পুলিশের ওপর মানুষের আস্থা বেড়েছে: প্রধানমন্ত্রী

পুলিশের নানা কার্যক্রমের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পুলিশ বাহিনী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছে। বিএনপির ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ভাঙচুর জ্বালাও-পোড়াও দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করেছে। করোনা মহামারি মোকাবেলায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এতে পুলিশের ওপর মানুষের আস্থা বেড়েছে।

রোববার (২৩ জানুয়ারি) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ২০২২ সালের পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমন, মাদক নির্মূল এবং চোরাচালান দমনে পুলিশের ভূমিকা বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করেছে। এছাড়া জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের সাহসী সদস্যগণ উল্লেখযোগ্য প্রশংসনীয় অবদান রেখে চলেছে।

তিনি বলেন, ক্ষমতায় আসার পর পুলিশের বাজেট ৪০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকায় উন্নীত করি। আওয়ামী লীগ সরকার পুলিশকে বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। এ সময় জনগণের সেবক হয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার জন্য কাজ করতে পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মনে রাখবেন, জাতির পিতার দীর্ঘ ২৪ বছরের সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয়; যা আমাদের এই স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, আপনাদের পূর্বসূরিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে সকল আঘাত থেকে রক্ষা করতে হবে।’

১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি রাজারবাগে প্রথম পুলিশ সপ্তাহ উদযাপনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ভাষণ থেকে উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই রাজারবাগে যারা শহীদ হয়েছিলেন, তাদের কথা মনে রাখতে হবে, তারা আপনাদেরই ভাই। তাদের রক্ত যেন বৃথা না যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, জনবান্ধব পুলিশিংয়ের মাধ্যমে দেশের আভ্যন্তরীণ শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে প্রত্যেক পুলিশ সদস্য পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন। সর্বোপরি পুলিশ সপ্তাহ উদযাপন অনুষ্ঠান বাংলাদেশ পুলিশকে শান্তির সংস্কৃতি বিকাশের লক্ষে নব উদ্যোমে কাজ করতে প্রেরণা জোগাবে, এটাই আমার প্রত্যাশা।’

এর আগে প্রধানমন্ত্রী এ অনুষ্ঠানে পুলিশ সপ্তাহের প্যারেড পরিদর্শন করেন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত থেকে প্যারেড পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। খোলা জিপে করে প্যারেড পরিদর্শনের সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে ছিলেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ। পরে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাহস ও বিরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পুলিশ সার্ভিসের কৃতি সদস্যদের পুলিশ পদক দেন। রাজারবাগে ঢাকা মহানগর পুলিশ লাইনসে এ অনুষ্ঠানে পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বার্ষিক পুলিশ প্যারেডে অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দেন পুলিশ সুপার মো. ছালেহ উদ্দিন। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন কন্টিনজেন্টের পুলিশ সদস্যরা প্যারেডে অংশ নেন। প্যারেড পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বাংলাদেশ পুলিশ পদক তুলে দেন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার এবং মরণোত্তর কর্মকর্তাদের পরিবারের হাতে।

মরনোত্তর পদকপ্রাপ্তরা হলেন, মোহাম্মদ সাঈদ তারিকুল হাসান (এআইজি অপারেশন্স, পুলিশ সদর দফতর), এসআই মো. মাহবুবুর রহমান (হাইওয়ে পুলিশ, কুমিল্লা), কর্পোরাল শাহিদুজ্জামান (র‌্যাব ৫), কনস্টেবল মো. মাসুদ রানা (হাইওয়ে পুলিশ, বগুড়া, রিজিওন), সার্জেন্ট মো. খাইরুল ইসলাম (র‌্যাব-৪), কনস্টেবল মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম (ট্রাফিক উত্তর বিভাগ, সিএমপি), কনস্টেবল কবির হোসেন (গজারিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ি মুন্সিগঞ্জ), কনস্টেবল মোহাম্মদ ইদ্রিস মোল্লা (র‌্যাব-১) এবং কনস্টেবল মোহাম্মদ রাব্বি ভূঁইয়া (হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা, রিজিওন)।

এছাড়াও পদক পেয়েছেন, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন (অতিরিক্ত আইজিপি, র‌্যাবের মহাপরিচালক), খন্দকার লুৎফুল কবির (ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার গাজীপুর, ফয়সাল মাহমুদ (উপ-পুলিশ কমিশনার ট্রাফিক বিভাগ সিলেট), এসআই মোহাম্মদ রাফি (জেলা গোয়েন্দা মুন্সিগঞ্জ), কনস্টেবল কোকিলা আক্তার (জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯), কনস্টেবল সাঈদ চৌধুরী (গোয়েন্দা শাখা ময়মনসিংহ), কনস্টেবল হাফিজুর রহমান (৫ এপিবিএন উত্তরা ঢাকা) এবং সৈনিক মো. ইমরান হোসেন (র‌্যাব ১৫ কক্সবাজার)।

পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে ২০২০ সালে ১১৫ এবং ২০২১ সালে ১১৫ জনসহ মোট ২৩০ পুলিশ সদস্যকে পদক দেওয়া হবে। পদকের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম), বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) সেবা, রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম) এবং রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম) সেবা। করোনার কারণে ২০২১ সালে পুলিশ সপ্তাহ অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এ বছর ২০২০ ও ২০২১ সালের পদক একসঙ্গে দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে করোনার কারণে এবারের অনুষ্ঠান কাটছাঁট করা হয়েছে। পাঁচ দিনব্যাপী (২৩-২৭ জানুয়ারি) পুলিশ সপ্তাহের প্রতিটি অনুষ্ঠান যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনপূর্বক অনুষ্ঠিত হবে বলে আগেই জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। প্রতিবছর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের দরবার বসলেও করোনার কারণে এবার তা বাতিল করা হয়েছে। তাই পুলিশের দাবিদাওয়া লিখিতভাবে পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হবে। তবে দরবার হল না বসলেও পুরনোসহ নতুন কিছু দাবিদাওয়া নির্ধারণ করেছে পুলিশ।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.