হল না ছাড়ার ঘোষণা শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের

হল প্রভোস্টের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে থাকা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের পর সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের আজ দুপুর ১২টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আবাসিক হল না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণার পর রোববার (১৬ জানুয়ারি) রাতে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল বের করে তিনটি আবাসিক ছাত্র হলের শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ও হল বন্ধের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।

এর আগে রোববার রাতে সিন্ডিকেট সভা শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

জানা গেছে, রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে শাহপরান হল ও সৈয়দ মুজতবা আলী হল থেকেও শিক্ষার্থীরা মিছিল সহকারে তাদের সঙ্গে যোগ দেন। পরে তারা হল থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের দিকে চলে যান। এছাড়া ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে প্রধান ফটকে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।

প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদ লিজার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা। দাবি মেনে না নেওয়ায় বিকালে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যকে পুলিশ উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে আইআইসিটি ভবন থেকে উপাচার্যকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে অবরুদ্ধ থাকা ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদসহ শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের উদ্ধার করে।

ছাত্রীদের তিন দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগ, হলের যাবতীয় অব্যবস্থাপনা দূর করে হলের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, অবিলম্বে দায়িত্বশীল প্রভোস্ট কমিটি নিয়োগ দেওয়া।

এদিকে, এরই মধ্যে বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদ লিজার পদত্যাগ করেছেন। নতুন প্রভোস্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অধ্যাপক নাজিয়া চৌধুরীকে।

গত বৃহস্পতিবার রাত পানি, সিট, ইন্টারনেট, খাবারসহ বেশ কিছু সমস্যা নিয়ে শিক্ষার্থীরা হলের রিডিং রুমে আলোচনা করেন। ওই সময় তাদের সমস্যার কথাগুলো বলতে প্রভোস্টকে হলে আসার অনুরোধ জানান তারা। তখন প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদ লিজা অসুস্থতার কথা জানালে ছাত্রীরা প্রভোস্ট বডির একজন সদস্যকে অল্প সময়ের জন্য হলে আসার অনুরোধ জানান এবং বিষয়টি জরুরি বলে উল্লেখ করলে প্রভোস্ট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন। এরপরে শিক্ষার্থীরা প্রভোস্টের আচরণে হল থেকে বের হয়ে বৃহস্পতিবার রাত ২টা পর্যন্ত উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আন্দোলন করেন। পরে উপাচার্যের আশ্বাসে রুমে ফিরেন শিক্ষার্থীরা। পরদিন শুক্রবার উপাচার্যের আশ্বাস অনুযায়ী উপাচার্যের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদল আলোচনায় বসেন। কিন্তু আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা শুক্রবার আন্দোলন চালিয়ে যান এবং আল্টিমেটাম দেন। তাঁদের সঙ্গে আরও শিক্ষার্থী একাত্মতা পোষণ করে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন।

শনিবার (১৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর প্রশাসনের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগের নেতৃত্বাধীন ৬ গ্রুপের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এ হামলায় ১০-১২ জন শিক্ষার্থী আহত এবং কয়েকজন ছাত্রী হয়রানির শিকার হন। রোববার প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগের দাবিসহ তিন দফা দাবি আদায়ে ছাত্রীদের চলমান আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগে সকাল থেকে রাস্তা অবরোধ করে রেখেছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের যানবাহন ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া নির্দিষ্টকালের জন্য সব বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

 

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.