লকডাউন নাকি কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ?

চলমান করোনা পরিস্থিতিতে সরকার সারা দেশে লকডাউন ঘোষণা করবে, নাকি কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে- বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়।

তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাক্কা সামাল দিতে সাময়িকভাবে এক সপ্তাহের ‘লকডাউনের আদলে’ কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে সরকার।

শনিবার (০৩ এপ্রিল) বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কঠোর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো প্রস্তাবের মধ্যে অন্যতম হলো, আন্তঃজেলা যান চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। জেলা থেকে প্রবেশ বা বের হওয়ার পথে চেকপোস্ট বসানো। যেসব যান চলবে সেগুলোর ৫০ শতাংশ আসন খালি রাখা। রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হতে পারবে না। মসজিদে প্রতি ওয়াক্তের নামাজে পাঁচজন ও জুমার নামাজে ১০ জনের বেশি মুসল্লি না থাকা এবং সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিসে তিন ভাগের এক ভাগ জনবল নিয়ে কাজ করা।

নিষেধাজ্ঞার সময় বাড়ানো হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, আমরা সাতদিন যদি সবাই শক্তভাবে পালন করতে পারি তাহলে এটি দারুণভাবে কাজ করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। সেক্ষেত্রে আমরা অন্তত সাতদিন এটি করতে থাকি। এরপর বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে দেশ ও মানুষের কল্যাণে যা ভালো হয়, সে সিদ্ধান্তই নেওয়া হবে। আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করব।

সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, গতবারের সাধারণ ছুটির মতো এবারও যাতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা না হয়, তার জন্য ব্যবসায়ী মহলের চাপ আছে। তারা যুক্তি দিচ্ছে, মহামারিতে সব বন্ধ করা সমাধান নয়। প্রথমবার বিশ্বব্যাপী বিষয়টি নতুন হওয়ায় বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি দেওয়া হয়। জরুরি সেবা, কাঁচাবাজার, নিত্যপণ্য ও ওষুধের দোকান ছাড়া সব কিছু বন্ধ রাখায় সেটা ‘লকডাউন’ বলা হয়েছিল। এরপর শিল্প-বাণিজ্যক্ষেত্রে সরকারের বিপুল ভর্তুকির কারণে বড় সমস্যা হয়নি। এবার আবারও সাধারণ ছুটিতে গেলে যে ক্ষতি হবে, তা পোষাতে সরকারের ভর্তুকি দেওয়ার সেই সক্ষমতা থাকবে না।

একজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, গতবার সরকারের মজুদে প্রচুর চাল ছিল। সাধারণ ছুটি শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ত্রাণ বিতরণ অনেকটা স্বস্তি দিয়েছিল। এবার সরকারের হাতে প্রয়োজনীয় চাল নেই। রমজান উপলক্ষে ভিজিএফ কার্যক্রমের জন্য চালের বদলে টাকা দেওয়া হচ্ছে। তাই এখন ‘লকডাউনে’ গরিব মানুষ কিভাবে চলবে? সরকারকে বিষয়টি বড় করে ভাবতে হচ্ছে।

কেমন হতে পারে নিষেধাজ্ঞা: প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেওয়া প্রস্তাবে যে বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে আন্ত জেলা যান চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। জেলা থেকে ঢোকা বা বের হওয়ার পথে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেকপোস্ট বসানোর ব্যবস্থা হবে। যেসব যান চলবে সেগুলোর ৫০ শতাংশ আসন খালি রাখতে হবে। সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হতে পারবে না। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, ওষুধ, মৃতদের দাফন, সিকিউরিটি গার্ডসহ জরুরি কাজের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য পেশার মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করতে পারবে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বেচাকেনার ক্ষেত্রে উন্মুক্ত জায়গা বেছে নেওয়ার নির্দেশনা থাকছে। বেসরকারি আর্থিক সেবার সঙ্গে যুক্ত গাড়িসহ ব্যক্তিদের চলাচলে বাধা থাকবে না। তবে ব্যাংক খাতের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক পৃথক নির্দেশনা দেবে। এর বাইরে গণজমায়েত, সভা-সমাবেশ, সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিসকে তিন ভাগের এক ভাগ জনবল নিয়ে কাজ করতে হবে।

শপিং মল, মার্কেটের সময় বেঁধে দেওয়া হতে পারে। অফিস-আদালতে কাজ করতে হবে এক-তৃতীয়াংশ জনবল নিয়ে। এ নিষেধাজ্ঞা চলাকালে কোনো সরকারি কর্মচারীসহ বেসরকারি কর্মজীবীরাও তাঁদের কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না। হাট-বাজার, শপিং মল সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, বিদ্যুৎ, পানি, ত্রাণ বিতরণ, জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন, ইন্টারনেট, ডাকসেবা, হাসপাতাল, কৃষিপণ্য, সার, বীজ, খাদ্য, শিল্পপণ্য, রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের মালামাল, নার্স, চিকিৎসক, কেবল নেটওয়ার্ককর্মী, গণমাধ্যমকর্মীদের পরিবহন ও চলাচলে স্বাস্থ্যবিধি মানলে বাধা থাকবে না। রফতানিমুখী শিল্পসহ সব শিল্প-কারখানা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বজায় রেখে চালু রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.