন আলাপে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, আলোচনা অথবা যুদ্ধ, যেভাবেই হোক রাশিয়া লক্ষ্য অর্জন করবে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে ইউক্রেনের পারমাণবিক কেন্দ্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তাগিদ দেন। ইউক্রেনের দাবি, রুশ গোলাবর্ষণে জেপোরোজিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আগুন ধরে গিয়েছিল। তবে আগুনের ওই ঘটনার জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করেছে ক্রেমলিন।

পুতিন আরও বলেছেন, রবিবার মারিউপোল এবং ভলনোভাখা শহরে ‘যুদ্ধবিরতি’ ভেস্তে যাওয়ার কারণ হলো, ইউক্রেনের জাতীয়তাবাদীরা বেসামরিক মানুষজনকে যেতে বাধা দিয়েছে, বরং এই সুযোগে তারা শক্তি বৃদ্ধি করার চেষ্টা চালিয়েছে।

এর আগে রেডক্রস জানিয়েছিল, কীভাবে বেসামরিক মানুষজনকে সরিয়ে নেয়া হবে, তা নিয়ে দুই পক্ষ একমত হতে না পারায় তারা কাজ শুরু করতে পারেনি।

ইউক্রেনে হামলা চালানোর কারণে রাশিয়ায় কার্যক্রম স্থগিত করেছে মাস্টার কার্ড, ভিসা, আমেরিকান এক্সপ্রেস, নেটফিক্সের মতো অনেকগুলো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.