আমি আমার আম্মুকে নিতে এসেছি…

নয়নের বয়স আর কত হবে? বড়জোর পাঁচ থেকে ছয়। তার নানির হিসাব অনুযায়ী সাত। নিষ্ঠুর পৃথিবীর বাস্তবতা এখনও ছুঁতে পারেনি এ শিশুকে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সেজান জুস কারাখানায় অগ্নিকাণ্ডে মা নাজমা বেগমের মৃত্যু তাকে স্পর্শ করেনি। সেজন্যই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে এখনও শনাক্ত না হওয়া অবলীলায় বলে উঠলো ‘আম্মুকে নিতে এসেছি’।

শনিবার (১০ জুলাই) সকালে নয়ন তার বাবা তৌহিদুর ও নানি কল্পনা বেগমের হাত ধরে ঘুরে ফিরছিল মর্গের এদিক-ওদিক। এরই ফাঁকে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল তাকে।

দৃষ্টি শূন্য চাহনিতে নয়ন বলে, ‘আমার মা নেই। সকালে এখানে এসে মাকে দেখিনি। আমি আমার আম্মুকে নিতে এসেছি।’

একটু থামলো নয়ন। আশপাশের অনেকের দিকে তাকালো। অস্পষ্ট কণ্ঠে বলে উঠলো, আম্মুকে দেখতে ইচ্ছা করছে।

নয়নের এ বাক্য আর্দ্র করে ফেললো উপস্থিত অনেককেই। এমনকি পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে আসা গণমাধ্যমকর্মীরাও কিছুটা থমকে গেল।

নয়ন জানালো, তার মা তাকে খাইয়ে দিতো। এখন তার নানু খাইয়ে দেয়।

নয়নের পাশে দাঁড়ানো তার নানি কল্পনা বেগম বলেন, আমরা গরিব মানুষরে বাজান। মাইয়াটা ছেলেটারে আমার কাছে রেখে চাকরিতে যাইতো। কাজের ফাঁকে ফোন করে বলতো ছেলেটারে দেখে রাইখো।

তিনি বলেন, আমাদের গ্রামের বাড়ি বগুড়া। পাঁচ বছর আগে এ ফ্যাক্টরিতে কাজ নিয়েছিল নাজমা। পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা বেতন পাইতো। ওভারটাইম করে পাইতো আরও দুই হাজার টাকা। গত মাসের বেতন এখনও পায়নি।

আগুন লাগার পর কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে কল্পনা বেগম বলেন, আগুন লাগার পর আর কথা হয়নি। আজকে রক্ত দিছি। জানিনা কবে মাইয়াটার লাশ হাতে পাবো।

এদিকে শনিবার সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের স্বজনরা ভিড় জমাচ্ছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গের সামনে। এ মুহূর্তে সেখানে ৪৮টি মরদেহ রয়েছে। মরদেহগুলোর ডিএনএ টেস্ট চলছে। এরপর ঢামেকের ইমারজেন্সি মর্গে আটটি মরদেহ, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ১৫টি ও বাকিগুলো ঢামেকের ফরেনসিক মর্গে রাখা হবে।

এদিকে প্রায় ৩০ দিন সময় লাগবে মরদেহের ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল আসতে। মরদেহের মধ্যে সাতজন পুরুষ ও সাতজন নারী চিহ্নিত হয়েছে। বাকিগুলো এখনও অজ্ঞাত বা বোঝা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মশিউর রহমান।

এছাড়া এদিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩০টি মরদেহের বিপরীতে ৪২ জনের স্বজন নমুনা দিয়েছে বলে জানিয়েছে ঢামেকে দায়িত্বরত পুলিশের সিআইডি বিভাগ।

গত বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রূপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় অবস্থিত সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ২৯ ঘণ্টা পর ডেমরা, কাঞ্চনসহ ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ সম্পন্ন করে। কারখানা থেকে উদ্ধার করা হয় ৫২ জনের মরদেহ। আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। এবং নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত অর্ধশতাধিক।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.