ইভ্যালির সঙ্গে লেনদেন বন্ধ করল বিকাশ

বহুল আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি, আলেশা মার্টসহ ১০টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ।
এর আগে ব্র্যাক ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক ও এমটিবিসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক তাদের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে আলোচিত প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য কেনায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

বিকাশের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ই-অরেঞ্জ, ধামাকা শপিং, সিরাজগঞ্জ শপিং, আলাদিনের প্রদীপ, বুম বুম, কিউকম, আদিয়ান মার্ট ও নিডস ডটকম বিডি।

বিকাশের কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম শনিবার রাতে গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, ‘ই-কমার্সের ক্ষেত্রে রেগুলেটর প্রদত্ত পেমেন্টবিষয়ক নীতিমালাগুলো কার্যকর করতে আমরা নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এ সময়ে গ্রাহকদের স্বার্থেই কিছু মার্চেন্টের জন্য বিকাশের পেমেন্ট গেটওয়ে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। রেগুলেটরের নীতিমালা অনুযায়ী পেমেন্ট সিস্টেম কার্যকর হলে বিকাশ পেমেন্ট গেটওয়ে আবারও চালু করা হবে।’

মূলত ইভ্যালিকেন্দ্রিক জটিলতা থেকে আলোচিত প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর এই নিষেধাজ্ঞা আসে। সাধারণ ক্রেতাদের প্রলুব্ধ করতে শুরু থেকেই ইভ্যালি অস্বাভাবিক ছাড়ে বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি শুরু করে। এভাবে পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে আগ্রহী ক্রেতাদের কাছ থেকে আগাম মূল্য নেওয়া হয়। একশ জনের কাছ থেকে আগাম মূল্য নিয়ে দুয়েকজনকে পণ্য সরবরাহ করলেও বাকীদের ঝুলিয়ে রাখা হয় মাসের পর মাস। একইভাবে ইভ্যালিতে পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানেও বাকী রাখা হতে থাকে। তালিকায় থাকা বাকী প্রতিষ্ঠানগুলোও ইভ্যালির মডেল অনুসরণ করে ব্যবসা পরিচালনা করছে। এতে একদিকে এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে ক্রেতাদের কোটি কোটি টাকা জমা হচ্ছে। অন্যদিকে পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে জমছে দেনার পাহাড়। তাতে ক্রেতা এবং পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকি বাড়ছে।
সম্প্রতি ইভ্যালি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা এক প্রতিবেদনে ওই ঝুঁকির চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুসারে, ইভ্যালির মোট দায় ৪০৭ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম নিয়েছে ২১৪ কোটি টাকা, আর মার্চেন্টদের কাছ থেকে বাকিতে পণ্য নিয়েছে ১৯০ কোটি টাকার। স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে অন্তত ৪০৪ কোটি টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা। কিন্তু সম্পদ আছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকার।

এ ছাড়া গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালির নেয়া অগ্রিম ৩৩৯ কোটি টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না বলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

এমন অবস্থায় কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে। অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।
বকেয়া পরিশোধ না করায় ইভ্যালির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ বেশ কিছু পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভাউচারের বিপরীতে পাওনা অর্থ পরিশোধ না করায় তারা আর পণ্য দিচ্ছে না। সম্প্রতি ইভ্যালির গিফট ভাউচারে কেনাকাটার নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ইভ্যালিসহ ১০ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ।

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.