অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো পিছিয়ে রয়েছে: সানেম

কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর দেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। মূলত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার গতি পাওয়ার কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন অনেকটাই আস্থা পাচ্ছে। চলতি বছরের জুন মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বর মাসে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো হারানো ব্যবসা অনেকটাই ফিরে পেয়েছে। তবে এই পুনরুদ্ধারে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো পিছিয়ে রয়েছে।

কোভিড ১৯ ও ব্যবসায়িক আস্থা শীর্ষক এক জরিপে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেম এই জরিপ পরিচালনা করেছে। আজ বুধবার (১০ নভেম্বর) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ সেলিম রায়হান।

অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, ব্যবসায় আস্থা সংক্রান্ত ষষ্ঠ পর্যায়ের এই জরিপ সাম্প্রতিক জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির আগেই করা হয়েছে। তাই জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব নিরূপন করা সম্ভব হয়নি। তবে তাদের আশঙ্কা, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়বে। এতে দরিদ্র জনগোষ্ঠী আরো চাপে পড়বে।

সেলিম রায়হার মনে করেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি না করে প্রণোদনা দেওয়া যেত। দাম না বাড়িয়ে ভর্তুকি দেওয়া হলে তার সুফল সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছাতো। সরকার করোনা মহামারির শুরুতে যেভাবে প্রণোদনা দিয়েছে, এবার জ্বালানির ক্ষেত্রেও তাই করতে পারতো। জরিপের তথ্যানুসারে, সব খাতের পুনরুদ্ধার একই হারে হচ্ছে না। যোগাযোগ, হালকা প্রকৌশল, পর্যটন, টেক্সটাইল, তৈরি পোশাক, তথ্য প্রযুক্তির মতো খাতগুলো অন্যদের চেয়ে ভালো করছে। এমনকি নিকট ভবিষ্যতে তারা আরও ভালো করার আশা প্রকাশ করেছে। আর সামগ্রিকভাবে ছোট প্রতিষ্ঠান বড় প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছিল, তাদের পুনরুদ্ধারের হার ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ। সেপ্টেম্বর মাসে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ দশমিক ৪ শতাংশ। মাঝারি ব্যবসার ক্ষেত্রে তা ছিল যথাক্রমে ৪০ দশমিক ৫ ও ৫৮ দশমিক ২ শতাংশ এবং বড় ব্যবসার ক্ষেত্রে তা ৪৭ দশমিক ১ ও ৬৫ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কেমন হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২১ শতাংশ বলেছে পুনরুদ্ধার শক্তিশালী হচ্ছে, মধ্যম মানের হচ্ছে বলে মত দিয়েছে ৫২ শতাংশ আর দুর্বল হচ্ছে জানিয়েছে ২৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান।

জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে যেসব প্রতিষ্ঠান আগে প্রণোদনা পায়নি, তাদের মধ্যে ২৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে প্রনোদনা প্যাকেজ পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে এদের মাত্র ২ শতাংশ প্রণোদনা পেয়েছে। যারা প্রণোদনা পেয়েছে, তারা প্রণোদনা না পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ে এগিয়ে আছে। আবার প্রণোদনা পাওয়ার ক্ষেত্রে সিংহভাগ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, তাদের কাছ থেকে ঘুষ চাওয়া হয়েছে। অংশগ্রহণকারী ৭১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান আর্থিক ক্ষতি সামাল দিতে ব্যক্তিগত সঞ্চয়ের ওপর নির্ভর করেছে, ৪১ শতাংশ ধার নিয়েছে, ১৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান প্রণোদনা প্যাকেজস পেয়েছে, ১৪ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করেছে, ১৩ শতাংশ বেতন কমিয়েছে।

দেশের আটটি বিভাগের ৩৭টি জেলার মোট ৫০০টি ক্ষুদ্র্র, ছোট, মাঝারি ও বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর এই জরিপ করা হয়েছে। করোনা মহামারির সময়ে বাংলাদেশের শিল্প ও সেবা খাতের পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পেতে গত বছরের জুলাই থেকে সানেম ধারাবাহিকভাবে তিন মাস অন্তর অন্তর জরিপ পরিচালনা করছে।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.