অসমন্বয়যোগ্য অগ্রিম আয়কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি সিমেন্ট শিল্প মালিকদের
সিমেন্ট শিল্পে কাঁচামাল আমদানিতে আরোপিত অসমন্বয়যোগ্য অগ্রিম কর (Advance Tax-AT) সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন এই শিল্পের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন (বিসিএমএ)।
আজ শনিবার (৫ জুন) এক বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এই দাবি জানিয়েছেন তারা।
বিসিএমএর বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত বাজেটে সিমেন্ট খাতে যে কর সুবিধাটুকু দেয়া হয়েছে তার প্রভাব খুবই সামান্য। বাজেট প্রস্তাবনায় সিমেন্ট উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রিম করহার ৩% থেকে কমিয়ে ২% করার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু এটি বরাবরের মতোই অসন্বয়যোগ্য বা চূড়ান্ত করদায় হিসেবেই রাখা হয়েছে যা কোনভাবেই কাম্য নয়। শিল্প মালিকরা চান অগ্রিম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার। একান্তই যদি প্রত্যাহার করা না যায়, তাহলে অন্ততপক্ষে এটি যেন সমন্বয়যোগ্য করা হয়।
অগ্রিম করের পাশাপাশি সিমেন্ট সরবরাহে উৎসে করও সম্পূর্ণ প্রত্যাহার চেয়েছে বিসিএম। বর্তমানে সরবরাহ পর্যায়ে ৩ শতাংশ উৎসে কর আছে। আগামী অর্থবছরে এটি ১ শতাংশ কমিয়ে ২ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে ঘোষিত বাজেটে। কিন্তু উৎসে কর ১ শতাংশ কমলেও এটিকে সিমেন্ট শিল্পের জন্য বড় ধরনের চাপ বলে মনে করেন এই খাতের উদ্যোক্তারা।
বিসিএম প্রেসিডেন্ট মোঃ আলমগী কবির বলেন, কোনো একটা খাতের জন্য এ ধরনের সিদ্ধান্ত অহেতুক চাপিয়ে দেয়া ছাড়া আর কিছুই নয়, কারণ আমরা আগে থেকেই কেউ বলতে পারি না কোন খাত কত মুনাফা করবে। এটা দেশের অর্থনীতি, বাজার ব্যবস্থা, চাহিদা এবং সর্বোপরি উৎপাদনকারীদের প্রতিযোগিতার মধ্যে নির্ভর করে। তালিকাভুক্ত কোম্পানি এবং তালিকা বহির্ভুত কোম্পানি যেটাই হোক না কেন, সরকার নির্ধারিত নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিরীক্ষা (অডিট) হওয়ার পর আর্থিক প্রতিবেদন বা লাভ-লোকসান নির্ধারিত হয়। সেখানে কোনো ব্যতিক্রম করার সুযোগ থাকে না। তারপরেও সরকার যদি মনে করে অগ্রিম আয়কর দেয়া উচিত তাতে আমাদের কোন আপত্তি থাকার কথা না। কিন্তু যে আয়কর নেয়া হবে সেটা কোনভাবেই চূড়ান্ত দায় হওয়া উচিত না।
তাই আমাদের দাবি হলো যে আমদানিস্থলে অগ্রিম আয়কর ও সরবরাহের বিপরীতে ন্যূনতম আয়কর ধারা ৮২-সি এর উপধারা-২ এর ধারা (ন)এ উল্লেখিত ৫২ এবং এর উপধারা (রর) সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করণ।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেশের সমুদয় চাহিদা মিটিয়ে সিমেন্ট রপ্তানি করছি, কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে এখাতের রপ্তানি প্রণোদনা বা রপ্তানি প্রত্যার্পন (ডিউটি ড্রব্যাক) সম্পর্কে কোন সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আমরা পাইনি।
বিসিএমের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সিমেন্ট শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৫ টির মতো দেশী বিদেশী কোম্পানী সিমেন্ট উৎপাদন করছে। দেশে সিমেন্টের বাৎসরিক চাহিদা প্রায় ৪ কোটি মেঃ টন যার বিপরীতে প্রায় ৮.৪ কোটি মেঃ টন উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। এখাতে প্রায় ৪২,০০০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। তাছাড়া, এই শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে কয়েক লক্ষাধিক নির্মাণ শ্রমিক, কর্মচারি ও কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন। বছরে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি এখাত থেকে সরকারি কোষাগারে শুল্ক-করের মাধ্যমে জমা করা হয়। দেশে সিমেন্টের সমুদয় চাহিদাই মেটানেরা পাশাপাশি ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিদেশেও সিমেন্ট রপ্তানি হচ্ছে। চীনে মাথা পিছু সিমেন্টের ব্যবহার ১৭০০ কেজি, মালয়েশিয়ায় ৮৯০ কেজি, থাইল্যান্ডে ৬২০ কেজি, ভিয়েতনামে ৫১৮ কেজি, পার্শ্ববর্তী ভারতে ৩০৫ কেজি, শ্রীলঙ্কায় ৪১২ কেজি এবং বাংলাদেশে ২১০ কেজি।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.