‘পুঁজিবাজারের পতন ঠেকাতে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে’

পুঁজিবাজারে প্রতিদিনই কমছে সূচক। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে গত ৭ কার্যদিবসের মধ্যে মাত্র একদিন সুচক ৮ পয়েন্ট বাড়ে। এ ছাড়া বাকি ছয় কার্যদিবসে সুচক কমেছে ২৬৩ পয়েন্ট। পুঁজিবাজারের এই দরপতন এখন আর সহনশীল পর্যায়ে নেই বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকেরা। তারা বলছেন, পুঁজিবাজারের দরপতন ঠেকাতে ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এখনই আলোচনায় বসার পরামর্শ দেন তারা।

এই প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন অর্থসূচককে বলেন, প্রতিদিন যেভাবে সূচক পড়ছে এত পড়ার কোনো কারণ দেখি না। মূলত বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নীতিগত বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। যার কারণে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিক্রির প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। এটা এই পতনের অন্যতম একটি কারণ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে যত দ্রুত সম্ভব দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আলোচনায় বসতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি দুই পক্ষকে আলোচনা করে নীতিগত যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে তার সুরাহা করতে হবে। তাহলে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো আবার কেনার দিকে ঝুঁকবে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, নভেম্বর মাসের আজ নবম দিন। সাপ্তাহিক ছুটি বাদ দিলে গতকাল সোমবার পর্যন্ত শেয়ারবাজারে লেনদেন হয়েছে ছয় দিন। এর মধ্যে এক দিন ৮ পয়েন্ট বৃদ্ধির ব্যতিক্রম ছাড়া প্রতিদিনই মূল্যসূচক কমেছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আজ সোমবার ৫৬ পয়েন্ট কমেছে। ছয় দিনের লেনদেনে সার্বিকভাবে সূচক কমেছে ২৬১ পয়েন্ট। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই ধরনের পরিস্থিতি হয়েছে। সিএসইর প্রধান মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২১০ পয়েন্ট।

পতনের ধারা অবশ্য আগের মাস অক্টোবরেই শুরু হয়। এক মাস আগে গত ৩ অক্টোবরও ডিএসইএক্স ছিল ৭ হাজার ৩৫৬ পয়েন্ট। ওই দিন ডিএসইতে লেনদেন হয় প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। পরের এক মাসে ডিএসইএক্স ৫৫৫ পয়েন্ট হারিয়েছে। ইতিমধ্যে ডিএসইর লেনদেন কমে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে।

জানা গেছে, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ওয়ান ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন পরিবর্তন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির মধ্যে সম্প্রতি মত পার্থক্য দেখা দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারি ব্যাংকটির আর্থিক প্রতিবেদন পরিবর্তনের নির্দেশ দিলে এর সরাসরি বিরোধিতা করে বিএসইসি। ওয়ান ব্যাংক বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আয়োজন ও লভ্যাংশ বিতরণের পরে তাদের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন পরিবর্তনের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু বেসরকারি ব্যাংকটি বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে কোনো পরিবর্তন আনেনি। এ কারণে ওয়ান ব্যাংককে জরিমানা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্যদিকে সব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর বিএসইসি প্রকৃত আর্থিক তথ্য প্রকাশের নির্দেশ দেয়। এ রকম সিদ্ধান্ত শুরুতেই দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে দুই সংস্থার সম্পর্ক আর স্বাভাবিক হয়নি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম অর্থসূচককে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক পুঁজিবাজারের উন্নয়নে অত্যন্ত আন্তরিক। এই বাজার ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি ঘনিষ্টভাবে কাজ করছে। কোথাও কোনো সমস্যা থাকলে আলোচনার মাধ্যমে তার সমাধান করা হবে।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম দেশের বাইরে থাকায় সংস্থাটির কোনো বক্তব্য জানা যায়নি।

অর্থসূচক/মৃত্তিকা সাহা/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.