দিনের ভোট রাতে হয়েছে বলে যে অভিযোগ রয়েছে এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো আদালতে কোনো অভিযোগ দেয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে হয়েছে বলে যে অভিযোগ তা অভিযোগ আকারেই থেকে গেছে। অভিযোগের তদন্ত আদালতের নির্দেশনা ছাড়া হয় না।
বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক বৈঠকে তিনি এমন মন্তব্য করেন। রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) আয়োজিত এ বৈঠকে সিইসি তার পাঁচ বছর মেয়াদের নানা কর্মযজ্ঞ তুলে ধরেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে সিইসির মতামত জানতে চাইলে সিইসি বলেন, অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে আমি কনক্লুসিভ কিছু বলতে পারি না। কারণ, আমি তো দেখি নাই। আপনিও দেখেননি যে রাতে ভোট হয়েছে। তদন্ত হলে বেরিয়ে আসত, বেরিয়ে এলে আদালতের নির্দেশে নির্বাচন বন্ধ হয়ে যেত। সারা দেশের নির্বাচনও বন্ধ হয়ে যেতে পারত। রাজনৈতিক দলগুলো কেন আদালতে অভিযোগ দেয়নি সেটা তাদের বিষয়। এ সুযোগ তারা হাতছাড়া করেছে।
সিইসি বলেন, এটা এখন প্রায়ই শোনা যায়। কিন্তু এটা অভিযোগ। সংসদ নির্বাচনের সময় আদালতে যেতে বলেছিলাম প্রার্থীদের। কিন্তু কোনও রাজনৈতিক দলই কেন যায়নি জানি না। যেহেতু যাননি, তার অর্থ এটা অভিযোগ। আমরা চেষ্টা করেছি নির্বাচনের সময়, নির্বাচনের পরে যখনই কোনো রাজনৈতিক দল আমাদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছে প্রত্যেকবারই আমরা তাদের সাথে দেখা করেছি। তাদের কথা শুনেছি। তাদের কথা অনুসারে আইনানুগভাবে যা করার দরকার সবটুকু করেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো রাজনৈতিক দলের চাপ ছিল না। কোনো রাজনৈতিক দলের প্রভাবে প্রভাবিত হইনি। ক্ষমতাসীন দলের একাধিক সংসদ সদস্য বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করেছি। আদালতে গিয়ে তাদের জামিন নিয়ে আসতে হয়েছে। অনেক মামলা বিচারাধীন আছে। নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনের আগেও আমি বলেছিলাম, কোনো রাজনৈতিক দলের চাপ আগেও ছিল না, এখনো নেই। কুমিল্লা এবং নারায়ণগঞ্জে আমাদের যে অবস্থান অন্য কোনো নির্বাচনের চেয়ে একটুও অতিরিক্ত অবস্থান ছিল না। অন্য সবগুলো নির্বাচন যেভাবে করেছি, সেভাবেই হয়েছে। একটা জায়গায় আমাদের অতৃপ্তি আছে, কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জ ছাড়া অন্য জায়গায় সংঘাত হয়েছে। সকাল থেকে আমরা দেখি পরিচ্ছন্ন ভোট হচ্ছে। যখন ফল ঘোষণা করা হয়, তখন হানাহানি হয়। এগুলো কাম্য না।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের এ যাবৎকালের কার্যক্রম তুলে ধরে তিনি বলেন, করোনা মহামারিতে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যেটা জনগণের ভোটাধিকার প্রক্রিয়া এবং জনপ্রতিনিধিদের পরিবর্তনের প্রক্রিয়া, এটা আমরা বন্ধ রাখিনি। অ্যাট এনি কস্ট, ঝুঁকি নিয়ে…বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রায় ২০ জন লোক করোনায় আক্রান্ত, এর মধ্যেও আমরা পিছিয়ে থাকিনি। নির্বাচন আমরা সম্পন্ন করেছি।
নুরুল হুদা বলেন, নির্বাচন কমিশন অন আর্থ ইজ আ ভেরি কমপ্লেক্স ইনস্টিটিউশন্স। নির্বাচন কমিশন ওয়ান অব দ্য মোস্ট কমপ্লেক্স ইনস্টিটিউশন্স অন আর্থ এভরিহয়ার। সুতরাং এখানে আমাদের সমালোচনা থাকবেই। সেটা অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে আমরা দেখি এবং যেখানে গঠনমূলক সমালোচনা থেকে সেগুলো আমরা রেসপন্স করি। কিছু সমালোচনা থাকে একবারে ব্যক্তি কেন্দ্রিক। একজন সমালোচক আছেন বদিউল আলম মজুমদার। নির্বাচন কমিশনের কথা এলেই তিনি ‘এই নুরুল হুদা নির্বাচন কমিশন’ এ কথা বলে ফেলেন। এটার একটা ঘটনা আছে, সেটা বলা দরকার। আমরা যখন এখানে যোগদান করি, এর একদিন-দুদিন পর থেকে তিনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা শুরু করেন। তিনি আমার পূর্ব পরিচিত। অপ্রস্তুত অবস্থায় একদিন তার সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি অনেকগুলো লোক নিয়ে এলেন। তিনি বড় একটি বই দিলেন, বললেন আমরা এই কাজটা করেছি। বললেন, আমরা হলফনামা সংগ্রহ করে ছাপাই। তিনি যাওয়ার পরে কয়েকজন আমাদের জানালেন, তার বিরুদ্ধে প্রায় ১ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ আছে। কাজ না করে টাকা নেওয়ার অভিযোগ আছে। কমিশন সভায় তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আছে। তখন আমি একটু সাবধান হয়ে গেলাম। আমি একবার শ্রীলঙ্কায় গেলাম, সেখানে তিনিও গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়েও তিনি বারবার আমার সঙ্গে দেখা করতে চান। কিন্তু আমি তাকে বিশ্বাস করিনি একা দেখা করার জন্য। তিনি বললেন, সুজন নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কাজ করেছে। আমি তাকে বললাম, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি আপনি নন। আপনি সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি নন। আমি আপনাকে কোন যোগ্যতায় নেব? আর কী কাজে লাগবে? একটা বই তৈরি করবেন সে জন্য আপনাকে নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
সিইসি বলেন, কয়েকদিন আগে শামসুল হুদা বলেছেন, এই নির্বাচন কমিশন আরও অনেক কাজ করতে পারতো কিন্তু করেনি। নানা কাজ করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। তার এই কথা প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আমার কাছে মোটেই গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। নির্বাচন কমিশন অন আর্থ ইজ আ ভেরি কমপ্লেক্স ইনস্টিটিউশন। সেখানে একটা লোক বাহবা নিয়ে যাবে, স্বীকৃতি নিয়ে যেতে পারে এটা সম্ভব না। নিজের অহমিকা বোধ থেকে, তিনি আমিত্ব বোধ থেকে অনেক কিছু বলতে পারেন কিন্তু সেটা সম্ভব না।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। সংসদ ভেঙে দেওয়ার পরে। তিনি নির্বাচন করেছেন ৬৯০ দিন পরে। এই সাংবিধানকি ব্যত্যয় ঘটানোর অধিকার তাকে কে দিয়েছে? তখন একটা সরকার ছিল, কোনো গণতন্ত্র ছিল না। ইমার্জেন্সি সরকার ছিল সে করণে এটা করেছে। গণতান্ত্রিক সরকারের সময় তো সেটা সম্ভব না। ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে, আমরা তা করেছি। তিনি বদিউল আলম মজুমদারকে নিয়োগ দিয়েছেন কীসের ভিত্তিতে? তিনি কি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলেন? এ রকম অনেক কিছু বলা যায়। সুতরাং অনেক কিছু ভেবে-চিন্তে কথা বলা উচিত।
‘আরএফইডি টক’ শীর্ষক এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি সোমা ইসলাম। সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক কাজী জেবেল।
অর্থসূচক/এএইচআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.