দেশে নির্বাচন নামের কোন সংস্কৃতি নেই মন্তব্য করে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেছেন, নির্বাচন নামে দেশে একটি প্রহসন এবং তামাশা হচ্ছে।
আজ সোমবার (০১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনিত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
হারুনুর রশীদ বলেন, রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে বলেছেন সংসদ হচ্ছে আলাপ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। প্রধানমন্ত্রী গতকাল বলেছেন বাংলাদেশে কার্যকর বিরোধী দল নাই। বিরোধী দল ব্যর্থ। রাষ্ট্রপতি ভাষণে বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন একটি গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক অবাধ সুষ্ঠু। এই নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক বিরোধ রয়েছে। আড়াইশ’র অধিক যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল আদালতে তাদের মামলা বিদ্যমান। এই সংসদের মেয়াদ শেষ হবে কিন্তু ওই মামলার শুনানি শেষ হবে না।
তিনি বলেন, সত্য বললে মহাজোটের শরীক সবাই অসন্তুষ্ট হবেন। এই নির্বাচনকে নিয়ে রাশেদ খান মেনন কি বলেছিলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি জনগণ ভোট দিতে পারে নাই। মাইকে আজান দিয়েও ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের আনা যাবে না। মির্জা কাদের সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি। উনি পরিষ্কারভাবে বলেছেন আজকে যদি বৃহত্তর নোয়াখালিতে নির্বাচন হয় দুই তিনটি আসন ছাড়া যারা আজকে সংসদ সদস্য আছেন তারা পালানোর দরজা খুঁজে পাবেন না। একথাগুলো কি অসত্য?
হারুনুর রশীদ আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন অনিয়মের একটি নির্বাচনের মডেল। মাহবুব তালুকদার নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব থেকে বলেছেন যে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয় নাই। সহিংসতা এবং নির্বাচন এক সাথে চলতে পারে না।
তিনি বলেন, যশোরের একজন এমপির সাথে ওসির কথোপকথন ভাইরাল হয়েছে। তিনি সরাসরি ওসিকে বলেছেন তুমি থানায় বোমা নিক্ষেপ কর এবং তার বিরুদ্ধে মামলা কর। আমি বিস্মিত হই চট্টগ্রামে মেজর সিনহা হত্যার পর যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল হয়েছে। র্যাব যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেছে এটি উদ্বেগজনক।
হারুনুর রশীদ বলেন, এই সংসদের একজন সদস্য হাজী সেলিমের পুত্র ইরফান সেলিমের বাড়ি ঘেরাও করে ওকিটকি, মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার করা হল তার ফাইনাল তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হচ্ছে। তাহলে র্যাবের ডিজি বলেছেন আমরা যে রিপোর্ট দাখিল করেছি সেটা সত্য। আর পুলিশ দিচ্ছেন ফাইনাল রিপোর্ট এগুলো আইনের শাসনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। মাদক নির্মূলের নামে শত শত নিরপরাধ মানুষকে ফাঁসানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদেশে কত লাখ টাকা পাচার হচ্ছে সেই বিষয়গুলো আলোচনার মধ্য নাই। নতুন শিশু জন্মগ্রহণ করলে ৩০ হাজার টাকার অধিক মাথায় ঋণের বোঝা নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে। লাখ লাখ টাকা বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে আসছেন মেগা প্রকল্প বানাচ্ছেন আর জাতীয় উন্নয়নের নামে জাতীয় লুটপাট হচ্ছে।
বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য বলেন, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ধ্বংস। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় সরকার যাদের মনোনয়ন দিচ্ছে তারাই সেখানে নির্বাচিত হচ্ছে। দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হচ্ছে। নির্বাচন নামে কোন সংস্কৃতি নাই। নির্বাচন নামে একটি প্রহসন এবং তামাশা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সংসদে বিরোধী দল আছে? বিরোধী দল বলতে গেলে রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু- তারা বলছেন ফরমায়েশি বিরোধী দল দিয়ে জাতীয় সংসদ কার্যকর করতে পারবেন না। আজকে যখন আমরা কথা বলি কথার কাউন্টার দেয় বিরোধী দলের চেয়ারে বসে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন হচ্ছে সেখানে বিরোধী দলের কোন প্রার্থী আছে? বাইরে তো একাকার।
হারুনুর রশীদ আরও বলেন, দুর্নীতির মাত্রা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে? ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বর্তমান মেয়র একজন অপরের বিরুদ্ধে চুনোপুটি অভিযোগ নিয়ে আসছে। দুদক কি এগুলো ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না।
স্পিকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, সংসদ সত্যিকার অর্থে বিরোধী দলের কণ্ঠ স্তব্ধ করে না দিয়ে এখানে কাজ করার সুযোগ দেন, তাহলে আমাদের সুযোগ দিতে হবে। কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। জিয়াউর রহমানকে বলবেন রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা নয়, যতই চেষ্টা করেন জিয়াউর রহমানকে আল্লাহ যে সম্মান এবং মর্যাদা দিয়েছেন তাকে চেষ্টা করেও স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বিমানবন্দর থেকে নাম মুছে দিয়েও অসম্মানিত করতে পারবেন না। বঙ্গবন্ধুর যে সম্মান ও মর্যাদা দান করেছে আমি বা অন্য কেউ চেষ্টা করেও তা বন্ধ করতে পারবো না।
অর্থসূচক/কেএসআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.