দেশের অন্যতম শীর্ষ নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেড চলমান আর্থিক সঙ্কট শিগগিরই কাটিয়ে উঠবে। এই সঙ্কট সাময়িক। এর কারণে প্রতিষ্ঠানটির কোনো আমানতকারীর আমানত ঝুঁকিতে পড়বে না। প্রত্যেক আমানতকারী তার প্রাপ্য বুঝে পাবেন।
কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী তানজিম করিম (বার-এ্যাট-ল) আমানতকারীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া এক বার্তায় এই নিশ্চয়তা দিয়েছেন। গত ১৭ ডিসেম্বর নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে দেওয়া এক পোষ্টে তিনি এই নিশ্চয়তা দেন।
টাইমলাইনে চৌধুরী তানজিম করিম উল্লেখ করেছেন, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল তার আমানতকারীদের আমানত ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে অত্যন্ত আন্তরিক। বিদ্যমান সঙ্কটের মধ্যেও প্রতিষ্ঠানটি ধীরে ধীরে আমানতকারীদের আমানত ফেরত দিয়ে যাচ্ছে। এই প্রক্রিয়া আগামী দিনেও চলমান থাকবে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল পরিচালনা পর্ষদ সঙ্কট উত্তরণের নানা বিকল্প নিয়ে ভাবছেন। শিগগির প্রতিষ্ঠানটি এই সঙ্কট থেকে বের হয়ে আসতে সক্ষম হবে। তিনি আমানতের অর্থ ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে অনাকাঙ্খিত বিলম্বের কারণে পর্ষদের পক্ষ থেকে আমানতকারীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
ইউনিয়ন ক্যাপিটালের চেয়ারম্যান তার পোস্টে উল্লেখ করেছেন, নিজেদের এখতিয়ার বহির্ভূত কিছু কারণে দেশের অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো ইউনিয়ন ক্যাপিটালও সাময়িক আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে। ২০১০ সালের পর থেকে পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিন চলমান মন্দার কারণে বিপুল পরিমাণ মার্জিন ঋণ খেলাপি হয়ে যাওয়ায় এমনিতে প্রতিষ্ঠানটি কিছুটা চাপের মধ্যে ছিল। এর মধ্যে যোগ হয় আর্থিক খাতের কিছু কেলেঙ্কারির নেতিবাচক প্রভাব। বিশেষ করে ২০১৯ সালে পিপলস লিজিং অবসায়নের সিদ্ধান্ত এবং ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে আমানতকারীদের অর্থ লোপাটের ঘটনার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপর। ওই দুই প্রতিষ্ঠানসহ আরও দু’তিনটি প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক অনিয়মের খবর আমানতকারীদের আস্থা নড়বড়ে করে দেয়। এতে একদিকে তারা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমানত রাখতে অনাগ্রহী হয়ে উঠেন। একই কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও মুখ ফিরিয়ে নেয়। অন্যদিকে বিদ্যমান আমানতকারীরা তাদের আমানত তুলে নেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেন। এই বিপরীতমুখী চাপে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো ইউনিয়ন ক্যাপিটালও তারল্য সঙ্কটে পড়েছে। এই কারণে একসাথে সব আমানতকারীর অর্থ ফেরত না দিয়ে ধীরে ধীরে কিস্তি করে সবার আমানত ফেরত দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও লিখেছেন, আমানতকারীদের আমানতের অর্থ ফেরত দেওয়ার স্বার্থে প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সাল থেকে নতুন ঋণ দেওয়া ও লিজ অর্থায়ন বন্ধ রেখেছে। এই সময়ে আগে বিতরণকৃত ঋণের কিস্তি পাওয়ার সাথে সাথে তা থেকে আমানত ফেরত দেওয়া হয়েছে।
চৌধুরী তানজিম করিম লিখেছেন, ২০২০ সালে নভেল করোনা ভাইরাস আঘাত না হানলে তারা আরও দ্রুততার সাথে আমানতকারীদের আমানত ফেরত দিতে পারতেন। কিন্তু করোনার কারণে ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক সঙ্কটে পড়া এবং কিস্তি পরিশোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দেওয়া ছাড়ের কারণে কিস্তি পেতে বিলম্ব হচ্ছে। তা সত্ত্বেও গত দুই বছরে ইউনিয়ন ক্যাপিটাল প্রায় ৪৫৫ কোটি টাকার আমানত ফেরত দিয়েছে। একই সময়ে বিভিন্ন ব্যাংককে ফেরত দেওয়া হয়েছে ২৩৫ কোটি টাকা।
আর্থিক খাতে চলমান সঙ্কটের মধ্যেও বিপুল পরিমাণ কিস্তি আদায় এবং আমানতকারী ও ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ করার কৃতিত্বের জন্য কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী মঞ্জুর লিয়াকতসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, বিজ্ঞ পরিচালনা পর্ষদের দিকনির্দেশনায় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ চেষ্টার ফলে এটি সম্ভব হয়েছে।
তিনি দৃঢ়তার সাথে দাবি করেন, পিপলস লিজিং ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাথে কোনোভাবে ইউনিয়ন ক্যাপিটালের তুলনা করা যাবে না। কারণ ওই প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে। কিন্তু ইউনিয়ন ক্যাপিটালে ন্যুনতম কোনো দুর্নীতি হয়নি। বিদ্যমান আইন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মকানুন শতভাগ পরিপালন করে ইউনিয়ন ক্যাপিটাল তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তাছাড়া নানা কারণে ইউনিয়ন ক্যাপিটালে বর্তমানে আর্থিক সঙ্কট থাকলেও এটি একেবারেই সাময়িক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা ও পরিচালনা পর্ষদের সঠিক দিকনির্দেশনায় তারা শিগগিরই চলমান সঙ্কট কাটিয়ে উঠবেন।
তিনি উল্লেখ করেন, ইউনিয়ন ক্যাপিটালের একজন পরিচালকও এখন পর্যন্ত কোম্পানি থেকে কোনো ঋণ বা অন্য কোনো সুবিধা নেননি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে ইউনিয়ন ক্যাপিটালের কোম্পানি সচিব তৌহিদ আশরাফ অর্থসূচককে বলেন, কোম্পানির চেয়ারম্যানসহ পরিচালনা পর্ষদের প্রত্যেক সদস্য সঙ্কট উত্তরণে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে কোনো অনিয়ম তো হয়-ই নি, উল্টো কোম্পানির আমানতকারী ও শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থে পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা তাদের প্রাপ্য বৈধ সুবিধাও ত্যাগ করেছেন। গত দুই বছরে ইউনিয়ন ক্যাপিটাল এবং এর দুই সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনিক্যাপ ইনভেস্টমেন্ট ও ইউনিক্যাপ সিকিউরিটিজের পরিচালকরা (স্বতন্ত্র পরিচালক ব্যতিত) পর্ষদ সভার বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য প্রাপ্য সম্মানি পর্যন্ত গ্রহণ করেননি। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধি অনুসারে কোম্পানির চেয়ারম্যান সার্বক্ষণিক একটি গাড়ি, একটি মোবাইল ফোন ও একজন পিএস প্রাপ্য হলেও চৌধুরী তানজিম করিম এর কোনো সুবিধা-ই নেননি। এসব কারণে গত দুই বছরে প্রায় ২৪ লাখ টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এটি করপোরেট অঙ্গনের জন্য একটি বড় ইতিবাচক উদাহরণ।
অর্থসূচক



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.