এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি আগুন, খোঁজ মেলেনি অনেক শ্রমিকের

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১৪ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এতে তিনজনের নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেলেও এ সংখ্যা আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।

অগ্নিকাণ্ডে ৫০ জনের আহত হওয়ার কথা জানানো হলেও আজ শুক্রবার (০৯ জুলাই) ভোর চারটা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে থাকা অন্তত ১৮ জন শ্রমিকের স্বজনরা তাদের নিখোঁজের বিষয়ে জানান।

তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এসব শ্রমিকের বেশির ভাগের বয়সই ১৮ বছরের নিচে। ঘটনাস্থলে আসা স্বজনদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী নিখোঁজ শ্রমিকেরা হলেন- শান্তা (১২), মুন্না (১৪), শাহানা (১৫), নাজমুল (১৫), রিপন (১৭), রাহিমা (৩৫), অমৃতা (১৯), তাকিয়া (১৪), হিমু (১৬), সুফিয়া (৩০), আমেনা (১৭), মাহমুদ (১৫), তাসলিমা (১৭), কম্পা (১৬), শেফালি (২০), ইসমাইল (১৮)। নিখোঁজ দুজন নাইম ও মোহাম্মদ আলীর বয়স সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এদিকে কারখানার সামনে ভিড় করা শ্রমিক ও নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনেরা উদ্ধার কাজে ধীরগতির অভিযোগ এনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। এ সময় তারা কারখানার সামনে থাকা একটি বেসরকারি ব্যাংকের এটিএম বুথেও ভাঙচুর চালান।

বৃহস্পতিবার রাত ২টা পর্যন্ত অন্তত ২০ জন নিখোঁজ শ্রমিকের সন্ধান চেয়ে পুলিশের কাছে স্বজনেরা এসেছেন বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (গ সার্কেল) আবির হোসেন। তিনি বলেন, নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনেরা ভিড় করছেন। কিন্তু আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসায় কোনো খোঁজ দেওয়া যাচ্ছে না। বিক্ষুব্ধ স্বজনেরা গাড়ি ও এটিএম বুথ ভাঙচুরের ১৫ মিনিটের মধ্যেই তাদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত কারখানার সামনে পাওয়া এসব শ্রমিকের তালিকা ছাড়াও আরও অনেকেই নিখোঁজ আছেন বলে জানা গেছে। কারখানাটিতে অগ্নিকাণ্ডের পরপর ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটারের কম দূরত্বের ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত শ্রমিকদের নিয়ে যাওয়া হয়।

সকাল ৮টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এ ঘটনায় ৩২ জনকে উদ্ধার করে কর্ণগোপ ইউএসবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে নিয়ে আসার পর স্বপ্না রানী (৪৪) ও মিনা আক্তার (৩৪) নামের দুই শ্রমিককে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। গুরুতর আহত ১০ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে মোরসালিন (২৮) নামের আরও এক শ্রমিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মারা যান।

রাতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল আরেফীন জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ১৮টি ইউনিট একসঙ্গে কাজ করছে।

কারখানায় আটকা পড়া অন্তত ১২ জন শ্রমিককে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেছেন বলে জানিয়েছেন রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নুসরাত জাহান।

শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কর্ণগোপ এলাকায় সেজান জুস কারখানায় প্রায় সাত হাজার শ্রমিক কাজ করেন। সাত তলা ভবনে থাকা কারখানাটির নিচ তলার একটি ফ্লোরের কার্টন থেকে হঠাৎ আগুনের সূত্রপাত ঘটে। এক পর্যায়ে আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় কালো ধোয়ায় কারখানাটি অন্ধকার হয়ে যায়। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা ছোটাছুটি করতে শুরু করে। কেউ কেউ ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। আবার কেউ কেউ ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়তে শুরু করেন। এ সময় ঘটনাস্থলেই স্বপ্না ও মিনা নামে দুই নারী নিহত হন। পরে মোরসালিন লাফ দিয়ে আহত হলে তাকে ঢাকা মেডিক্যালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.