পরীমণির রিমান্ডের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে রিট

চিত্রনায়িকা পরীমণিকে বারবার রিমান্ডে নেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে। রোববার (২৯ আগস্ট) সকালে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষে অ্যাডভোকেট সৈয়দা নাসরিন এ আবেদন করেন।

রিটে বলা হয়, আসামিকে আদালতে হাজির করার ক্ষেত্রে ও রিমান্ডে নেওয়ার ক্ষেত্রে করণীয় ঠিক করে সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশনা রয়েছে, সে অনুযায়ী পরীমণিকে মাদকের একটি মামলায় বারবার রিমান্ডে নেওয়ার ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মানা হয়নি। এ বিষয়টি নিয়ে রিট করা হয়েছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানী থানায় করা মাদক মামলায় গ্রেপ্তার চিত্রনায়িকা পরীমণির নিম্ন আদালতে জামিন আবেদন অবিলম্বে শুনানি করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিল হাইকোর্ট। এ ছাড়া আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর নিম্ন আদালত জামিন শুনানির যে দিন নির্ধারণ করেছিলেন, তা কেন বাতিল করা হবে না মর্মে রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে।

বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। পরীমণির আইনজীবী মজিবুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘আগামী ১ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের দেওয়া রুলের ওপর শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত এবং ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।’

এর আগে গতকাল বুধবার জামিন শুনানির জন্য নিম্ন আদালত ১৩ সেপ্টেম্বর যে দিন ধার্য করেছিলেন, তা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন পরীমণি। আদালতে পরীমণির পক্ষে আছেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না ও অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে আছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবু এহিয়া দুলাল।

এর আগে গতকাল বুধবার ১৩ সেপ্টেম্বর জামিন শুনানির দিন ধার্য করায় আবেদনে আদালতের সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক দাবি করে হাইকোর্টে আবেদন করেন পরীমণি। আবেদনে পরীমণির জামিনের আর্জিও জানানো হয়।

গত ২২ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে পরীমণির জামিন আবেদন করেন আইনজীবী মজিবুর রহমান। পরে আদালত জামিন বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন। ২১ আগস্ট রাজধানীর বনানী থানায় দায়ের করা মাদক মামলায় চিত্রনায়িকা পরী মণিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

তৃতীয় দফায় এক দিনের রিমান্ড শেষে গত শনিবার পরীমণিকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এরপর তাঁকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক কাজী গোলাম মোস্তফা তাঁকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।

গত ১৯ আগস্ট পরীমণির একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলাম। এর আগে ১৩ আগস্ট পরী মণি ও তাঁর সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এর আগে গত ১০ আগস্ট পরীমণি ও আশরাফুল ইসলাম দীপুর দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস। এ ছাড়া গত ৫ আগস্ট পরীমণি ও দীপুর চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদ।

গত ৪ আগস্ট রাতে প্রায় চার ঘণ্টার অভিযান শেষে বনানীর বাসা থেকে পরীমণি ও তাঁর সহযোগী দীপুকে আটক করে র‍্যাব। এ সময় পরীমণির বাসা থেকে বিভিন্ন মাদক জব্দ করা হয়। পরদিন ৫ আগস্ট র‍্যাব-১ বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পরী মণি ও তাঁর সহযোগীর বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করে।

এদিকে পরীমণির তিন দফায় জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে নাগরিক সমাজসহ নানা মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হলে এ বিষয়ে সিআইডির প্রধান ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রথমত অভিযুক্ত পরীমনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা ও তার বক্তব্য শোনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আসলে অভিযুক্ত কী বলে সেটা আগে জানতে চেয়েছে সিআইডি। তার কাছে মাদক কীভাবে আসল, কারা দিলো, কী উপায়ে আসলো। এসব তথ্য জানার পর আমরা কিন্তু আর পরীমণিকে রিমান্ড চাইনি। কিন্তু তদন্ত ও যাচাই করতে গিয়ে দেখি পরীমণির দেয়া সেসব তথ্যের অনেক কিছুই মিথ্যা বা ভুল। তখন আমরা আদালতে আবারো রিমান্ড চেয়ে অনুরোধ করি। সিআইডি একটি বিশেষায়িত ইউনিট। আমরা কখনো দরকার না হলে কোনো আসামির রিমান্ড চাই না।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.