নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে উন্নয়ন মডেল তৈরি করতে হবে : ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, উন্নয়নের কোনো ধরাবাঁধা ছক নেই। তাই অন্য দেশের মডেল অনুসরণ করে লাভ নেই। নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে নিজেদের উন্নয়ন মডেল তৈরি করতে হবে।

বাংলাদেশের মৌলিক অর্থনীতিতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার-২০২০’ গ্রহনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
আজ বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর মিরপুরের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে এ সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আর সভাপতিত্ব করেন গভর্নর ফজলে কবির। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক নাজমা বেগম। পুরস্কার হিসেবে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের হাতে স্বর্ণপদক, ক্রেস্ট ও পাঁচ লাখ টাকা তুলে দেন অর্থমন্ত্রী ও গভর্নর।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন সাফল্য নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। তবে মনে রাখতে হবে উন্নয়নের কৌশল সময়োপযোগী হতে হয়। তাই সময়ে সময়ে কৌশল পরিবর্তন,পরিবর্ধন করতে হয়। এত দিন যে উন্নয়নের সাফল্য পেয়েছি, সেখানে সাধারণ মানুষ, কৃষক, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় শিল্প উদ্যোক্তাদের বড় অবদান ছিল। তাদের একটা বৈশিষ্ট্য ছিল, যখন যে সুযোগ এসেছিল, তা পূর্ণ ব্যবহার করেছে। এ ক্ষেত্রে সরকার সেখানে প্রয়োজনীয় নীতি সমর্থন ও সহায়ক ভূমিকায় ছিল। এটাই হলো বাংলাদেশের এত দিনের সাফল্যের মূলকথা।

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন কীভাবে হয়, এত দিন এ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। তবে এখন বিশ্ব অর্থনীতিবিদেরা প্রায় সবাই একমত যে, উন্নয়নের কোনো ধরাবাঁধা ছক নেই। তাই অন্য দেশের মডেল অনুসরণ করে লাভ নেই। নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে নিজেদের উন্নয়ন মডেল তৈরি করতে হবে।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের মতে, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছে। এখন বিশ্ব অর্থনীতিও বদলে যাচ্ছে। তাই উন্নয়নের এ ধারায় অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, মানসম্পন্ন শিক্ষা বা উপযুক্ত শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে। যাতে আমরা ডেমোগ্রাফিক সুবিধা নিতে পারি। পাশাপাশি প্রশাসনের দক্ষতা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, দেশের অর্থনীতির সব সূচকের আশানুরূপ উন্নতি হয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হওয়ার আশা করেছিলাম, সেটা হয়নি। তবে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ বেড়ে ৫০ বিলিয়ন ডলার হবে। আমরা এখন রিজার্ভ থেকে ঋণ দেওয়া শুরু করেছি। মেগা প্রকল্পেও রিজার্ভ থেকে ঋণ পাচ্ছে।

সভাপতির বক্তব্যে গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে অবদান রেখেছেন এ সম্মাননা তাঁরই স্বীকৃতি।

অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকারেরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সর্বশেষ ‘বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার-২০১৭’ যৌথভাবে দেওয়া হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, রিভারসাইডের ইমেরিটাস অধ্যাপক আজিজুর রহমান খান ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও ব্র্যাকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মাহবুব হোসেনকে (মরণোত্তর)।

আজিজুর রহমান খান স্বাধীনতার পর পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রধান হিসেবে প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

২০০০ সালে প্রথমবার বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার পান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। এরপর ২০০৯ সালে অধ্যাপক নূরুল ইসলাম, ২০১১ সালে অধ্যাপক মুশাররফ হোসেন, ২০১৩ সালে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ (মরণোত্তর) ও স্বদেশ রঞ্জন বোসকে (মরণোত্তর) বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার দেওয়া হয়।

অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ১৯৪৮ সালের ১ জুলাই নোয়াখালী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৩ সালে এসএসসি এবং ১৯৬৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় রেকর্ড নম্বর পেয়ে সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেন।

১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে সম্মান ডিগ্রি নেন। ১৯৭৭ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি নেন। ১৯৬৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। বর্তমানে তিনি ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের চেয়ারম্যান।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.