চাকরিচ্যুত দুদক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের তদন্ত চেয়ে রিট

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে চাকরিচ্যুত শরিফ উদ্দিনের বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত পাল্টাপাল্টি অভিযোগের তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে।

বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী এ রিট দায়ের করেন। রিটকারীরা হলেন- অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, রেজওয়ানা ফেরদৌস, জামিলুর রহমান খান, উত্তম কুমার বণিক, মুস্তাফিজুর রহমান, মো. তারেকুল ইসলাম, আহমেদ আব্দুল্লাহ খান, সৈয়দ মোহাম্মদ রায়হান, মো. সাইফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ নোয়াব আলী।

এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে চাকরিচ্যুত শরীফ উদ্দিনের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে হাইকোর্টে চিঠি পাঠান সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এবং সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর বরাবর চিঠিটি প্রেরণ করা হয়। গত ২০ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী এ চিঠি পাঠান। এরপর গত ২২ ফেব্রুয়ারি আদালত চিঠিটি জমা রাখেন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে রিট দায়েরের পরামর্শ দেন।

চিঠিতে বলা হয়েছিল, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দুদক কর্মচারী চাকরি বিধিমালা ২০০৮ এর ৫৪(২) বিধি অনুযায়ী উপসহকারী পরিচালক শরিফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। শরীফ উদ্দিন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় পটুয়াখালীতে উপ-সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার আগে সাড়ে তিন বছর ছিলেন চট্টগ্রামে। সেখানে থাকাকালে কক্সবাজারে ভূমি অধিগ্রহণের সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা দুর্নীতির ঘটনায় ১৫৫ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন তিনি। যেখানে অ্যাডমিন ক্যাডার ও পুলিশ কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও ছিলেন।

এছাড়া রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান ও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক। সেসব মামলার বাদী ছিলেন শরীফ। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের জাতীয়তা সনদ দেওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, সদস্য, পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে আলোচিত হন শরীফ উদ্দিন।

এতে বলা হয়, এছাড়া অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ স্থানান্তর ও নতুন সংযোগ প্রদানসহ বিভিন্ন অভিযোগে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (কেজিডিসিএল) বিভিন্ন অভিযোগ নিয়েও তদন্ত করেন শরীফ। পরে অভিযোগের ‘সত্যতা পেয়ে’ কেজিডিসিএল এর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সাবেক বৈদেশিক ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসির ছেলে মুজিবুর রহমানসহ কয়েকজনকে আসামি করে ২০২১ সালের ১০ জুন মামলা করেন শরীফ। এরপর আলোচিত মামলা দায়েরের পর চট্টগ্রাম থেকে শরিফ উদ্দিনকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়। সবশেষে জীবন নাশের হুমকি পাওয়ার ১৬ দিনের মাথায় শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করা হলো।

তবে শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুতির পর দুদকের সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার জন্য যত রকমের কাজ করা যায়, একটাও বাকি রাখেননি শরীফ উদ্দিন। দুর্নীতি দমন কমিশনের যে আইন রয়েছে—দুর্নীতি দমন কর্মচারী চাকরি বিধি ২০০৮। সেই অনুযায়ী, দুর্নীতি দমন কমিশনের সব কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। দুর্নীতি দমন কমিশন কর্মচারী বিধি অনুযায়ী যে বিধানাবলি মানা প্রয়োজন। শরীফ উদ্দিন সেগুলো না মেনে অব্যাহতভাবে বিধি পরিপন্থী কাজ করে যাচ্ছিলেন। যে কারণে কমিশন মনে করেছে, কমিশনের ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করেছেন। তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ছিল। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চালু ছিল। এর আগে তদন্তকালে টাকা উদ্ধার বিষয়ে উনি যে কার্যক্রম করেছিলেন, সে বিষয়ে হাইকোর্ট থেকেও অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। মানে সবকিছু মিলিয়ে চাকরিবিধি পরিপন্থীর কারণে তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থাটা নেওয়া হয়েছে।’

তাই হাইকোর্ট রুলসের ১১ক এর বিধি ১০ অনুযায়ী প্রেরিত চিঠিতে শরীফ উদ্দিনের ঘটনা নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শাতে এবং শরীফ উদ্দীনের জীবনের নিরাপত্তা বিধানের নির্দেশনা চাওয়া হয়।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.