বিশ্বে শান্তি নিশ্চিত করাটাই চ্যালেঞ্জ: প্রধানমন্ত্রী

বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশ্বে শান্তি নিশ্চিত করা অতীতের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, বর্তমানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বহুমাত্রিক ও জটিল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। সাম্প্রতিককালে শান্তিরক্ষীদের প্রাণহানি উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলেছে। এ যাবৎ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ১৫৮ জন প্রাণ উৎসর্গ করেছেন এবং ২৩৭ জন আহত হয়েছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অপারেশনে আগামী দিনে নতুন সঙ্কট মোকাবিলায় শান্তিরক্ষীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম প্রস্তুত করা সময়ের দাবি। আশা করি, এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আজ সোমবার (১২ এপ্রিল) সেনাবাহিনীর ‘অনুশীলন শান্তির অগ্রসেনা ২০২১’-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

অনুশীলন শান্তির অগ্রসেনা ২০২১-এ অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিশ্চয় আপনাদের মাধ্যমে আপনাদের দেশের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও সমৃদ্ধ হবে, বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতাপূর্ণ হবে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশ্বে শান্তি নিশ্চিত করা অতীতের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনা ভাইরাসের মতো অদৃশ্য শত্রুর আবির্ভাব, প্রযুক্তির দ্রুত প্রসার এবং সময়ের অগ্রযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন হুমকির উপাদানও সৃষ্টি হয়েছে।

জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে নিখুঁত ও সফলভাবে এই অনুশীলনের আয়োজন করায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, জাতির জনকের শান্তির দর্শন প্রতিষ্ঠায় এ বহুজাতিক অনুশীলন একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনুশীলন শান্তির অগ্রসেনা’য় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সাম্প্রতিক সময়ের উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে কিছু ঘটনা অংশগ্রহণকারীদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে, যাতে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমাদের ভবিষ্যত শান্তিরক্ষীরা সুপ্রশিক্ষিত হয়ে উঠতে পারে। এই অনুশীলনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অপারেশনে নারীদের অবদান তুলে ধরা হয়েছে জেনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি।

তিনি বলেন, যেকোনো দেশের জাতীয় মর্যাদা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যথাযথভাবে প্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনী অপরিহার্য। তেমনি, সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সক্ষমতা যাচাইয়ে নিয়মিত অনুশীলনের বিকল্প নেই। জাতির পিতা স্বাধীন বাংলাদেশে একটি সুশৃঙ্খল ও পেশাদার সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তিনি অত্যাধুনিক সামরিক একাডেমি প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে ধারণ করে তার প্রতি সম্মান জানাতে আমরা ২০২০-২০২১ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। পাশাপাশি সমগ্র বাঙালি জাতি গৌরবের সঙ্গে উদযাপন করছে আমাদের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। বিশ্বের ১১৬টি দেশের নেতারা ভিডিও এবং লিখিত অভিনন্দনবার্তা প্রেরণ করেছেন। এসব বার্তায় অত্র অঞ্চলসহ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবদানের স্বীকৃতি মিলেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১২ বছরে আমরা আমাদের তিন বাহিনীর আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রসর হয়েছি। আমাদের সামরিক বাহিনীতে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র ও প্রযুক্তির সংযোজন করেছি। সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ নিরসনে আমরা ‘শূন্য সহনশীলতার নীতি’ গ্রহণ করেছি। মহামারির সময়েও ৫.৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করেছি। এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮০০ নারী শান্তিরক্ষীসহ ১ লাখ ৭৫ হাজারের অধিক বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী ৫টি মহাদেশের ৪০টি দেশে ৫৪টি মিশনে অংশগ্রহণ করেছে। বর্তমানে ৭ হাজারের অধিক বাংলাদেশি সেনা ও পুলিশ সদস্য ১০টি মিশনে শান্তিরক্ষার উদ্দেশ্যে মোতায়েন আছে। আমাদের শান্তিরক্ষীরা যে মিশনেই গেছেন, সেখানে জাতিসংঘের পতাকাকে সমুন্নত ও উড্ডীন রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল করেছেন। একারণেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে।

সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ভারতের আর্মি চিফ মনোজ মুকুন্দ নারবান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের হাইকমিশনার, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের প্রতিনিধিরা।

‘অনুশীলন শান্তির অগ্রসেনা ২০২১’ এ বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও শ্রীলংকা থেকে ১২৩ জন সেনাসদস্য অংশগ্রহণ করেন। তাদের প্রত্যেককে সনদ দেওয়া হবে। তবে অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে চার দেশের চারজনকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সনদ তুলে দেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.