রোজিনার মুক্তি চেয়েছে ইআরএফ ও সিএমজেএফ

পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে হেনস্থা ও মামলা দায়েরের তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করেছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিষ্টস ফোরাম (সিএমজেএফ)। একইসাথে সংগঠন দুটি নির্যাতনমূলক এই ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও দায়েরকৃত মামলার নিঃশর্ত প্রত্যাহার দাবি করেছে।

আজ সোমবার (১৮ মে) পৃথক পৃথক বিবৃতিতে সংগঠন দুটির নেতৃবৃন্দ এই দাবি জানিয়েছেন।

উল্লেখ, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে হেনস্থা ও শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের শিকার হন রোজিনা ইসলাম। কথিত ‘নথি চুরি’র অভিযোগে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। সচিবালয়ের একটি কক্ষে তাকে প্রায় ৮ ঘণ্টা আটকে রেখে রাত ৯টায় শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে নথি চুরির অভিযোগ এনে দণ্ডবিধি ৪১১ ধারা এবং অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ৩/৫ ধারায় মামলা করা হয়। আজ তাকে আদালতে নেওয়া হলে আদালত জামিন না দিয়ে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেন।

  ইআরএফের বিবৃতি

ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভী ও সাধারণ সম্পাাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম এক বিবৃতিতে বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ইআরএফ সদস্য রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঁচ ঘন্টা আটকে রেখে হেনস্থা করা ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা অত্যন্ত অমানবিক। প্রজাতন্ত্রের কতিপয় কর্মচারীর এই আচরণ জনগনের তথ্য পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকারকে বাঁধাগ্রস্ত করেছে এবং এটি গণমাধ্যমের কন্ঠরোধ করার চেষ্টা মাত্র। আমরা মনে করি এটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘণ। রোজিনার হেনস্থা করার পেছনে দায়ি ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
রোজিনা ইসলামকে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ধারায় অভিযোগ এনে মামলা দায়ের অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা মনে করি এটি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের কালাকানুন। একজন পেশাদার সাংবাদিককে এই আইনের কঠোর ধারায় আটক ও অভিযোগ আনায় আমরা শঙ্কিত। এসব কঠোর ধারায় সাংবাদিকদের আটক বন্ধ করতে হবে এবং রোজিনা ইসলামের নামে দায়েরকৃত মামলার নিঃশর্ত প্রত্যাহার চাই।
নেতৃবৃন্দ বলেন, রোজিনা ইসলাম গত কয়েকবছর ধরে দেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার বাতিঘর হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। এই বিশেষ কৃতিত্বের জন্য তিনি কানাডিয়ান অ্যাওয়ার্ডস ফর এক্সিলেন্স ইন বাংলাদেশি জার্নালিজম (২০১১), টিআইবির অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার (২০১৫), পিআইবি ও দুদকের উদ্যোগে দুর্নীতি প্রতিরোধে গণমাধ্যম পুরস্কার বাংলাদেশসহ (২০১৪) বেশ কিছু দেশি-বিদেশী পুরস্কার পেয়েছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে তিনি স্বাস্ব্য মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে বেশ কয়েকটি সাড়া জাগানো প্রতিবেদন করেছেন। এসব প্রতিবেদন ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে এবং করোনা অতিমারির সময়ে তার এসব প্রতিবেদন জনগণের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি সহজ করেছে। একইসাথে স্বাস্থ্যখাতের সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আমরা মনে করি এসব প্রতিবেদনের কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ক্ষিপ্ত ছিলেন, তারা কৌশলে সরকারি নথির ছবি তোলার অভিযোগে রোজিনা ইসলামকে লাঞ্ছিত করেছেন।
ইআরএফ মনে করে রোজিনা ইসলামের অবিলম্বে মুক্তি এবং নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে এই ঘটনার সুষ্ঠুৃ বিচার না হলে স্বাধীণ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এটি খারাব নজির হয়ে থাকবে।

সিএমজেএফের বিবৃতি

ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) রোজিনা ইসলামকে হেনন্থা ও হয়রানি
সাংবাদিকতার উপর নগ্ন হামলা বলে আখ্যায়িত করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় দৈনিক প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সোমবার সাড়ে ৫ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন এবং পরবর্তীতে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সিএমজেএফ মনে করে, রোজিনা ইসলামের মতো সাংবাদিককে নজিরবিহীন হয়রানি ও তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা স্বাধীন সাংবাদিকতার উপর নগ্ন হামলা। সাংবাদিকতার ইতিহাসে এটি কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। এ ঘটনা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সংক্রান্ত সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী এবং মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যম বিকাশের অন্তরায়। এরফলে বিশ্বে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান আরও নিচে নামিয়ে আনবে।
সিএমজেএফ মনে করে, এটি কোনো বিছিন্ন ঘটনা নয়। বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রের সম্পদ লুণ্ঠন নিয়ে আমলাদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে উঠে আসা প্রতিবেদনের কারণে দুর্নীতিবাজ আমলাদের পুঁিঞ্জভুত ক্ষোভের বিষ্ফোরণ এটি। অতীতে সাংবাদিক নির্যাতনের বিচার না হওয়ায়, এভাবে আমলাদের দুঃসাহস বেড়েছে। আজ যা চরম সীমা লংঘন করে রাষ্ট্রযন্ত্র ও গণমাধ্যমকে মুখোমুখী দাঁড় করিয়েছে। একটি দায়িত্বশীল সাংবাদিক সংগঠন হিসেবে আমরা করি, এটি দেশের জন্য কোনোভাবেই মঙ্গলজনক নয়। আমরা অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে রোজিনা ইসলামকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে এই ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে এর আগেও যে সব সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন করা হয়েছে, তার বিচার দাবি করছি।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.