সিনেমা হল মালিকদের হাজার কোটি টাকা ঋণ দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক

দেশের সিনেমা হল মালিকদের জন্য এক হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কীম গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলচ্চিত্র শিল্পের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হল মালিকদের সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যে এ স্কিম গঠন করা হয়। আর তফসিলি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক হতে নির্ধারিত ১.৫% হারে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা নিতে পারবে। প্রথম ধাপে এই স্কিমের ৫০ শতাংশ ঋণ বিতরণের সুষ্ঠু ব্যবহার হলে পরের ধাপে বাকি ঋণ বিতরণ করা হবে।

রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশের আবহমান সংস্কৃতি, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে চলচ্চিত্রের অবদান অপরিসীম। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, শিল্পী ও কলাকুশলীদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে চলচ্চিত্র শিল্পের নবজাগরণ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত ৩ এপ্রিল ২০১২ তারিখে চলচ্চিত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করেন।

সুস্থ জাতি গঠনে নির্মল বিনোদনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিনোদন জগতের সর্ববৃহৎ মাধ্যম চলচ্চিত্র এবং সিনেমা হলসমূহকে কেন্দ্র করেই মূলত চলচ্চিত্র শিল্প বিকশিত হয়।

নব্বইয়ের দশকে এদেশে প্রায় ১৪০০টি সিনেমা হল ছিল। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে এ সংখ্যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। দেশের সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের সুস্থধারার বিনোদন উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে বিদ্যমান সিনেমা হলগুলো সংস্কার এবং আধুনিক মানের নতুন সিনেমা হল নির্মাণ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সিনেমা হল মালিকদের স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ/বিনিয়োগ প্রদান করা হলে সিনেমা হল মালিকগণ নতুন নতুন সিনেমা হল নির্মাণের পাশাপাশি বিদ্যমান হলগুলো সংস্কার ও আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করতে সক্ষম হবে। সার্বিক বিষয়াদি বিবেচনান্তে, সিনেমা হল মালিকদের অনুকূলে ঋণ বিতরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক এক হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করা হয়েছে।

এ স্কিম পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রজ্ঞাপনে কিছু নির্দেশনাবলী অনুসরণীয় করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনাগুলো হলো-

১. শিরোনাম: সিনেমা হল মালিকদের অনুকূলে মেয়াদী ঋণ/বিনিয়োগ সুবিধা প্রদানের জন্য পুনঃঅর্থায়ন স্কিম।

২. খাত: বিদ্যমান সিনেমা হল সংস্কার, আধুনিকায়ন ও এতদ্সংশ্লিষ্ট মেশিনারি/যন্ত্রাংশ/প্রযুক্তি ক্রয় এবং নতুন সিনেমা হল নির্মাণের উদ্দেশ্যে তফসিলি ব্যাংকের অর্থায়নের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা প্রদান করা হবে। এ নীতিমালার অন্যান্য শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে বিভিন্ন শপিং কমপ্লেক্সে বিদ্যমান সিনেমা হলসহ নতুনভাবে নির্মিতব্য সিনেমা হলসমূহও আলোচ্য পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় ঋণ/বিনিয়োগ সুবিধা প্রাপ্য হবে। তবে, চলতি মূলধন বাবদ কোনরূপ ব্যয় পুনঃঅর্থায়ন সুবিধার আওতায় আসবে না। এছাড়া, এ স্কিমের আওতায় গৃহীত ঋণ দ্বারা কোনভাবেই অপর কোন ঋণ/বিনিয়োগ এর দায় পরিশোধ বা সমন্বয় করা যাবে না।

৩. তহবিলের উৎস ও পরিমাণ: বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল। স্কিমের পরিমাণ ১ হাজার কোটি টাকা। এ স্কিম হতে প্রথম ধাপে ৫০০ কোটি টাকা বিতরণ করা হবে। প্রথম ধাপে বিতরণকৃত ঋণ/বিনিয়োগের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত হবার পর দ্বিতীয় ধাপে ৫০০ কোটি টাকা বিতরণযোগ্য হবে।

৪. ঋণ/বিনিয়োগসীমা: ব্যাংকিং নিয়মাচার অনুসরণপূর্বক প্রত্যেক গ্রাহককে প্রতিটি সিনেমা হলের জন্য ঋণ/বিনিয়োগ সুবিধার প্রাপ্যতা যুক্তিযুক্তভাবে অর্থায়নকারী ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত হবে। তবে, তা কোনভাবেই প্রতিটি সিনেমা হলের বিপরীতে ৫ কোটি টাকার অধিক হবে না।

৫. সুদ/মুনাফার হার: এ স্কিমের আওতায় অংশগ্রহণকারী তফসিলি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক হতে নির্ধারিত ১.৫% হারে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে। গ্রাহক পর্যায়ে মেট্রোপলিটন এলাকায় ৫.০% সুদ/মুনাফা এবং মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে ৪.৫% সুদ/মুনাফা হারে তফসিলি ব্যাংক অর্থায়ন করবে।

৬. ঋণ/বিনিয়োগের মেয়াদ: পুনঃঅর্থায়ন সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণ/বিনিয়োগ ১ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ সমমাসিক/ত্রৈমাসিক কিস্তিতে সর্বোচ্চ ৮(আট) বছর (১ বছর + ৭ বছর) মেয়াদে গ্রাহক কর্তৃক পরিশোধ্য হবে।

৭. অংশগ্রহণকারী ব্যাংক: বাংলাদেশে কার্যরত সকল তফসিলি ব্যাংক এ পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা গ্রহণের যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। পুনঃঅর্থায়ন গ্রহণে আগ্রহী ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংক এর ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন এর সাথে একটি অংশগ্রহণ চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে।

৮. পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা গ্রহণের সময়সীমা: এ স্কিমের আওতায় গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ/বিনিয়োগ বিতরণ উত্তর অংশগ্রহণকারী ব্যাংককে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা প্রাপ্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট ৩১ মার্চ, ২০২২ তারিখের মধ্যে আবেদন করতে হবে।

৯. তহবিল ব্যবস্থাপনা: এ স্কীমের পরিচালনাগত কার্যক্রম বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রধান কার্যালয় এর ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন কর্তৃক সম্পাদিত হবে। ঋণ/বিনিয়োগের আবেদন পদ্ধতি ও প্রয়োজনীয় দলিলাদি সম্পর্কে ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনা অনুসরণীয় হবে।

১০. পরিশোধ পদ্ধতি:

ক. পুনঃঅর্থায়ন গ্রহণের তারিখ হতে ১ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ ৮ বছর সময়ের মধ্যে ত্রৈমাসিক কিস্তিতে সুদ/মুনাফাসহ সমুদয় ঋণ/বিনিয়োগ অংশগ্রহণকারী ব্যাংক পরিশোধ করবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুদ/মুনাফাসহ পুনঃঅর্থায়িত অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংককে পরিশোধে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের চলতি হিসাব বিকলন করে তা আদায়/সমন্বয় করা হবে।

খ. গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ/বিনিয়োগ আদায়ের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাওনাকে সম্পর্কিত করা যাবে না।

গ. অর্থায়নকারী ব্যাংক এ স্কিমের আওতায় বিতরণকৃত অর্থের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করবে। এ ঋণ/বিনিয়োগের অর্থ বিদ্যমান সিনেমা হল সংস্কার, আধুনিকায়ন ও এতদ্সংশ্লিষ্ট মেশিনারি/যন্ত্রাংশ/প্রযুক্তি ক্রয় এবং নতুন সিনেমা হল নির্মাণ ব্যতীত অন্য কোনো খাতে ব্যবহৃত হলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সে পরিমাণ অর্থের উপর নির্ধারিত সুদ/মুনাফা হারের অতিরিক্ত ২% অর্থ সুদ/মুনাফাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের নিকট হতে এককালীন আদায় করা হবে।

১১. অন্যান্য শর্তাদি:

ক. সিনেমা হল মালিকগণ তফসিলি ব্যাংক বরাবরে ঋণ/বিনিয়োগ গ্রহণের আবেদন করবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট থেকে তহবিলের প্রাপ্যতাসীমা বিবেচনা সাপেক্ষে অংশগ্রহণকারী ব্যাংক ঋণ/বিনিয়োগ মঞ্জুর/বিতরণ করবে।

খ. ঋণ/বিনিয়োগ গ্রহীতা নির্বাচন, ঋণ/বিনিয়োগ মঞ্জুরী, প্রয়োজনীয় জামানত গ্রহণ, দলিল সম্পাদন, ঋণ-মূলধন অনুপাত নির্ধারণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আইন-কানুন ও বিধি-বিধান অনুসরণপূর্বক ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কেও ভিত্তিতে অংশগ্রহণকারী ব্যাংক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

গ. ঋণ/বিনিয়োগ বিতরণ, আদায় এবং সদ্ব্যবহারের বিষয়াদি নিয়মিত মনিটরিং এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক নিশ্চিত করবে। তবে, বাংলাদেশ ব্যাংক সময়ে সময়ে এ কর্মসূচীর আওতায় ব্যাংক শাখা এবং ঋণগ্রহীতা কর্তৃক গৃহীত ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।

ঘ. উপরোক্ত পুনঃঅর্থায়নের ক্ষেত্রে সময়ে সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের চাহিদার প্রেক্ষিতে অংশগ্রহণকারী ব্যাংক প্রয়োজনীয় তথ্য, কাগজপত্র এবং দলিলাদির কপি বাংলাদেশ ব্যাংককে সরবরাহ করবে। পুনঃঅর্থায়ন সংক্রান্ত উল্লেখিত শর্তাদির বিষয়ে সময়ে সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় সংযোজন, বিয়োজন ও পরিমার্জন করতে পারবে।

ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়। এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে।

অর্থসূচক/এনএইচ/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.