সরকারি হিসাবের তুলনায় প্রকৃত মূল্যস্ফীতির হার অনেক বেশি: সানেম

বিশ্ববাজারে সরবরাহ-সংকট চলছে, উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। এ বাস্তবতায় বিশ্বের প্রায় সব দেশেই মূল্যস্ফীতির হার এখন রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশেও বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। কিন্তু বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির হার যৌক্তিক নয়। বিশ্ববাজারের প্রভাবে যতটা না দাম বাড়ে, তার চেয়ে বেশি বাড়ে স্থানীয় বাজারের কারণে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ে গবেষণা করছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেম। তার অংশ হিসেবে আজ এক ওয়েবিনার আয়োজন করে তারা। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির কারণ নিয়ে এসব কথা বলেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান।

অনুষ্ঠানে সানেম বলে, বাংলাদেশের প্রান্তিক মানুষ প্রকৃত যে খাদ্য মূল্যস্ফীতির মুখে পড়েছে, সেটি আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যানে প্রতিফলিত হচ্ছে না। দরিদ্র মানুষের ব্যয়ের বেশির ভাগ খাদ্যের পেছনে যায় বলে তাঁদের পক্ষে ব্যয় কমানো সম্ভব হয় না। সানেমের হিসাবে দেখা গেছে, শহরাঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতির হার ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

সানেমের প্রাক্কলনে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শহর ও গ্রামাঞ্চলের প্রান্তিক গোষ্ঠীর গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার পাওয়া গেছে যথাক্রমে ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ ও ১২ দশমিক ১০ শতাংশ। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে শহর ও গ্রামীণ এলাকার জন্য এ হার ছিল যথাক্রমে ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ ও ১১ দশমিক ২১ শতাংশ। তাতে বোঝা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে যে কেবল খাদ্য মূল্যস্ফীতির হারই বৃদ্ধি পেয়েছে তা নয়; বরং সরকারি পরিসংখ্যানে যা বলা হচ্ছে, মূল্যস্ফীতির হার তার চেয়ে অনেক বেশি।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সানেম চেয়ারম্যান বজলুল হক খন্দকার ও গবেষণা পরিচালক সায়েমা হক। এ বাস্তবতায় তারা সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যক্তিপ্রতি বরাদ্দ বৃদ্ধির পরামর্শ দেন।

মূল্যস্ফীতি পরিমাপে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো যে পদ্ধতি ব্যবহার করে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সানেম। তারা বলেছে, পরিবারের অর্থ ব্যয়ের ধরন বা ভোগের ধরন নিরূপণ করা হয় ২০০৫-২০০৬ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপের ভিত্তিতে।

এ ক্ষেত্রে শহর ও গ্রামের জন্য দুটি আলাদা ভোগ্যপণ্যের তালিকা বা কনজ্যুমার বাস্কেট নির্ধারণ করা হয়। শহরের ভোক্তাদের এ তালিকায় আছে খাদ্য, অন্যান্য নানা ব্যবহার্য জিনিসসহ ৪২২টি পণ্য এবং একইভাবে গ্রামের ভোক্তাদের তালিকায় আছে ৩১৮টি পণ্য। ভোক্তা মূল্যসূচক তৈরি করতে কোন পণ্যের গড় মান (পরিসংখ্যানের ভাষায় যাকে বলা হয় ওয়েইট) কত হবে, সেটি বিবিএস নির্ধারণ করে একটি পরিবারের মোট খরচের কত অংশ কোন পণ্যের পেছনে যায়, তার ভিত্তিতে।

আর এ উপাত্তের উৎস ২০০৫-২০০৬ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপ। অথচ এরপর দেশে আরও একটি খানা আয় ব্যয় জরিপ হয়েছে ২০১৭ সালে। এ ছাড়া শ্রমশক্তি জরিপ হয়েছে।

সানেমের গবেষণার উল্লেখযোগ্য দিক হলো খাদ্যবস্তুর যে তালিকার ভিত্তিতে সানেম জরিপ করেছে, তার বেশির ভাগই গরিব মানুষ কেনে না। ফলে মূল্যস্ফীতি পরিমাপের ভিত্তি দুর্বল হয়ে যায়।

অন্যদিকে ২০০৫-২০০৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দেশের দরিদ্র ও সচ্ছল উভয় শ্রেণির মানুষের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে। অথচ বিবিএস যখন সিপিআই হিসাব করে, তখন এ খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন বিবেচনায় আসে না।

গবেষণায় দেখা গেছে, শহরের প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলো গড়ে তাদের মোট খরচের ৬১ দশমিক ৩১ শতাংশ খাদ্যের পেছনে ব্যয় করে। আর গ্রামীণ প্রান্তিক গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে তা ৬৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। বিবিএস এ ক্ষেত্রে যে হিসাব দেয়, তার তুলনায় এ হার অনেক বেশি। বিবিএসের হিসাবে শহর ও গ্রামের পরিবার তাদের মোট খরচের যথাক্রমে ৪৫ দশমিক ১৭ শতাংশ ও ৫৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ খাদ্যের পেছনে ব্যয় করে।

অর্থসূচক/এমএস/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.