চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা নাইট কোচ চাঁপাই ট্রাভেলস, মিন্টু এন্টারপ্রাইজসহ অন্তত ৩৩টি পরিবহনের গতিরোধ করে ডাকাতি করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় ডাকাতেরা লাঠি দিয়ে ঢাকা কোচের সামনের অংশ ভাঙচুর করে ভেতরে ঢুকে যাত্রীদের পিটিয়ে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার ছিনতাই করে।
সোমবার (২৩ আগস্ট) রাতে উপজেলার শুনসান নীরব এলাকা পেয়ে ফলিমারির বিলে এ ঘটনা ঘটায় তারা। বাস ছাড়াও কয়েকটি মোটরসাইকেলে ডাকাতি করা হয়েছে। মোটরসাইকেল আরোহীরা তাদের টাকা-পয়সা না দিতে চাইলে, ডাকতরা তাদের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে।
ভুক্তভোগী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের মতো ঢাকাগামী বাসগুলো ভোলাহাট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ভোলাহাট-শিবগঞ্জ সড়কে ছেড়ে যায়। রাত ৮টার দিকে ভোলাহাট উপজেলার সোনাজল নামক স্থানে ১৫-১৬ জন মুখোশ পরা ডাকাত হাতে হাসুয়া ও লাঠি হাতে হামলা চালায়। গণপরিবহন ছাড়াও ঢাকাগামী আমভর্তি ট্রাকের হেলপার-ড্রাইভারকে মারধর ও ছিনতাই হয়।
ভোলাহাট এলাকার বাসিন্দা সাবিরুল ইসলাম জানান, আমার জরুরি কাজের জন্য ঢাকায় যাচ্ছিলাম। বাসের মধ্যে একটি সিটে বসে ছিলাম। হঠাৎ গাড়ি চালক মাঝ পথেই গাড়ি থামিয়ে দেয়। আমি ভাবলাম হয়তো গাড়ির ইঞ্জিনে কোন ত্রুটি হয়েছে। আমি দেখলাম বাইরে থেকে কিছু লোকে গাড়ির হেলপারকে গেট খুলতে বললো। সে অপরগতা প্রকাশ করলে তাকে সাথে সাথে দুর্বৃত্তরা লাঠি দিয়ে আঘাত করে। বাধ্য হয়ে গাড়ির দরজা খুলে দেয় ওই হেলপার।
সাহেলা নামের এক গৃহিণী জানান, আমার কাছে একটা ৮ হাজার টাকা দামের নতুন অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ছিল; আমার হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। আমার গলায় একটা স্বর্ণের মালা ছিল; জোর করে গলা থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। এছাড়াও যারা চিৎকার করছিল তাদেরকে বেদম পিটিয়েছে তারা।
ঢাকাগামী কোচ জমজম ট্রাভেলসের হেলপার আরিফ জানান, ডাকাত দলের টের পেয়ে গাড়ির দরজা আটকে দেওয়ার আগেই গাড়িতে ঢুকে আমাকে মারপিট করে। পরে গাড়ীর যাত্রীদের পিটিয়ে টাকা-গয়না ছিনতাই করে। এ সময় নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানি করা হয়েছে।
সুপারভাইজার আলমগীর হোসেন বলেন, ঘটনাস্থলে আসার আগেই ডাকাত দল কয়েকটি ট্রাক-পিকাপ ও মোটরসাইকেলে ডাকাতি চালিয়ে যাচ্ছিল। আমাদের পালিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। গাড়ী দেখে ডাকাত দল হেলপারকে পিটিয়ে দ্রুত গাড়ীর ভেতর ঢুকে যাত্রীদের টাকা ও স্বর্ণালংকার ছিনতাই করে। প্রথমে সাথী এন্টারপ্রাইজ পরে আমাদের জমজম ও এরপর চাঁপাই ট্রাভেলসেও ডাকাতি করে।
ঢাকা কোচের টিকিট মাস্টার মো. নওশাদ বলেন, তিনটি ঢাকা কোচে প্রায় ৬০-৭০ জন যাত্রী ছিল। এদের পিটিয়ে প্রায় সবার নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন ছিনতাই করেছে। এছাড়াও একাধিক ট্রাক, পিকাপ ও মোটরসাইকেল আরোহীর টাকা-মোবাইল ছিনতাই করেছে।
ভোলাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. আজহারুল ইসলাম জানায়, ডাকাতির ঘটনায় পাঁচজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। আহতরা উপজেলার খালেআলমপুর গ্রামের সাথী এন্টারপ্রাইজের চালক মো. মানোয়ার, যাত্রী রাজিয়া, বীরশ্বরপুরে ওবাইদুল, মো. রবিউল ও ট্রাক ড্রাইভার মো. কাঞ্চন।
ডাকাতির শিকার হওয়া মানুষেরা পুলিশকে দোষারোপ করে বলছেন, এ ঘটনাটি পুলিশের অবহেলার কারণে হয়েছে। তাদের এখানে ডিউটিতে থাকার কথা ছিল। কিন্তু তারা এসব এলাকাতে ডিউটিতে ছিল না। যদি পুলিশ থাকতো তাহলে এ ঘটনা ঘটতো না। আমরা পুলিশের কাছে ক্ষতিপূরণ চাই।
এ ঘটনায় ভোলাহাট থানার ওসি মাহবুব জানান, আমি খবর পাওয়ার সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে গিয়েছি। ডাকাতরা লুটপাট করে মুহুর্তের মধ্যেই সটকে পড়ে। তাদের গ্রেপ্তার ও মালামাল উদ্ধার করতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। ওই ডাকদের হামলার আঘাতে যারা আহত হয়েছেন, তাদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারা সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
অর্থসূচক/এএইচআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.