গান-কবিতা আর হাতি এঁকে বন্যপ্রাণী হত্যার প্রতিবাদ

বন বিভাগে অনাস্থা জানিয়ে জাতীয় কমিশন গঠনসহ বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে ৮ দফা দাবি বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোটের।

দেশে প্রতিনিয়ত বন্যপ্রাণী হত্যা হচ্ছে, উজাড় হচ্ছে অক্সিজেনের আধার বনভূমি। কিন্তু বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের দায়িত্বে থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠান বন অধিদপ্তর তা ঠেকাতে বরাবরই ব্যার্থতার পরিচয় দিয়েছে। এখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে কিছুদিন পরে ছবিতে আঁকা হাতি দেখিয়ে বলতে হবে দেশে একসময় হাতি ছিল।

রবিবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বন অধিদপ্তরের ফটকে বন্যপ্রাণী রক্ষার দাবিতে আয়োজিত সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বক্তারা এসব কথা বলেন।

দিনব্যাপী এই কর্মসূচির আয়োজন করে ৩৩টি পরিবেশবাদী সংগঠনের সম্মিলিত প্রয়াস ‘বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট’। এসময় তারা গান, কবিতা ও হাতির চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমেরও প্রতিবাদ করেন।

পূর্বঘোষিত সময় সকাল ৯টায় জোটের আহ্বায়ক পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদারের সভাপতিত্বে ও সমন্বয়ক কেফায়েত শাকিল ও শামস ‍সুমনের সঞ্চালনায় শুরু হয় বিক্ষোভ কর্মসূচি। এতে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কীটত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার, বিভিনিউজ২৪ ডটকম এর প্রধান সম্পাদক ও বাংলাভিশনের টকশো উপস্থাপক ইয়াসির ইয়ামীন, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সিনিয়র প্রজেক্ট অফিসার জিয়াউল হক লিটু, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের কনসালটেন্ট আব্দুল ওহাব সহ জোটভুক্ত সংগঠনগুলোর নেতারা।

দিনব্যাপী এই কর্মসূচিতে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে জনসচেতনতা বাড়াতে দুপুরের পর অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে বাউল গান, গল্প এবং কবিতার ছন্দে তুলে ধরা হয় বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণেরে আহ্বান। প্রতিবাদের অংশ হিসেবে প ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা স্থপতি রাকিবুল হক এমিলের নেতৃত্বে জীবিত ও মৃত হাতির ছবিও আঁকেন চিত্রশিল্পীরা।

বিকেলে জোটের আহ্বায়কের নেতৃত্বে বন অধিদফতরে অনাস্থাপত্র নিয়ে যান ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল। প্রধান বন সংরক্ষক সচিবালয়ে থাকায় তার পক্ষে অনাস্থাপত্রটি গ্রহণ করেন বন সংরক্ষক (অর্থ ও প্রশাসন) হোসাইন মুহম্মদ নিশাদ ও সহকারী প্রধান বন সংরক্ষক মো. আব্দুস ছালেক প্রধান।

অনাস্থাপত্রের পাশাপাশি আস্থা ফেরাতে জোটের পক্ষে দফা প্রস্তাবনা ও দাবি তুলে ধরেন নেতারা। দাবিগুলো হলোঃ

১. হাতি হত্যার ঘটনাগুলোর বিষয়ে নিরপেক্ষ, বস্তুনিষ্ঠ এবং বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত ও শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে;

২.হাতির কোরিডোর থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ করে হাতির আবাসস্থল হিসেবে ফিরিয়ে আনতে হবে;

৩. দেশের বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় অবিলম্বে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি নিরপেক্ষ জাতীয় কমিশন গঠন করতে হবে;

৪. বন, বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত বিদ্যমান সকল আইনে প্রাকৃতিক বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় বন বিভাগের দায়িত্ব ও কর্তব্য স্পষ্টভাবে সন্নিবেশ করতে হবে এবং এ বিভাগের জনাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে;

৫. বননীতি পরিবর্তন করে বনভূমিতে বাণিজ্যিকরণ এবং এরবিরুদ্ধ ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং বনভূমিকে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল এবং সংরক্ষণের স্থানহিসেবে সুরক্ষিত করতে হবে;

৬. প্রতিটি বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত অপরাধের ঘটনা নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে এবং সেক্ষেত্রে বনবিভাগের ভূমিকা সকলের কাছে স্পষ্ট করতে হবে এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে;

৭. এসডিজি-১৪ এবং ১৫ বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে;

৮.নতুন করে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য আর কোনো বনভূমি বরাদ্দ না দেওয়া এবং বন বিভাগের লোকবল ও বরাদ্দ বাড়িয়ে যুগউপযোগি এবং আধুনিক করে গড়ে তোলা।

অনাস্থাপত্রটি গ্রহণ করে আন্দোলনকারীদের সংগে এসে একাত্মতা ঘোষণা করেন বন অধিদফতরের বন সংরক্ষক (অর্থ ও প্রশাসন) হোসাইন মুহম্মদ নিশাদ ও সহকারী প্রধান বন সংরক্ষক মো. আব্দুস ছালেক প্রধান। এ সময় দেওয়া বক্তব্যে সমস্যা সমাধানে নিজেদের তৎপরতা তুলে ধরে জনগণের সহযোগিতা কামনা করেন হোসাইন মুহম্মদ নিশাদ।

এই সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আব্দুল্লহ আল নাঈম, সেভ আওয়রা-সি এর মহাসচিব আনোয়ারুল হক, ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম ফর সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’র প্রধান সমন্বয়ক সাইদুল ইসলাম, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা, সেইভ ফিউচার বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা নয়ন সরকার, সবুজ আন্দোলন-এর অর্থ পরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন রুপা, গ্রীন ফাইটিং মুভমেন্ট’র সভাপতি নাবিল আহমদ, সবুজ কুঁড়ি বাংলাদেশ-এর সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম উজ্জ্বল প্রমুখ।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.