দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই কমেছে মূল্যস্ফীতি

‘বিবিএসের তথ্যের সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে দেশে মূল্যস্ফীতির হার কমেছে। যদিও বাজারে সব জিনিসের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার ফলে পরিবহন ভাড়া বেড়েছে।

পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি) চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আগের মাস ডিসেম্বরে এই হার ছিল ৬ শতাংশের ওপরে; ৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিবিএসের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।

অর্থাৎ, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে যে পণ্য বা সেবার জন্য ১০০ টাকা খরচ করতে হতো, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে সেই পণ্য বা সেবার জন্য ১০৫ টাকা ৮৬ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। আগের মাসে এই খরচ ছিল ১০৬ টাকা ০৫ পয়সা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমানে বাজারের বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে বিবিএসের মূল্যস্ফীতির হিসাবের কোন মিল নেই। বিবিএসের তথ্যে বিষ্ময় প্রকাশ করে তারা বলেন, এই তথ্য বাজারের বাস্তব অবস্থার সঙ্গে কোনোভাবেই মেলে না। এটা দেশের কোনো মানুষই বিশ্বাস করবে না।

এছাড়া, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করার পর থেকেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছিল। তার প্রভাব পড়েছে ছোট-বড় সব দেশে। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা পূর্বাভাস দিয়েছিল, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত তারই লক্ষণ দেখা গেছে দেশের অর্থনীতিতে। কিন্তু গত জানুয়ারি মাসে খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তি থাকলেও দেশে মূল্যস্ফীতি কমেছে।

বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, জানুয়ারিতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সামান্য বাড়লেও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কমেছে। ফলে সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমেছে। যদিও মূল্যস্ফীতি গত কয়েক মাস ধরেই ৬ এর কাছাকাছি রয়েছে। এসময়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ, যা আগের মাস ডিসেম্বর শেষে ছিল ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ। খাদ্য বহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও তা ছয় শতাংশের বেশি আছে। খাদ্য বহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি এখন ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ। যা আগের মাস ডিসেম্বরে এই হার ছিল সাত শতাংশ।

বিবিএস বলছে, গত জানুয়ারি মাসে শহরের মানুষের চেয়ে গ্রামের মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি ছিল। তবে এই চাপ আগের মাসের তুলনায় কম। গত মাসে গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ০৭ শতাংশ, আর শহরে এ হার ছিল ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়লেও সাধারন মানুষের ওপর জীবনযাত্রায় খুব বেশি প্রভাব ফেলছে না। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জাতীয় মজুরি হার। বিবিএসের জাতীয় মজুরি সূচক থেকে এমন তথ্য পাওয়া যায়। মানুষের আয় কতটা বাড়ল কিংবা কমল, তা জাতীয় মজুরি হার সূচক দিয়ে বোঝানো হয়।

বিবিএস বলছে, ২০১০-১১ ভিত্তিবছর ধরে গত জুন মাসে জাতীয় মজুরি বৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ৯২ শতাংশ। অর্থাৎ, মূল্যস্ফীতি ও মজুরি সূচক প্রায় এক হয়ে গেছে। স্বাভাবিক সময়ে এই দুটির মধ্যে এক শতাংশের মতো পার্থক্য থাকে।

এদিকে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৩ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছে সরকার। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে এই লক্ষ্য ধরা ছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। কিন্তু অর্থবছর শেষ হয় ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি নিয়ে। অর্থাৎ বাজেটের লক্ষ্যের চেয়ে খানিকটা বেশি ছিল গড় মূল্যস্ফীতি।

অর্থসূচক/মৃত্তিকা সাহা/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.