৩৩৩-এ ত্রাণ চেয়ে হেনস্তার শিকার সেই ‘৪ তলার মালিক’ পাচ্ছেন ক্ষতিপূরণ

নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার বৃদ্ধ ফরিদউদ্দিন আহমেদের পরিবার অবশেষে ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে। ফরিদউদ্দিন আহমেদ সরকারি হটলাইন ৩৩৩ নম্বরে কল করে খাদ্য সহায়তা চেয়েছিলেন। তবে তিনি খাবার পাননি, উল্টো তাকে ১০০ জনকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করতে হয়েছে।

এ নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে লেখালেখি হলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। তবে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাইন আজ রোববার (২৩ মে) জানিয়েছেন— বৃদ্ধ ফরিদউদ্দিনের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

ডিসি বলেন, ফরিদউদ্দিনের পরিবারের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তাদের যে পরিমাণ খরচ হয়েছে, সেসব ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে আজই তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে।

ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ ফরিদউদ্দিন আহমেদ। ঘরে তার ১৬ বছর বয়সি প্রতিবন্ধী ছেলে, স্নাতক পড়ুয়া মেয়ে ও স্ত্রী রয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডের নাগবাড়ি শেষ মাথা এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ ফরিদউদ্দিন আহমেদ।

একসময়ে স্থানীয় এক হোসিয়ারি কারখানায় কাটিং মাস্টার হিসেবে কাজ করতেন। তিনবার ব্রেনস্ট্রোক করার পর ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন ফরিদ এখন কাজ করতে পারেন না। ওই কারখানাতেই শ্রমিকদের ওপর নজরদারি রাখা বাবদ মাসে আট হাজার টাকা পান তিনি। তাতে কষ্টে চলছিল তার সংসার।

তবে করোনাকালীন পড়েছেন মহাসংকটে। একরকম নিরুপায় হয়েই জাতীয় কলসেন্টারের ৩৩৩ নম্বরে কল করে খাদ্য সহায়তা চান ফরিদ। এই একটি কলই কাল হলো তার।

বৃদ্ধ ফরিদউদ্দিন আহমেদ বলেন, নিয়মিত এফএম রেডিও শোনেন তিনি। রেডিওর সংবাদে তিনি জেনেছেন ৩৩৩ নম্বরে কল করে খাদ্য সহায়তা পাওয়া যায়।

সরকারি সহায়তা পেতে তিনি কল করেছিলেন ওই নম্বরে। কিন্তু সহায়তা তো পাননি, উল্টো তিনি চারতলা ভবনের মালিক এমন তথ্যের কারণে ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হয়েছে তাকে।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফা জহুরার নির্দেশে তাকে ১০০ জনের মধ্যে চাল, আলু, ডাল, লবণ ইত্যাদি খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করতে হয়েছে।

ফরিদউদ্দিন বলেন, তার আর্থিক অবস্থা খুবই করুণ। কাজ করতে পারেন না। এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। অন্য মেয়ে টিউশনি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ জোগান। প্রতিবন্ধী ছেলের জন্য নিয়মিত ওষুধ লাগে। তার নিজেরও দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ। দুই চোখেই অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে।

তিনি তিনবার স্ট্রোক করেছেন। কোনো রকমের সঞ্চয় নেই তার। নিজের ওষুধ কেনারও পয়সা নেই। ছয় ভাই ও এক বোন মিলে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমিতে চারতলা ভবন করেছেন। চারতলায় ওপরে টিনশেড দেওয়া দুটি ঘরে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকেন ফরিদ। নিজে অসহায় অবস্থায় পড়েছেন বলেই সরকারি সহায়তার জন্য ওই নম্বরে কল করেছিলেন বলে জানান ওই বৃদ্ধ।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.