পিরোজপুরে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুইজনকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে আজ সংক্ষিপ্ত রায় দিয়েছেন আদালত, দুই সপ্তাহ পর এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিস্তারিত থাকবে বলেও জানিয়েছেন আদালত।
খালাস প্রাপ্ত দুজন হলেন- নিহত ফাতিমার মামাতো ভাই উপজেলার বুখাইতলা বান্ধবপাড়া গ্রামের মেহেদী হাসান ওরফে স্বপন (২২) ও একই গ্রামের সুমন জমাদ্দার (২০)।
আপিল এবং ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে আজ বুধবার (৩০ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি এ এসএম আব্দুল মবিনের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এই রায় দেন।
আদালতে আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান।
পরে আসামিদের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, পিরোজপুরের আদালত এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। উচ্চ আদালতে এটা প্রমাণিত হয়েছে। এ কারণে আসামিদের খালাস দিয়েছেন।
এ মামলায় ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. গোলাম কিবরিয়া এ দুজনকে ফাঁসির আদেশ দেন। এ মামলায় মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে আসে। একই সঙ্গে আসামিরাও আপিল দায়ের করেন। আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে আজ আদালত এ রায় দেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার ঝাটিবুনিয়া গ্রামের ফুলমিয়ার মেয়ে ৯ বছর বয়সী ফাতেমা আক্তার ইতি উপজেলার বুখাইতলা বান্ধবপাড়া গ্রামে তার নানা মো. আব্দুর রব মাস্টারের বাড়িতে থেকে স্থানীয় হাতেম আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেণিতে পড়ত। ২০১৪ সালের ৫ অক্টোবর সকালে ইতি তার নানার একটি গরু স্কুল মাঠে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যায়। দুপুর গড়িয়ে গেলেও ইতি ঘরে ফিরে না আসায় নানা বাড়ির লোকজন বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। পর দিন দুপুরে প্রতিবেশী শাহজাহান জমাদ্দারের বাগানে বিবস্ত্র অবস্থায় ওড়না পেঁচানো ক্ষতবিক্ষত মরদেহ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পিরোজপুর জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ননী গোপাল রায় তার রিপোর্টে উল্লেখ করেন, ইতিকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। পরে ইতির বাবা ফুল মিয়া ৬ অক্টোবর একটি মামলা করেন।
তদন্ত শেষ করে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি এ দুই আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। ৭ এপ্রিল তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। আসামি সুমন জমাদ্দার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরবর্তীতে এই জবানবন্দি প্রত্যাহার করেন।
রাষ্ট্রপক্ষ সর্বমোট ১৩ জন সাক্ষী উপস্থাপন করে। অপরপক্ষে আসামিরা ১১ জন সাক্ষী হাজির করে।
আপিল শুনানিতে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ঘটনার সময় আসামি সুমন জমাদ্দার একজন শিশু ছিলেন। অর্থাৎ তার বয়স ছিল ১৬ বছর। কিন্তু ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি পিরোজপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল তাকে প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে তার বিচার করে ও মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে।
অর্থসূচক/কেএসআর
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.