আইসিএবির ওয়েবিনারঃ কোম্পানি আইনে কিছু সংশোধনীর সুপারিশ

ব্যবসা সহজীকরণের বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স উন্নয়নে কোম্পানি আইনে বেশ কিছু সংশোধনী আনা দরকার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, যদিও ২০২০ সালে কোম্পানিজ আইন ১৯৯৪-এ সংশোধনী আনা হয়েছে, তা সত্ত্বেও এই আইনের কিছু বিধান সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ে গৃহীত পদক্ষেপের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পরির্বতন করা দরকার।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) অনুষ্ঠিত এক ওয়েবিনারে তারা এ কথা বলেন। ইনস্টিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অফ বাংলাদেশ (আইসিএবি) কোম্পানি আইনের প্রেক্ষিতে ব্যবসা সহজীকরণ (Ease of doing business: Perspective of Companies Act) শীর্ষক এই ওয়েবিনারের আয়োজন।

ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ। এতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিব-উল আলম এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট স্নেহাশীষ বড়ূয়া যৌথভাবে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্যানেল বক্তা ছিলেন আরজেএসসির ভারপ্রাপ্ত নিবন্ধক এএইচএম আহসান, বিডার পরিচালক জীবনকৃষ্ণ সাহা রায়, এমসিসিআই সভাপতি নিহাদ কবির, পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. এম. মাসরুর রিয়াজ এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের করপোরেট, বাণিজ্যিক ও ইনস্টিটিউশনাল ব্যাংকিং মোহাম্মদ এনামুল হক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আইসিএবির সাবেক সভাপতি মো. হুমায়ুন কবির।  আইসিএবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুভাশীষ বসু সূচনা বক্তব্য দেন। আইসিএবির সহসভাপতি সিদ্ধার্থ বড়ূয়া সমাপনী বক্তব্য দেন।

 

ওয়েবিনারে আলোচকরা বলেন, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিবেদনের মানদণ্ড (আইএফআরএস) অনুসারে আর্থিক প্রতিবেদন কাউন্সিলের (এফআরসি) অধীনে বিধান পরিপালন করে কোম্পানিগুলো তাদের আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক নিরীক্ষণ স্ট্যান্ডার্ড (আইএসএ) দ্বারা এই হিসাব ও আর্থিক বিবরণী নিরীক্ষা করা উচিত কারণ দেশেরে আইন অনুসারে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের আইএফআরএস এবং আইএসএ মেনে চলতে হবে।

তারা আইসিএবি কর্তৃক নির্ধারিত নিরীক্ষকদের ন্যূনতম নিরীক্ষা ফি বা সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত সন্তুষজনক ফি প্রদান প্রদানের পক্ষে মত দেন । রেজিষ্টার অব জয়েন্ট স্টক এ্যাকচ্যাঞ্জ (আরজেএসসি)-র সমস্ত কাজকে ডিজিটালাইজ করার প্রয়োজনীয়তার উপরও তারা জোর দেন ।

ওয়েবিনারে বক্তারা কোম্পানিজ আইন ১৯৯৪ এর বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ এবং সুপারিশ তুলে ধরেন । এই সুপারিশ ব্যবসায়ে বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরো সামনের দিকে নিয়ে যাবে এবং বিদেশী ও স্থানীয় বিনিয়োগ উভয়ই বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে ও দেশকে উন্নত করতে সত্যিই অনেক বেশি অবদান রাখবে ।

স্বাগত বক্তব্যে আইসিএবির সভাপতি মাহমুদুল হাসান খুসরু এফসিএ বলেন , আইসিএবি ব্যবসায়িক বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে কর্পোরেট আইনগুলির সরলীকরণ ও আধুনিকীকরণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে। ইতোমধ্যে কোম্পানিজ আইন, ১৯৯৪-এ সংশোধন হয়েছে; যদিও আমরা আশা করি যে তাতে আরো কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন ।তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ের পরিবেশ উন্নয়নের পথে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করা উচিত এবং দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের দেশে আরও বিনিয়োগের জন্য উৎসাহ প্রদান করা উচিত।

আলোচকরা বলেন, বর্তমান কোম্পানিজ আইনে বিদেশী সংস্থাকে শতভাগ মালিকানাধীন একটি বেসরকারী লিমিটেড কোম্পানী খুলতে দেওয়া হবে । ফলে তারা স্বল্প সময়ের মধ্যে একটি ব্যবসা শুরু কেোর সুযোগ পাবে । এই ধরনের পদক্ষেপ হংকংয়েও নেওয়া হয়েছে । ২০২০ সালের আগে বাংলাদেশে কমপক্ষে দু’জন ব্যক্তির একটি সংস্থা খোলার বিধান ছিল , এখন নতুন সংশোধনীতে স্বল্প সময়ে বিদেশী সংস্থাগুলো পিএলসি বা ওপিসি খুলতে পারে।

ভারত এবং যুক্তরাজ্যে গৃহীত অনুশীলনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সংস্থাগুলির একত্রীকরণ এবং অধিগ্রহণ দুটি উপায়ে করা উচিত ; গঠনের মাধ্যমে মার্জার এবং মার্জারের মাধ্যমে আত্বীকরণ এর পক্ষে মত দেন বিশেষজ্ঞরা । কিন্তু আমাদের কোম্পানিজ আইন ১৯৯৪ এ কোনও বিধানে এ জাতীয় মার্জারের অনুমোদন দেয়নি। বক্তরা শীঘ্রই এটির সমাধান চান ।

নতুন সংশোধনীগুলির অধীনে যে কোনও বিদেশী পিএলসি বা ওপিসি অবশ্যই পেশাদারকে কোম্পানির সেক্রেটারি (বহিরাগত বা অভ্যন্তরীণভাবে ভাড়া নেওয়া) হিসাবে নিয়োগ দিতে হবে এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির কাগজপত্রে তার স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সিঙ্গাপুর এবং হংকংয়েও অনুরূপ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে ।

তারা আরও বলেছেন যে, ১০০ কোটি টাকার বেশি টার্নওভার সম্পন্ন বেসরকারী লিমিটেড সংস্থাকে পরিচালকদের দ্বারা একটি প্রতিবেদন জারি করা দরকার এবং এটি আইএসএ-এর অধীনে নিরীক্ষক দ্বারা নিরীক্ষা করা দরকার। এই প্রতিবেদনটি অবশ্যই আরজেএসসিতে জমা দিতে হবে যাতে কোম্পানী সম্পর্কে আরও তথ্য আরজেএসসির কাছে রাখা যায় এবং এটি দেশের কর্পোরেট সুশাসন উন্নয়নে সাহায্য করবে ।

ব্যবসায়িক স্বাচ্ছন্দ্যে গ্লোবাল সূচকে বাংলাদেশ ২০২০ সালে ১৭৭ থেকে ১৬৯-ধাপে উন্নীত হয়েছে। ব্যবসা শুরু করার স্বল্প সময়, অবকাঠামো নির্মাণ, বিদ্যুৎ সংযোগ, সম্পত্তি নিবন্ধকরণে, ছোট বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যবসায়িক স্বাচ্ছন্দ্যে গ্লোবাল সূচকে বেশ এগিয়ে, যদিও দেশটি খুব বেশি অগ্রগতি করতে পারেনি ট্যাক্স প্রদান, সীমান্ত ট্রেডিং, চুক্তি কার্যকর সহ বেশ কিছু সেক্টরে ।

ব্যবসায়িক স্বাচ্ছন্দ্যে গ্লোবাল সূচকে ১০ টি সেক্টরের মধ্যে বাংলাদেশ পাঁচটি সেক্টরে উন্নতি করেছে যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৮ ধাপ এগিয়েছে । বিশেষজ্ঞরা মনে করেন সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ এই ধরনের উন্নয়নের জন্য সহায়তা করেছে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.