কটিয়াদীতে স্বাস্থ্যসচিবকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, ওসি প্রত্যাহার

স্বাস্থ্যসচিব আবদুল মান্নানের গ্রামের বাড়িতে হামলা চালানোর পর এবার সচিবকে তার নিজ এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া বাড়িতে হামলার ঘটনার পর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

আজ রোববার (০৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সভা থেকে স্বাস্থ্যসচিবকে কটিয়াদীতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।

কটিয়াদী ডিগ্রি কলেজের প্রধান ফটকের সামনে অনুষ্ঠিত সভায় এ ঘোষণা দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিলীপ ঘোষ। পরে এই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের জড়ানোর প্রতিবাদে মিছিল হয়। মিছিলটি থানা ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

স্বাস্থ্যসচিবকে বিষোদ্‌গার করে সভায় বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন, গিয়াস উদ্দিন, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার হোসেন প্রমুখ।

এদিকে স্বাস্থ্যসচিবের গ্রামের বাড়িতে হামলার ঘটনার পর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রশাসন ও অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) মো. আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত আদেশের কপিটি আজ রোববার দুপুরে কটিয়াদী থানায় এসে পৌঁছায়। হোসেনপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সোনাহর আলী গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, আদেশের কপিতে ওসিকে প্রত্যাহার করার ব্যাপারে বিশেষ কোনো কারণ উল্লেখ করা না হলেও মূলত স্বাস্থ্যসচিবের বাড়িতে হামলা ঠেকানোর ব্যর্থতার কারণে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ওসির প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদেরও কাছে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে স্বাস্থ্যসচিব আবদুল মান্নান গতকাল বলেছিলেন, জীবনে এতটা অসহায়বোধ তিনি আর কখনো করেননি। ওসিকে ২০ বার ফোন দিয়েও নিরাপত্তার জন্য যথাসময়ে তার বাড়িতে ডেকে আনতে ব্যর্থ হন।

এদিকে, স্বাস্থ্যসচিবের বাসায় হামলার ঘটনায় আজ কটিয়াদী থানায় দুটি মামলা হয়েছে। সরকারি কাজে বাধা ও হামলার অভিযোগ এনে করা মামলাটির বাদী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম। এই মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে চারজনকে। অজ্ঞাতনামা আসামি আরও ১৫ থেকে ২০ জন। অপর মামলাটি করেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের প্রকৌশলী আতিকুর রহমান। মামলাটি হয় হামলা, ভাঙচুর ও মারধরের ধারায়। মামলাটিতে এজাহারভুক্ত আসামি নেই। অজ্ঞাতনামা আসামি ২০ থেকে ২৫ জন।

কটিয়াদী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম বলেন, দুই মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তিনজনকে। মূল অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশি অভিযান চলছে।

স্বাস্থ্যসচিবকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার কারণ জানতে চাওয়া হলে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন বলেন, ঘটনা ঘটেছে স্বাস্থ্যসচিবের বাড়িতে। অথচ মামলার আসামি করা হয়েছে সারা কটিয়াদীর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের। দলের সঙ্গে প্রশাসনের ঝামেলা বাধানোর মূল নায়ক স্বাস্থ্যসচিব। কটিয়াদীকে ঝামেলামুক্ত রাখতে স্বাস্থ্যসচিবকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।

সচিবকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার কথা জেনে তার ভাই নাসির উদ্দিন বলেন, অবাঞ্ছিত শব্দটি এসেছে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিলীপ ঘোষের মুখ থেকে। তিনি তো আর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন না, সাংসদের দালালি করেন। দালালি আর রাজনীতি তার পেশা। আজ সরকারের একজন সচিবের বিরুদ্ধে অবাঞ্ছিত শব্দটি ব্যবহার করতে দিলীপ ঘোষ এতটুকু চিন্তা করলেন না। আমার ধারণা, স্বার্থে আঘাত পড়লে সরকারকেও অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতে তিনি কুণ্ঠাবোধ করবেন না।

প্রসঙ্গত, গ্রামে স্বাস্থ্যসচিবের পরিবারের সদস্যদের দেওয়া ৮ শতাংশ জায়গার ওপর একটি স্যাটেলাইট কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হচ্ছে। ক্লিনিকটির নামকরণ করা হবে করোনায় মারা যাওয়া স্বাস্থ্যসচিবের স্ত্রীর নামে। ক্লিনিকে যাওয়ার একটি সড়কও নির্মাণ করা হচ্ছে। উভয় কাজে সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছেন স্বাস্থ্যসচিব। ক্লিনিক ও সড়ক নির্মাণের জায়গা নিয়ে স্বাস্থ্যসচিবের সঙ্গে এলাকার কিছু মানুষের মতবিরোধ হয়। এ ছাড়া ক্লিনিক নির্মাণ বিষয়ে সাংসদকে অবগত করা হয়নি, এমন অভিযোগ সাংসদের অনুগত ব্যক্তিদের। ইস্যুটি নিয়ে বেশ কিছুদিন আগে থেকে উত্তেজনা চলছিল।

কিশোরগঞ্জ জেলায় করোনার টিকা প্রদান কর্মসূচির উদ্বোধন করতে স্বাস্থ্যসচিব শুক্রবার সন্ধ্যায় গ্রামের বাড়িতে আসেন। শনিবার সকালে একদল মানুষ স্বাস্থ্যসচিবের বাড়িতে ও ক্লিনিকে দফায় দফায় হামলা চালায়। ওই ঘটনায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলমকে হামলাকারীরা পুকুরে ফেলে দেয়। আহত করে আরও সাতজনকে। এই ঘটনায় স্বাস্থ্যসচিব টিকা উদ্বোধন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বাতিল করে র‌্যাব প্রহরায় ঢাকায় ফিরে যান।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.