‘লকডাউন দীর্ঘস্থায়ী হলে দুর্ভিক্ষের অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে’

করোনার কারণে লকডাউন ও ব্যবসা বাণিজ্যে মন্দা দীর্ঘস্থায়ী হলে দেশে দুর্ভিক্ষের অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের।

তিনি বলেন, করোনাকালীন জীবিকা হারিয়ে নতুন বেকার হওয়া ২ কোটি ৫০ লাখ এবং পূর্বের কর্মহীন বেকারদের জন্য জীবন রক্ষা ও জীবিকার কোনো ব্যবস্থা প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী রেখেছেন বলে চোখে পড়েনি। করোনার কারণে লকডাউন ও ব্যবসা বাণিজ্যে মন্দা দীর্ঘস্থায়ী হলে দেশে দুর্ভিক্ষের অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। সেখানেও জীবন বিপন্ন হবে।

আজ মঙ্গলবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা দিয়ে এসব দরিদ্র ও নব্য দরিদ্রদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এখানে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা অনেক বৃদ্ধি করতে হবে। অর্থের প্রয়োজন বাড়বে।

জি এম কাদের বলেন, ভ্যাকসিন, ওষুধ, ডাক্তার, নার্স, হাসপাতাল, টেস্টিং ল্যাবরেটরি, টেকনোলজিস্ট, পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ইত্যাদির যথেষ্ট পরিমাণ প্রয়োজন জীবন রক্ষার জন্য। নতুনভাবে এসব সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। সেজন্য অতিরিক্ত অর্থের দরকার হবে। করোনা মহামারির কারণে জীবিকা হারিয়েছে কোটি কোটি মানুষ। তাদের মধ্যে যারা হতদরিদ্র, তাদের না খেয়ে থাকার অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। জীবিকা হারিয়ে নতুন দরিদ্র সৃষ্টি হয়েছে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ মানুষ এবং প্রতিদিন এ সংখ্যা বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, জনগণ প্রত্যাশা করেছিল এ বাজেট হবে প্রাথমিকভাবে জীবন ও জীবিকা রক্ষার বাজেট। কিন্তু ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের চেয়ে প্রস্তাবিত বাজেট বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৫ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা বা ৬.২৮ শতাংশ। প্রশ্ন থেকে যায়, জীবন-জীবিকায় প্রাধান্যের জন্য এই বৃদ্ধি কি যথেষ্ট?

বাজেটের কয়েকটি দিক তুলে ধরে কাদের বলেন, চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) বাজেট প্রায় গতানুগতিক। আগামী বছরের প্রস্তাবিত বাজেট (২০২১-২২) এর প্রায় সমান বলা যায়। সে বাজেট দিয়ে ওপরের সমস্যাগুলোকে যথাযথভাবে সমাধান সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এ বছরের বাজেট বৃদ্ধি করা হয়েছে ১৪ শতাংশ। শুধু করোনা টিকার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি রুপি। কেবল স্বাস্থ্য খাতে ভারতে বাড়ানো হয়েছে (১৩৭ শতাংশ বা ১ লাখ ২৩ হাজার ৩৯৪ কোটি রুপি)। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে এই পরিমাণ আরো বেশি। সেভাবে দেখলে সত্যিকারভাবে আমাদের ২০২১-২২ বাজেটে জীবন ও জীবিকার প্রাধান্য যথেষ্ট আছে বলা যায় না।

বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরে ঘাটতি ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা (জিডিপির হিসাবে ৬.১৭ শতাংশ); সম্ভাব্য রাজস্ব আহরণের ১ লাখ কোটির অধিক ঘাটতি এর সঙ্গে যুক্ত হবে। সেক্ষেত্রে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার অধিক বাজেটে অর্ধেকের বেশি (৫৫.১০ শতাংশ; বিগত বছরগুলোর প্রকৃত রাজস্ব আয়ের উপর ভিত্তি করে) ঘাটতি থাকবে, অনুমান করা যায়। ঘাটতিকে সব সময় নেতিবাচকভাবে বা খারাপভাবে দেখার কিছু নেই, যদি ঘাটতি পূরণের উৎস নির্ভরশীল হয়।

তিনি দাবি করে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি পূরণের উৎসগুলো দুর্বল ও অনিশ্চিত। ঘাটতি পূরণে বৈদেশিক উৎস থেকে প্রাপ্তি ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা ধরা হয়েছে; বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বিষয়টি অনিশ্চিত। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। দেশীয় ব্যাংকগুলোর বেশির ভাগ রুগ্ন। এগুলোর ওপর নির্ভরশীল হওয়া কতটা বাস্তব সম্মত? তাছাড়া এতে ব্যাংকের তারল্য সঙ্কট বাড়ার আশঙ্কা থাকে। সেক্ষেত্রে সাধারণ ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়ে পুঁজি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ব্যাংক ঋণ পাবার ক্ষেত্রে সঙ্কট বাড়বে।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.