আমার অথরিটিতেই খালেদা বাসায়, বাকিটা আইনের ব্যাপার: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আমার অথরিটিতে বাসায় থাকতে দিয়েছি। বাকিটা আইনের ব্যাপার। অমানবিক একজনকে আমি মানবতা দেখিয়ে বাসায় থাকতে দিয়েছি। আমার কাছে আর কত চান।’

বুধবার (১৭ নভেম্বর) বিকালে সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে জানতে চাইলে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মনে হয় এই প্রশ্ন করার জন্য আপনাদের লজ্জা হওয়া দরকার। যারা আমার বাপ-মা, ভাই, আমার ছোট রাসেলকে পর্যন্ত হত্যা করিয়েছে। তারপরও আমরা অমানুষ না। অমানুষ না দেখেই তাকে (খালেদা জিয়া) তার বাসায় থাকার ব্যবস্থাটুকু আমার এক্সিকিউটিভ অথরিটিতে, আমার হাতে যতটুকু আছে, সেটুকু দিয়ে তার বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘গ্রেনেড হামলার পর আমাদের এতজন আহত। ২২ জন মারা গেছে। একদিনও পার্লামেন্টে সেটার ওপর আলোচনা করতে দেয়নি। যে এত বড় অমানবিক—তাকেও আমরা মানবতা দেখিয়েছি।’

লিখিত বক্তব্য শেষে সাংবাদিকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স সফর সম্পর্কে অবহিত করতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। সাংবাদিকরা যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের শাপলা হল থেকে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের প্রতি যে দায়িত্ববোধ, তা নিয়ে আমরা সবসময় সচেতন। করোনাকালে গ্রাম পর্যায়ে কৃষক থেকে শুরু করে কোনও শ্রেণি-পেশার মানুষ নেই যাদের অর্থ দিয়ে সাহায্য করিনি। জিনিসপত্রের দাম যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে, সেই ব্যবস্থা নিয়েছি। উৎপাদন বাড়ানোর ব্যবস্থা নিয়েছি।’

তেলে দাম সম্পর্কিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাজারে তেলের দাম বেড়েছে। আমাদের তেল কিনে আনতে হয়।’

এ সময় সাংবাদিকদের কাছে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন, ‘কত টাকা ভর্তুকি দিতে হয় ডিজেলে? পরে নিজেই উত্তরে বলেন, ‘২৩ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎসহ সব মিলিয়ে ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে থাকি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষকদের জন্য সারের দাম কমিয়েছি। যে সার ৯০ টাকা ছিল তা ১৫-১৬ টাকা করেছি। কৃষিতে প্রতিটি ক্ষেত্রে সহায়তা দিয়েছি। কার্ড করে দিয়েছি। এখন কৃষক ১০ টাকায় অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। যার মাধ্যমে ভর্তুকির টাকা সরাসরি তাদের কাছে যায়।’

তিনি বলেন, করোনার সময় ব্যবসায়ীদের বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছি। সুদের হার কমিয়ে অর্ধেক সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। শ্রমিকরা যাতে বেতন পায় সে ব্যবস্থা করেছি।

অনেক উন্নত দেশ খাদ্যের জন্য হাহাকার করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘লন্ডনের সুপার মার্কেটে সাপ্লাই নেই। খাবার জিনিস পর্যন্ত পাওয়া যায় না। বাংলাদেশে খাদ্যের জন্য হাহাকার নেই।’

‘সবাই টাকা উপার্জন করে, ট্যাক্স কতজন দেয়?’ সাংবাদিকদের প্রতি এমন প্রশ্ন ছুড়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের চাল, ডাল, বাড়ি-গাড়ি সবই আছে। তারপরও ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার দিকে নজর, এটাই বাস্তবতা। সরকারের টাকা আসবে কোথা থেকে? এখন বিদ্যুৎ সবার ঘরে ঘরে। এখানেও ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। কিন্তু উৎপাদন খরচ তুলতে পারছি না।’

প্রধানমন্ত্রী ৩১ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত গ্লাসগো, লন্ডন ও প্যারিস সফর করেন। সফরকালে তিনি কপ-২৬ সম্মেলন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন ২০২১, ইউনেস্কো সদর দফতরে সৃজনশীল অর্থনীতির জন্য ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান, ইউনেস্কোর ৪১তম সাধারণ সম্মেলন, প্যারিস শান্তি ফোরাম, ইউনেস্কোর ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

প্রায় দুই সপ্তাহের সফর শেষে ১৪ নভেম্বর দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী। ওই সফর নিয়েই আজকের এ সংবাদ সম্মেলন।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.