জিম্মি করে চাঁদা দাবি: টাকা না পেয়ে কক্সবাজারে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ

সন্তান হার্টের রোগী। আট মাসের এই শিশু সন্তানের চিকিৎসার অর্থ জোগাতে স্বামী-সন্তানসহ পর্যটন নগরী কক্সবাজারে যান সেই নারী। এখানে এসেই সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন তিনি।

দেশি-বিদেশি ট্যুরিস্টদের টার্গেট করে অর্থ জোগাড় করছিলেন তারা। বিষয়টি জেনে তাদের কাছে চাঁদা দাবি করে গ্রেফতার আশিকুর রহমানসহ সংঘবদ্ধ চক্র। টাকা না পেয়ে তাদের সুগন্ধা বিচ থেকে জিম্মি করে সিএনজিতে একটি চায়ের দোকানে নেওয়া হয়। সেখান থেকে জিয়া গেস্ট ইন হোটেলে নিয়ে মূলহোতা আশিকসহ চক্রের সদস্যরা ওই নারীকে ধর্ষণ করে।

কক্সবাজারে নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মতো চাঞ্চল্যকর ঘটনায় মূলহোতা ও প্রধান আসামি আশিকুল ইসলামকে মাদারীপুর থেকে গ্রেফতারের পর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এসব জানিয়েছে র‌্যাব।

র‌্যাব বলছে, ওই নারী চক্রের পূর্ব পরিচিত ছিল না। ঘটনার একদিন আগে বিচে তাদের পরিচয় হয়। সে সময় ওই নারী শিশু সন্তানের চিকিৎসার জন্য ট্যুরিস্টদের কাছে অর্থ সহযোগিতা চাইছিল।

সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় কাওরান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গত ২২ ডিসেম্বর রাতে কক্সবাজারে সংঘবদ্ধ শিকার হয়েছেন এক নারী। ওই ঘটনায় ভিকটিমের স্বামী বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ ও আরও ২-৩ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। ওই ঘটনায় ট্যুরিস্ট পুলিশ, জেলা পুলিশসহ ছায়া তদন্ত করছিল র‌্যাব।’

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী ওই নারী স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজারের একটি হোটেলে অবস্থান করছিলেন। তাদের সঙ্গে ৮ মাস বয়সের একটি শিশু সন্তান রয়েছে। শিশুটির জন্মগতভাবে হার্টে ছিদ্র থাকায় তার চিকিৎসায় ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন। শিশুটির চিকিৎসার অর্থ সংকুলানের আশায় স্বামীসহ কক্সবাজারে অবস্থান করছিল পরিবারটি। তারা বিত্তবান পর্যটকদের কাছ হতে অর্থ সাহায্য চাইতো। এ সময় তিনি অপহরণ ও ধর্ষণের শিকার হন।

র‌্যাব জানায়, অপহরণের ঘটনায় ভিকটিমের স্বামী র‌্যাব-১৫ এর কাছে উদ্ধারে সহায়তা চায়। এরপর র‌্যাব তার স্বামীকে নিয়ে ভিকটিমকে উদ্ধারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় ও একপর্যায়ে ভিকটিম উদ্ধার হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে জিম্মিতে সহযোগিতার অভিযোগে জিয়া গেস্ট ইন হোটেলের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

ইতোমধ্যে ধর্ষণের ঘটনাটি সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে প্রচারে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। র‌্যাব ঘটনায় হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে আসামিদের শনাক্ত ও জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। র‌্যাব আরও জানায়, এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৮ ও ১৫ এর অভিযানে গত রাতে মাদারীপুরের মোস্তাফাপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে এ মামলার প্রধান আসামি আশিকুল ইসলামকে (২৯) গ্রেফতার করা হয়।

কমান্ডার মঈন বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আশিক র‌্যাবের কাছে ধর্ষণের বিষয় স্বীকার করেছে। আশিক কক্সবাজারে পর্যটক এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের মূল হোতা। এই চক্রের সদস্য সংখ্যা ৩০-৩৫ জন। আশিক বিগত ২০১২ বছর হতে কক্সবাজার পর্যটক এলাকায় বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। সে প্রথম ২০১৪ সালে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয় বলে জানায়। সে ও তার সিন্ডিকেট পর্যটন এলাকা চুরি, ছিনতাই, অপহরণ, জিম্মি, চাঁদাবাজি, জবরদখল, ডাকাতি ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। সে পর্যটন এলাকায় বিভিন্ন হোটেল ম্যানেজারের সঙ্গে যোগসাজশে ট্যুরিস্টদের ফাঁদে ফেলে ব্লাকমেইল করতো।’

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আশিক আরও জানায়, আশিক ও তার সহযোগীরা ভিকটিম ও তার পরিবারের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। ভিকটিম ও তার পরিবার চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর লাবনি বিচ এলাকার রাস্তা হতে ভিকটিমকে সিএনজিতে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রেফতার আশিকুল ইসলাম ভিকটিমকে ধর্ষণ এবং জিয়া গেস্ট ইন হোটেলে আটক করে রেখে তার স্বামীর কাছে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এরপর ভিকটিমকে হোটেলে আটকে রেখে আশিক হোটেল থেকে বের হয়ে যায়। বিষয়টি ব্যাপকভাবে স্থানীয় পর্যায়েও বিভিন্ন মিডিয়াতে জানাজানি হলে আশিক আত্মগোপণে চলে যায়। পরে বেশভূষা পরিবর্তন করে ঘটনার দুদিন পর কক্সবাজার হতে একটি এসি বাসে ঢাকায় আসে। ঢাকা থেকে পটুয়াখালী যাওয়ার পথে সে মাদারীপুরের মোস্তাফাপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেফতার হয়।’

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.