পদ্মা ব্যাংকে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, খতিয়ে দেখবে বিএসইসি

বেসরকারি পদ্মা ব্যাংকের (সাবেক ফার্মার্স ব্যাংক) বর্তমান চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ শরাফতের বিরুদ্ধে অনিয়মের মাধ্যমে টাকা ‘সরিয়ে নেওয়ার’ অভিযোগ তুলেছেন ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর।পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এই আভিযোগ খতিয়ে দেখবে বলে জানিয়েছেন সংস্থার চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

আজ শনিবার (১৩ মার্চ) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জনৈক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, তারা মহীউদ্দীন খান আলমগীরের লিখিত অভিযোগের কপি পেয়েছেন। বিষয়টি কমিশন খতিয়ে দেখছে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে ডেকে তাদের ব্যাখ্যা নেওয়া হবে। তারপর প্রয়োজনে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে কমিশন।

তিনি বলেন, আইন সবার জন্য সমান। তাই কেউ আইন ভেঙ্গে থাকলে কমিশন অবশ্যই প্রয়োজন অনুসারে ব্যবস্থা নেবে। এই দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত হবে না।

উল্লেখ, মহীউদ্দীন খান আলমগীর এবং চৌধুরী নাফিজ শরাফত-দু’জনই জন্মলগ্ন থেকেই নানা সমালোচনা ও বিতর্কের মধ্যে থাকা পদ্মা ব্যাংকের উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার। ২০১৩ সালে এ ব্যাংকটি যাত্রা শুরু করে। মহীউদ্দীন খান আলমগীর ব্যাংকটির চেয়ারম্যান থাকাকালে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি হয় বলে অভিযোগ উঠে। চেয়ারম্যান নিজে যেমন নামে-বেনামে ঋণের আড়ালে বিপুল পরিমাণ অর্থ সরিয়েছেন, তেমনই টাকা সরানোর ক্ষেত্রে অন্য পরিচালকরাও ছিলেন বেপরোয়া। ঋণ কেলেঙ্কারি ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে চাপের মুখে ২০১৭ সালে মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের পদ ছাড়তে হয়। তখন থেকে ব্যাংকটির কর্তৃত্ব চৌধরী নাফিজ শরাফতের হাতে। ভাবমূর্তি সংকটের মুখে ২০১৯ সালে ফারমার্স ব্যাংকের নাম বদলে পদ্মা ব্যাংক রাখা হয়।

চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ছাড়ার পর দীর্ঘদিন চুপ থেকে হঠাৎ সরব হয়ে উঠেছেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর। সম্প্রতি তিনি এক লিখিত অভিযোগে বলেছেন, চৌধুরী নাফিজ শরাফত অনিয়ম করে তার মালিকানাধীন সংস্থার অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডে পদ্মা ব্যাংক থেকে ১০০ কোটি টাকা সরিয়ে নিয়েছেন। তিনি (মখা আলমগীর) চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকাকালে তাকে না জানিয়ে এবং তার ‘অনুপস্থিতিতে’ ২০১৫ সালের ১ নভেম্বর  ফারমার্স ব্যাংক পর্ষদের এক বৈঠকে একটি অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডে ১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ অনুমোদন করিয়ে এই টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়।

গত ৭ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি লিখে চৌধুরী নাফিজ শরাফাতের বিরুদ্ধে তার অভিযোগের কথা তুলে ধরে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর। চিঠির অনুলিপি অর্থমন্ত্রী, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনেও পাঠানো হয়।

চৌধুরী নাফিজ শরাফত বিভিন্ন গণমাধ্যমকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অন্যদিকে পদ্মা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মখা আলমগীরের বিরুদ্ধে কয়েকশ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে। গত ৭ মার্চ বিএসইসি কাছে পাঠানো এক চিঠিতে প্রতিকার চাওয়া হয়েছে।

জনৈক সাংবাদিক এই পাল্টাপাল্টি অভিযোগের বিষয়টি তুলে ধরে এ বিষয়ে বিএসইসির অবস্থান জানতে চেয়েছিলেন ইআরএফের অনুষ্ঠানে। তার জবাবে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.