অবশেষে কারাদণ্ড ভোগ করতে পুলিশে আত্মসমর্পণ করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা (৭৯)। জুমা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশটির জনগণ নতুন এক ইতিহাসের সাক্ষী হলো। কারণ এর আগে দেশটি কোনো সাবেক প্রেসিডেন্টের কারাভোগ দেখেনি।
স্থানীয় সময় বুধবার (০৭ জুলাই) রাতে দেশটির কোয়া-জুলু নাটাল প্রদেশে নিজের বাসভবনের কাছেই একটি কারাগারে এ দণ্ড ভোগ করতে যান তিনি। আজ বৃহস্পতিবার (০৮ জুলাই) বিবিসিসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এ খবর জানিয়েছে।
এর আগে জ্যাকব জুমাকে এ দিন রাতের মধ্যে আত্মসমর্পণের আল্টিমেটাম দেওয়া হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।
ক্ষমতায় থাকতেই জ্যাকব জুমার নামে দুর্নীতি অভিযোগ ওঠেছিলো। এই অভিযোগ তদন্ত চলছিলো। তা তদন্ত করছিলেন দেশটির উপ-প্রধান বিচারপতি রেমন্ড জোনডো। পরে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তদন্তের জন্য জুমাকে তলব করা হয়েছিলো। কিন্তু ওই তলবে তিনি আদালতে হাজির হননি। এজন্য আদালত অবমাননার দায়ে এ দণ্ড দেওয়া হলো তাকে।
জুমার মতে, চলমান মহামারি করোনার মধ্যে তিনি কারাগারে গেলে তা তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে। তিনি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার বলে দাবি করে আসছেন জ্যাকব জুমা।
চলতি বছরের ২৯ জুন আদালত অবমাননার দায়ে জুমার ১৫ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর থেকে জুমা গ্রেফতার ঠেকাতে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিচ্ছিলেন। অবশেষে বুধবার রাতে তিনি নিজেই পুলিশের কাছে ধরা দেন।
পদত্যাগের মধ্য দিয়ে ২০১৮ সালে তার প্রায় ৯ বছরের শাসনামলের অবসান ঘটে। জুমার বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, তিনি রাষ্ট্রীয় অর্থ লোপাট করেছেন এবং ব্যবসায়ীদের রাজনীতিতে নাক গলানোর সুযোগ করে দিয়েছেন। বিশেষ করে জুমার আশকারাতেই ভারতীয় বংশোদ্ভূত ‘গুপ্ত পরিবার’ নামে একটি সুপরিচিত ব্যবসায়ী পরিবার রাজনীতিতে বেপরোয়া হস্তক্ষেপ করেছে। প্রসঙ্গত, ১৯৯৩ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুরের তিন ভাই অজয় গুপ্ত, অতুল গুপ্ত ও রাজেশ ওরফে টনি গুপ্ত দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যবসা শুরু করেন। দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনীতিকদের সঙ্গে পরিবারটির ঘনিষ্ঠতা সবার সামনে আসে ২০১৩ সালে।
তবে জ্যাকব জুমা বরাবরই বলে আসছেন, বিদেশি কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা এক দশক ধরেই তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র করছিল। গুপ্ত পরিবারের হাতে তিনি দেশ তুলে দিয়েছেন, এমন সব অভিযোগই মিথ্যা। তার একটি ভাষ্য ছিল, ‘আমি কি জোহানেসবার্গকে নিলামে তুলেছি?’
জ্যাকব জুমা সব অভিযোগ অস্বীকার করলেও গুপ্ত পরিবারের সঙ্গে তার পরিবারের সম্পর্ক কখনো অস্বীকার করেননি। তিন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভাইদের এ পরিবারের সঙ্গে জুমা পরিবারের সম্পর্ক এতটাই গভীর ছিল যে, একসময় দুটি পরিবারকে একসঙ্গে ‘জুপ্তা’ বলা হতো।
গুপ্ত পরিবারের মালিকানাধীন বিভিন্ন কোম্পানি জুমার শাসনামলে সরকারি বড় বড় প্রকল্পের কাজ পেত। এ ক্ষেত্রে তারা বলা যায়, একচ্ছত্র ছিল। এমনকি তাদের প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে জ্যাকব জুমার ছেলে দুদুজানেকেও নিয়োগ দিয়েছিল তারা। জুমার বিরুদ্ধে অভিযোগ, এই পরিবারের সঙ্গে তিনি এমনভাবে জড়িয়ে ছিলেন যে অনেক সময় তারাই বলে দিত রাষ্ট্রের কোন সিদ্ধান্ত কীভাবে নিতে হবে। আর এই নির্দেশনা অমান্য করলে সরকারি কর্মকর্তাদের পদচ্যুতিও ঘটত।
অর্থসূচক/কেএসআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.