অক্টোবরে গড় মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ

অক্টোবরে গড় মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৫ দশমিক ৭ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে, যা আগের মাসে ছিল ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। তার আগের মাসে ছিল ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। দেখা যাচ্ছে, অর্থবছরের শুরু থেকেই নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির। প্রতি মাসেই তা বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

করোনা পরিস্থিতি উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মূল্যস্ফীতি যে বেশ ভোগাবে, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পূর্বাভাসে আগে থেকে বোঝা যাচ্ছিল। নতুন (২০২১-২২) অর্থবছরের শুরু থেকেই দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। গ্রাম কিংবা শহর সবখানেই পাল্লা দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। তেল, চিনি, আটাসহ স্বাস্থ্যসেবা, আসবাবেও খরচ বাড়ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পেছনে খরচ মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

বিবিএস বলছে, অক্টোবরে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ২২ শতাংশ, যা আগের মাসে ছিল ৫ দশমিক ২১ শতাংশ। তবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি একলাফে ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশে ঠেকেছে, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যা আগের মাসে ছিল ৬ দশমিক ১৯ শতাংশ।

এদিকে, চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার মূল্যস্ফীতিকে ৫ দশমিক ৩ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। প্রতি মাসেই যেভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে, তাতে বছর শেষে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় আছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) বিভিন্ন বৈশ্বিক সংস্থা বলছে, এবারের মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বগতির কারণ সরবরাহ সংকট, চাহিদাজনিত নয়। কোভিড অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসার পর সারা পৃথিবীতে হঠাৎ পণ্যের চাহিদা অনেকটাই বেড়ে গেছে। কিন্তু সেই তুলনায় পরিবহন ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। মূলত জাহাজ– সংকটের কারণেই এ মূল্যস্ফীতি। আগামী বছরও উচ্চ মূল্যস্ফীতি থাকবে বলে মনে করছে বৈশ্বিক সংস্থাগুলো।

বিবিএসের তথ্য বলছে, অক্টোবরে শহরাঞ্চলে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে, যা আগের মাসে ছিল ৫ দশমিক ২৫ শতাংশে। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৪ দশমিক ৩১ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে যা ছিল ৪ দশমিক ০৩ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ হয়েছে, আগের মাসে যা ছিল ৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ। বিবিএস বলছে, খাদ্যপণ্যের চেয়ে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দাম বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে।

গ্রামাঞ্চলেও খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। গ্রামে অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ, যা আগের মাসে ছিল ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ। অবশ্য গ্রামে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৫ দশমিক ৬২ শতাংশ হয়েছে, যা আগের মাসে ছিল ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ। তবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ হয়েছে, যা আগের মাসে ছিল ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

বিবিএসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মধ্যে গত অক্টোবরে সবচেয়ে বেশি খরচ বেড়েছে পরিবহন খাতে। সেপ্টেম্বরে এ খাতে মূল্যস্ফীতি ছিল ০ দশমিক ৫৪ শতাংশ, অক্টোবরে তা বেড়ে হয়েছে ০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসেবা, আসবাব, বাড়ি ভাড়া, পোশাক খাতেও খরচ বেড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে গড় মূল্যস্ফীতির ওপর।

অর্থসূচক/এমএস/এএইচআর

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.