অবৈধ দখলদারদের বৈধ নোটিশ প্রদান করা হবে না: মেয়র আতিক

অবৈধ দখলদারদের কোন বৈধ নোটিশ প্রদান করা হবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

শনিবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় বছিলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় খেলার মাঠে এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ‘বুড়িগঙ্গা নদী মোর্চা’ এবং ‘ওয়াটার কীপারস বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম’ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল এর সভাপতিত্বে এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এর সমন্বয়ক শরীফ জামিল এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই বুড়িগঙ্গা নদী উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র সহ-সভাপতি এবং ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার তাকসিম এ খান। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির। উদ্বোধনী অধিবেশনে অতিথি হিসাবে আরো উপস্থিত ছিলেন ইউএসএআইডি বাংলাদেশ এর প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট-সিভিল সোসাইটি অ্যাডভাইজার সুমনা বিনতে মাসুদ, কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনাল এর প্রোমোটিং অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড রাইটস (পার) প্রকল্পের ডেপুটি চিফ অব পার্টি শাহিদ হোসেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিল আসিফ আহমেদ প্রমুখ।

মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ডেভেলপার কোম্পানিগুলো ডিজাইনের সময় খেলার মাঠ, শশ্মান, বাজারসহ অনেক সুবিধা দেয়ার কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে তারা সবকিছুই পরে ভুলে যান। পরিবেশ আন্দোলনের কাছে, নাগরিক সমাজকে বলবো এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপের কথা ভাবতে যাতে করে যে ডিজাইন দেখিয়ে তারা এগুলো বিক্রি করেছেন তা দেন। তাদেরকে বলতে হবে যে খালগুলো দখল করেছেন সেগুলো মুক্ত করে দিন। যারা অবৈধ নদী-খাল দখল করছে তাদের উচ্ছেদে কোন বৈধ নোটিশ দেওয়া হবে না। ঢাকার পরিবেশ রক্ষায় প্রতিটি শিশুর জন্মনিবন্ধনের সাথে একটি করে গাছ প্রদান করা হবে।

সভাপতির বক্তব্যে সুলতানা কামাল বলেন, নদী বাঁচানো মানে নিজেকেই বাঁচানো। আমরা সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করতে চাই না। অংশগ্রহণ করতে চাই, অংশীদারিত্ব চাই। সংবিধান মেনে আমরা যে কাজ করি সেগুলোতে আমরা যেন বাধার শিকার না হই।

নদী উৎসবের সম্মানিত অতিথি তাকসিম এ খান বলেন, নদী বিষয়ক মাস্টারপ্ল্যান যাতে প্রকল্পভিত্তিক না হয়। এটি সমাধানভিত্তিক পন্থায় পরিচালিত হতে হবে। লন্ডন এর টেমস নদীকে বাঁচাতে ৫৫ বছর লেগেছে। আমরা চেষ্টা করলে আমাদের বুড়িগঙ্গাকেও বাঁচাতে পারবো।

ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এর সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে পদক্ষেপ গ্রহণে বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য দিয়ে আমরা সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। সরকারের নদী বিষয়ক পরিকল্পনার সাথে নদী পাড়ের মানুষদেরকে অনুর্ভূক্ত করতে হবে। এসময় তিনি শ্যামপুর ডায়িং এর বর্জ্য পরিশোধনের জন্য ইটিপি স্থাপনের জন্য জায়গা বরাদ্দের উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান।

বিশেয় অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, পরিবেশ আন্দোলনের কারণেই মানুষ এখন বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে, নদী বাঁচলে মানুষ বাঁচবে।

বিশের অতিথির বক্তব্যে ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব হুমায়ুন কবির বলেন, আমাদের আগে দায়িত্ববান হতে হবে। সাংসদরা নদী দখলের সাথে সম্পৃক্ত আছেন। নদীগুলোকে রক্ষা করতে পারলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অনেক দুর অগ্রগতি হবে। এমন কিছু করা যাবে না যাতে পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের গালি দেয়।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ বলেন, সিটি কর্পোরেশন খাল-নাল রক্ষা করতে এগিয়ে এলে আমরা স্থানীয়ভাবে সহায়তা করবো।

অধিবেশনে আরো বক্তব্য রাখেন ইউএসএআইডি বাংলাদেশ এর প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট-সিভিল সোসাইটি অ্যাডভাইজার সুমনা বিনতে মাসুদ এবং কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনাল এর প্রোমোটিং অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড রাইটস (পার) প্রকল্পের ডেপুটি চিফ অব পার্টি শাহিদ হোসেন। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে ‘বুড়িগঙ্গা উৎসবের কথা: একটি জীবন্ত সত্ত্বা’ শীর্ষক এক বিষয়ভিত্তিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য এই অধিবেশনে আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবি সমিতি (বেলা)’র নির্বাহী প্রধান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় তিনি বলেন, উন্নয়ন দিয়ে নদী বানানো সম্ভব নয়, কিন্তু নদীর মাধ্যমে সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব।

এরপর দুপুর ১২টায় ‘বুড়িগঙ্গার গল্প’ শীর্ষক এক বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ এর পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার এর সভাপতিত্বে এবং সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই অধিবেশনে আলোচনায় অংশ নেন বসিলা হাই স্কুল এর প্রধান শিক্ষক মোঃ সোলায়মান, বছিলা হাই স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন, মৎস্যজীবী সনজিৎ রাজবংশী, নৌকাচালক গেদু মাঝি, বুড়িগঙ্গা পাড়ের শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার চৈতি প্রমুখ।

বিষয়ভিত্তিক আলোচনা অধিবেশন শেষে দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। যুব বাপা কর্মসূচির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট রাওমান স্মিতা’র সঞ্চালনায় এই পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন সিলেট অঞ্চলের আদিবাসী চা শ্রমিকদের সংগঠন প্রতীক থিয়েটার। এসময় বক্তব্য প্রদান করেন বাপা এবং বেন এর প্রতিষ্ঠাতা কামরুল আহসান খান, বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলন এর সমন্বয়ক মিহির বিশ্বাস, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান ইবনুল সায়িদ রানা, রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ, বনলতা নারী উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ইশরাত জাহান লতা, স্থানীয় সমাজকর্মী লাট জামাল হোসেন জামিল প্রমুখ।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে অনুষ্ঠিত হয় সমাপনী অধিবেশন। ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এর সমন্বয়ক শরীফ জামিল এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. মোঃ নূরুল ইসলাম। এ সময় ডিঙ্গি নৌকা প্রতিযোগিতা এবং শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়। এ সময় বক্তব্য প্রদান করেন পশুর রিভারকিপার নূর আলম শেখ, খোয়াই রিভারকিপার তোফাজ্জল সোহেল এবং সুরমা রিভারকিপার আব্দুল করিম কিম।

রাজধানী ঢাকাকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করে একটি বাসযোগ্য নগরী হিসাবে গড়ে তুলতে ইউএসএআইডি, এফসিডিও এবং কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের সহায়তায় ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ এবং স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) কে সাথে নিয়ে কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে একটি দূষণবিরোধী নাগরিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।

বুড়িগঙ্গা নদীর বিভিন্ন রকম সমস্যা চিহ্নিত করে স্থানীয় জনগণকে সাথে নিয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করার লক্ষ্যে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এবং বুড়িগঙ্গা নদী মোর্চা আয়োজিত দিনব্যাপী বুড়িগঙ্গা নদী উৎসব, ২০২১ এর সংবাদ প্রচারের জন্য আপনার গণমাধ্যমের রিপোর্টার, ক্যামেরা ক্রু প্রেরণের জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।

 

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.